সেপ্টেম্বর ১৫: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সফররত ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টে নিকোলাস মাদুরো মরোসের সঙ্গে ১৩ সেপ্টেম্বর বিকালে মহাগণভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দুই নেতা ঘোষণা করেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করা হবে।
চৌদ্দ সেপ্টেম্বর মাদুরো তাঁর তিন দিনের চীন সফর শেষ করেন। এ সফর নিয়ে লাতিন আমেরিকার গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়, সেগুলোর প্রধান বক্তব্য ছিল ‘ঐতিহাসিক সফর’, ‘চীন-ভেনেজুয়েলা সম্পর্ক সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত’, ‘কয়েক ডজন সহযোগিতামূলক দলিল স্বাক্ষরিত’ ইত্যাদি।
এবারের সফরটি ছিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরো মরোসের পঞ্চম চীন সফর। তের সেপ্টেম্বর, সি চিন পিং তাঁর সাথে বৈঠকের সময়ে জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করা দু’দেশের জনগণের অভিন্ন প্রত্যাশা এবং ইতিহাস উন্নয়নের বড় ধারার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিবন্ধে বলা হয়, মাদুরোর এবারের চীন সফর ‘খুব ফলপ্রসু’ হয়েছে।
চীন ও ভেনেজুয়েলার আদান-প্রদানের সূচনা উনবিশং শতাব্দির চল্লিশের দশক থেকে। তখন চীনারা প্রথমবারের মতো সাগর পাড়ি দিয়ে ভেনেজুয়েলায় পৌঁছেছিল। ১৯৭৪ সালের ২৮ জুন দু’দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পক প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় আধা শতাব্দী সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন অতিক্রম করে দু’দেশের ‘লৌহকঠিন বন্ধুত্ব’ অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে।
বতর্মানে, সার্বিকভাবে চীনা বৈশিষ্টময় আধুনিকায়ন এগিয়ে নিচ্ছে চীন। ভেনেজুয়েলাও নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নতুন উন্নয়ন মিশনের মুখে দু’দেশ কীভাবে জনকল্যাণ আরও বাড়াতে পারে এবং কীভাবে চীন-লাতিন আমেরিকার সহযোগিতায় আরও বেশি প্রাণশক্তি যুগাতে পারে?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দু’দেশের সম্পর্ককে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করা হবে, যাতে উচ্চ মানের পারস্পরিক অর্থনৈতিক আস্থা প্রতিফলিত হয়। চীন সবসময় ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্ব, জাতীয় মর্যাদা এবং সামাজিক স্থিতিশিলতা রক্ষাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপে ভেনেজুয়েলার বিরোধিতাকেও চীন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। ভেনেজুয়েলা যখন কোনও সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন চীন সত্যিকার অর্থে সাহায্য করে আসছে। যেমন করোনা মহামারীর সময়ে চীনের টিকা, চিকিৎসা সামগ্রী ও চিকিৎসা দল দেশটির মহামারী প্রতিরোধে মূল ভূমিকা পালন করেছিল।
তের সেপ্টেম্বরের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জানান, ভেনেজুয়েলার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে চীন সহায়তা দেয়। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার নির্মাণ এগিয়ে নেওয়ার জন্য চীন এ সংক্রান্ত নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে ইচ্ছুক, যেটা ভেনেজুয়েলার প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। এবারের দু’দেশের নেতাদের বৈঠকে চীন জানায়, ভেনেজুয়েলা থেকে উচ্চ গুণগত মানের বৈশিষ্ট্যময় পণ্য আমদানি বাড়াবে চীন। এ থেকে এটি প্রতিফলিত হয় যে, দু’দেশ হচ্ছে সত্যি ‘অভিন্ন উন্নয়নের ভাল অংশীদার’।
আগামী বছর হবে চীন-লাতিন আমেরিকা ফোরাম প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকী; একই সঙ্গে চীন-ভেনেজুয়েলা কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী। ভবিষ্যতে চীন ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে ‘লৌহকঠিন বন্ধুত্বে’র সহযোগিতা অবশ্যই আরও উন্নত হবে, যা দু’দেশের গণকল্যাণ আরও বাড়াবে এবং চীন-লাতিন আমেরিকা সহযোগিতায় আরও বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
(আকাশ/রহমান)