চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৩৪
2023-09-16 16:33:34

  

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

পিকিং অপেরার প্রচার-প্রসারের সিএমজি

চীনের ঐতিহ্যবাহী পিকিং অপেরার প্রচার ও প্রসারে নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)।

সিএমজি সম্প্রতি প্রথমবারের মতো তরুণ পিকিং অপেরা অভিনেতা সম্মেলন শুরু করেছে। এটি এমন একটি নতুন কর্মসূচি, যা তরুণ অভিনয়শিল্পীদের তাদের শৈল্পিক প্রতিভা প্রদর্শন করতে এবং ঐতিহ্যগত চীনা অপেরার বিকাশে নতুন প্রাণশক্তি যোগাবে।

তরুণ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের জন্য, সিএমজি তার নতুন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ক্লাসিক পিকিং অপেরার পারফরম্যান্সের একটি সিরিজও প্রকাশ করেছে।

সিএমজি নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং পেশাদারদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে চীনা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও শিল্পকলার উত্তরাধিকার এবং বিকাশের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পিকিং অপেরা হল একটি পারফর্মিং আর্ট যা গান, আবৃত্তি, অভিনয় এবং মার্শাল আর্টকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি ২০১০ সালে ইউনেস্কো অবৈষয়িক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

 

ম্যাকাওয়ে আকর্ষণীয় গালা

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে (এসএআর) একটি আকর্ষণীয় গালা অনুষ্ঠিত হয়।

মূল ভূখণ্ড, ম্যাকাও এসএআর এবং হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের শিল্পীরা পাঁচ ধাপে গালা অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেন। চীনের গণমক্তি ফৌজের (পিএলএ) ম্যাকাও গ্যারিসন অনুষ্ঠানে একটি নৃত্য পরিবেশন করে।

গালায় অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় শিল্পী অ্যালি লি। তিনি বলেন,

‘ম্যাকাওয়ের একজন তরুণী হিসাবে, এই গালায় অংশ নিতে পারা অনেক সম্মানের। আমরা মাতৃভূমির সুন্দর নদী এবং পাহাড়ের প্রশংসা করতে আমাদের নিজস্ব গান ব্যবহার করতে চাই। আমি আশা করি আমাদের মাতৃভূমি কুয়অংতং-হংকং-ম্যাকাও গ্রেটার বে-সহ অঞ্চলটি আরও ভাল এবং আরও উন্নত হবে’।

সর্বস্তরের হাজারেরও বেশি দর্শক অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।

 

১০ বিদেশী পেলেন চীনের অর্কিড অ্যাওয়ার্ড

চীন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অবদানের জন্য ১০ বিদেশিকে দেওয়া হয়েছে অর্কিড অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

অর্কিড অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ১০ বিদেশির মধ্যে অন্যতম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোসেফ ডব্লিউ পলিসি, মিশরের এসাম শরফ, মেক্সিকো থেকে ফ্লোরা বোটন বেজা এবং যুক্তরাজ্যের ডেভিড ফার্গুসন।

পুরস্কারপ্রাপ্তরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তারা সমাজের মধ্যে ঐকমত্য বৃদ্ধি করে এবং মানুষে মানুষে ঘনিষ্ঠ বন্ধন প্রচারের মাধ্যমে চীনের বৈশ্বিক সভ্যতা উদ্যোগ বাস্তবায়নে আরও অবদান রাখবেন।

 

২. চীনের মাস্টার মৃৎশিল্পী চান শাওলিন

পূর্ব চীনের চিয়াংশি প্রদেশের পোর্সেলিন রাজধানী খ্যাত চিংতেচেনের খ্যাতিমান মৃৎশিল্পী চান শাওলিন। মৃৎশিল্পের প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরি হয় ছোটবেলায়।

একজন দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠার আশায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিজের শহর ছেড়ে চান চলে আসেন চিংতেচেনে। তার শিক্ষানবীসীর কালটা ছিল বেশ কষ্টের। তিনি বলেন.

‘শিক্ষানবীস হিসেবে আমরা মাটির পাত্র তৈরির চাকায় বসার সুযোগ কমই পেতাম। একটি মাত্র চাকা। ওস্তাদের কাজের অবসরে আমরা সুযোগ পেতাম। আর তার ফেলে দেওয়া কাদাই ছিল আমাদের সম্বল। শীতে জমে যাওয়া অবস্থায় আমরা খালি পায়ে কাদার পিন্ড তৈরি করতাম। দিনের বেলা সুযোগ না পেলে আমরা রাতে চর্চা করতাম। কষ্ট হলেও এভাবেই আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে কাজটা শিখেছি’।

শিক্ষানবীসীর কাল শেষ হলে চান নিজেই একটি মৃৎশিল্প নির্মাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন। অনেক ছাত্র ও প্রশিক্ষণার্থী জোটে তার। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি।

