রাজকুমারী ওয়েনছেংয়ের প্রাসাদ—রামোচে মন্দির
2023-09-15 18:35:26


এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা তিব্বত নিয়ে কথা বলব।

রামোচে মন্দির জোখাং মন্দিরের প্রায় ৫০০ মিটার উত্তরে অবস্থিত। এটি ও জোখাং মন্দিরকে একসাথে ‘লাসার দুই মন্দির’ বলে ডাকা হয়। রামোচে মন্দির থাং রাজবংশ আমলের জোখাং মন্দিরের মতো একই সময়ে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এটি প্রায়  ৪০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত আছে।

রামোচে মন্দিরের স্থাপত্য বিন্যাস তুলনামূলকভাবে সহজ-সরল; সামনের ও পিছনের অংশে বিভক্ত। সামনের অংশটি হল উঠান এবং পিছনের অংশটি হল মন্দির। মন্দিরে গেট টাওয়ার, প্রার্থনা ক্লোস্টার, এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা আছে।

ঐতিহাসিক পট-পরিবর্তনের কালে, রামোচে মন্দিরটি বেশ কয়েকবার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। বর্তমানে যেসব ভবন দেখা যায়,  সেগুলোর অধিকাংশই পরবর্তী প্রজন্মের দ্বারা পুনর্নির্মিত হয়েছে। শুধুমাত্র মন্দিরের মূল অংশটি এখনও তার আসল চেহারা ধরে রেখেছে।

রামোচে মন্দিরের নিচ তলাটি তিনটি ভাগে বিভক্ত: গেট কোর্ট, সূত্র হল, এবং বৌদ্ধ হল। এর করিডোরে প্রচুর চমত্কার ম্যুরাল আছে। দ্বিতীয় তলার সামনের অংশটি সন্ন্যাসীদের আস্তানা এবং মাঝখানের অংশটি হল গ্রেট সূত্র হলের উঠানের পিছনে দুটি প্রধান হল। তৃতীয় তলার সামনে দালাই লামাদের জন্য ছয়টি বিশেষ বাসস্থান রয়েছে; পিছনে আছে গোল্ডেন রুফ হল। সূর্যালোকের সংস্পর্শে গোল্ডেন রুফ হলের উপরের তলায় স্থাপিত হান-স্টাইলের সোনার টাইলসগুলো চকচক করে। আগ্রহী পর্যটকরা মন্দিরের স্তম্ভে খোদাই করা পদ্ম, সিরাস, গয়না এবং ছয়-অক্ষরের মন্ত্রে তিব্বতি ঐতিহ্য পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

এই মন্দিরে ছাংআন থেকে রাজকুমারী ওয়েনছেং কর্তৃক আনা শাক্যমুনির ১২ বছর বয়সী প্রমাণ সাইজের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। আর জোখাং মন্দিরে কাঠমাণ্ড থেকে আনা ৮ বছর বয়সী শাক্যমুনির প্রমাণ সাইজের মূর্তি স্থাপন করা হয়। এই মূর্তিটি এনেছিলেন নেপালের রাজকুমারী চিজুন।

সোংটসান গাম্পোর মৃত্যুর পর, রাজকুমারী ওয়েনছেং জোখাং মন্দির ও রামোচে মন্দিরে রাখা শাক্যমুনির মূর্তিগুলো বিনিময়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই এখন রামোচে মন্দিরে শাক্যমুনির ৮ বছর বয়সী মূর্তিটি সংরক্ষিত দেখা যায়। রামোচে মন্দিরে অনেক মূল্যবান সাংস্কৃতিক পূরাকীর্তি রয়েছে। এখানে আছে প্রায় ২ মিটার উঁচু ব্রোঞ্জের বোধিসত্ত্ব, প্রায় ১.৫৫ মিটার উঁচু পদ্মসম্ভবের ব্রোঞ্জ মূর্তি, এবং প্রায় ১.৩৩ মিটার উঁচু একটি মহিলার ব্রোঞ্জ মূর্তি। এগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

 

সারা মন্দির (sera temple)

সারা মন্দিরের পুরো নাম ‘সারা মহায়ানা দ্বীপ’, যা লাসার উত্তর শহরতলী থেকে ৩০০০ মিটার দূরে সারা উজি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। তিব্বতি ভাষায় ‘সারা’ মানে ‘বন্য গোলাপ’। কথিত আছে, মন্দিরটি যখন নির্মিত হয়, তখন চারপাশে বুনো গোলাপ ফুটে উঠেছিল; তাই এর নাম দেওয়া হয় ‘সারা মঠ’। এই মন্দিরটির নির্মাণকাজ ১৪১৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু এবং  ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। সারা মন্দির ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে।

মন্দিরটিতর অনেক মূল্যবান সাংস্কৃতিক অবশেষ সংরক্ষিত আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৫০০ বছরের পুরানো শাক্যমুনি বুদ্ধের সিল্ক মূর্তি। যদিও সারা মন্দির ড্রেপুং মঠের মতো বড় নয়, তবে এটি নানান কারণে বিখ্যাত। ‘সূত্র বিতর্ক’-কে তিব্বতি ভাষায়  ‘ছুননিচুওপা’ বলা হয়, যার অর্থ ‘ধর্ম’। এটি তিব্বতি বৌদ্ধ লামাদের জন্য সূত্র অধ্যয়নের একটি প্রয়োজনীয় উপায়। তাদের বেশিরভাগই খোলা জায়গায় বা মন্দিরে গাছের ছায়ায় সূত্র অধ্যয়ন করেন।

সারা মঠে একটি বিতর্ক বাগান রয়েছে। সাধারণত প্রতি বুধবার বিকেল ৩টার পরে, সন্ন্যাসীরা মন্দিরে জড়ো হন এবং ধর্ম বিষয়ে বিতর্ক তথা আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন। গোটা প্রক্রিয়াটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সারা মনাস্ট্রি থেকে খুব দূরে রহস্যময় স্কাই কবরের প্ল্যাটফর্ম। স্কাই কবরের প্ল্যাটফর্মের রাস্তার অবস্থা খারাপ, এবং এমনকি, আপনি যদি সেখানে পৌঁছাতে পারেনও, আপনাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যারা সেখানে যেতে চানই, এ বিষয়টি মাথায় রেখে যাবেন।

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (উর্মী/আলিম)