২০২০ সালে চীনের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রথম জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতায় চানের উদ্ভাবিত মৃৎশিল্প নির্মাণ পদ্ধতি পুরস্কার লাভ করে। চানের ভাষ্য:

‘মাটির তৈজস তৈরির ৭২ রকমের পদ্ধতি রয়েছে। আমি যে পদ্ধতিতে দক্ষতা লাভ করেছি সেটা চাকা-ঘোরানো পদ্ধতি। এটা হলো কাদামাটি বিভিন্ন আকৃতিতে রূপে দেওয়ার প্রক্রিয়া। তৈজসে নকশার আগে আপনাকে একটা তার অবয়বটা তৈরি করতে হবে। এটা একেবারে মৌলিক বিষয়’।

চান তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি গোপন না রেখে পরবর্তী প্রজন্মকে শিখিয়ে যেতে চান, যাতে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের পরম্পরা বজায় থাকে । চান বলেন,

‘আমি যে দক্ষতা অর্জন করেছি, যে নতুন উদ্ভাবন করেছি তার সবটুকু আমি আমার শিক্ষার্থীদের দিয়ে যেতে চাই। আমার লক্ষ্য হলো আরও বেশি মৃৎশিল্পী তৈরি করা, তাদের মাস্টার কারিগর হেসেবে গড়ে তোলা। এভাবে আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারবো’।

নে এ নিস্বার্থ চাওয়া ও আন্তরিকতার কারণে আজ মৃৎশিল্পে আগ্রহী হাজারো মানুষ তার কাছে আসছেন চীনের অপূর্ব এ শিল্পটির প্রশিক্ষাণার্থী হয়ে। আর চান-ও তার পরম যত্নে শেখাচ্ছেন তার শিক্ষার্থীদের। এর মধ্য দিয়ে তৈরি হবে চানের মতো আরও অনেক মাস্টার মৃৎশিল্পী।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

লিউ চাংছিং: বেদনার কাব্যগাঁথার কবি

কবি লিউ চাংছিং থাং রাজবংশের সময়কার একজন কবি। তিনি সে সময়ের একজন রাজনীতিবিদও ছিলেন। লিউ চাংছিংয়ের জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ নিয়ে পন্ডিত গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে। ধরে নেয়া হয় ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার জীবন সম্পর্কে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা যায় তিনি রাজকীয় চাকরির জন্য চিনশি পরীক্ষা পাশ করেছিলেন। তিনি সরকারি চাকরিতে যোগও দিয়েছিলেন। তবে চাকরি জীবনে তিনি উন্নতি করতে পারেননি। তিনি অনেকবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। তাকে অনেকবার বিভিন্ন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাকে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলা হয় এবং শাস্তিও দেয়া হয়। অনেকবার তার পদাবনতি ঘটে। তিনি তার চাকরিজীবন নিয়ে হতাশ ছিলেন। তার বিভিন্ন কবিতায় চাকরিজীবন সংক্রান্ত হতাশা প্রকাশিত হয়েছে। তাকে শাস্তিমূলকভাবে  বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পোস্টিং দেয়া হয়েছিল। সেজন্য তিনি বন্ধু ও কবিসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই দুঃখ, ক্ষোভও তার কবিতায় উঠে এসেছে।

লিউ এর বিশেষ দক্ষতা ছিল পাঁচ ক্যারেকটার বিশিষ্ট কবিতা রচনায়। এ ধরনের কবিতায় প্রতিটি লাইনে পাঁচটি করে শব্দ বা চায়নিজ ক্যারেকটার থাকে।

লিউ চাংছিংয়ের একটি বিখ্যাত কবিতা হলো ‘তুষার ঝরা রাতে পদ্মপাহাড়ে আশ্রয়’

কবিতাটি শোনাচ্ছি

সূর্য ডুবে যাচ্ছে পাহাড়ি গ্রাম এখনও বহু দূরে

ঠান্ডা ও পরিত্যক্ত কয়েকটি কুঁড়েঘর দৃশ্যমান

ক্ষুদ্র ভাঙা ফটকে কুকুরের কর্কশ চিৎকার

হিমেল বাতাস ও তুষার নিয়ে অন্ধকার রাতে আমার আগমন।

এই কবিতায় বিষন্ন তুষার ঝরা রাত্রির বর্ণনা রয়েছে। পদ্মপাহাড় বা লোটাস হিল নামের এক পাহাড়ে তীব্র শীতের রাতে আশ্রয়হীন কবির ভাঙা পরিত্যাক্ত কুড়েঘরে আশ্রয় গ্রহণের মধ্য দিয়ে লিউ চাংছিং তার জীবনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

লিউ এর কবিতায় জীবনের ক্লান্তি, হতাশা, বেদনাবোধ খুব শৈল্পিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি চিরায়ত চীনা সাহিত্যে অমরত্ব পেয়েছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দি।

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম