আকাশ ছুঁতে চাই ৩৫
2023-09-14 19:25:39

১. সিনচিয়াংয়ের নৃত্যশিল্পী গুলবানুর

২. ঐতিহ্যবাহী লিয়াং বু ভাগ্য ফেরাচ্ছে মিয়াও নারীদের

৩. এআই জগতে বিশ্বসেরা ১০০ জনের তালিকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুম্মান

৪.  মিস সিল্ক রোড

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

সিনচিয়াংয়ের নৃত্যশিল্পী গুলবানুর

অনুষ্ঠানের শুরুতেই শোনাবো এমন এক নারীর গল্প যিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ঘর সংসারের দায়িত্বও পালন করছেন সমান পারদর্শিতায়। চলুন শোনা যাক  সিনচিয়াংয়ের নারী গুলবানুর কুরকাকের জীবনের গল্প।

সিনচিয়াংয়ের নৃত্যশিল্পী গুলবানুর কুরকাক। সিনচিয়াংয়ের তাকসকোরগান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির নারী তিনি। তিনি তাজিক জাতির ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে পারদর্শী। তিনি তাকসকোরগান তাজিক স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির শিল্পীদলের একজন সদস্য। তিনি আর তার স্বামী এই শিল্পীদলের সদস্য হয়ে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে নিজেদের লোকজ এতিহ্য তুলে ধরেন। এই পরিবেশনা স্থানীয় পর্যটন শিল্পেকে চাঙা করে তুলেছে।

তাকসকোরগানের এই আর্ট ট্রুপ ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শিল্পীদল গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাজিক নৃত্যগীত পরিবেশন করে। গ্রামের নবীন প্রবীণ সকলেই তাদের সঙ্গে নাচে গানে মেতে ওঠে। তাজিকদের জীবনের অংশ হলো এই নাচগান। প্রত্যেক তাজিকই তাদের লোকজ নৃত্য জানেন।

 

 কিন্তু সকলে শিল্পী হয়ে ওঠেন না। বা শিল্পে নৈপুণ্য অর্জনব করতে পারেন না। যেটা পেরেছেন গুলবানুর। ছোটবেলা থেকেই তাজিক লোকনৃত্য শিখছেন গুলবানুর। এখনও প্রতিদিন অনুশীলন করেন তিনি।

 

গুলবানুর কুরকাক তাজিক জাতির নারী। শিল্পী দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেও ঘরসংসারও যে করেন না তা নয়। যত্নের সঙ্গে প্রতিপালন করেন সন্তানদের।

 মেয়েকে কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। ছেলেকে পড়া শোনায় সাহায্য করেন। তাজিক জাতির ঐতহ্যবাহী মেহমানদারিতেও পিছিয়ে নেই তিনি। গুলবানুর নিজের বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে রান্না থেকে শুরু করে ঘর গোছানো সহ সব কাজই করেন। এসব কাজে তাকে সাহায্য করেন স্বামী বাহতিয়ার জুমাহান। গুলবানুরের  শাশুড়িও বাড়ির অনেক কাজ করে তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন।

তারা যৌথ পরিবারে বাস করেন। গুলবানুর এবং বাহতিয়ার যখন তাদের পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকেন তখন ঘরগৃহস্থালির দায়িত্বটা শাশুড়িই পালন করেন। দাম্পত্য জীবনেও সুখী গুলবানুর। বাহতিয়ার শুধু তার জীবনসঙ্গীই নন, বরং বন্ধু ও সহশিল্পী।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

ঐতিহ্যবাহী লিয়াং বু ভাগ্য ফেরাচ্ছে মিয়াও নারীদের

 লিয়াং বু এমন এক পোশাক যা তৈরি করতে পারেন কেবল মিয়াও জাতির নারীরা। চীনের ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম মিয়াও জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। কুয়াংসি এবং কুইচোও প্রদেশের সীমান্ত এলাকার উইং গ্রামের নারীরা লিয়াং বু তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়ে নিয়েছেন। চলুন শোনা যাক সেই গল্প।

 

কুয়াংসি এবং কুইচোও প্রদেশের সীমান্তাবর্তী এলাকায় উইং গ্রাম। এখানে মিয়াও জাতির মানুষের বাস।

মিয়াও জাতির নারীদের এক বিশেষ কাপড় লিয়াং বু। নীল রঙের এই কাপড় তৈরির কৌশল শুধুমাত্র মিয়াও নারীরাই জানেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই কৌশল তারা শিখে নেন। মা থেকে কন্যায় এই কারুশিল্প প্রবাহিত হয়। 

লিয়াং বু তৈরিতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়। বসন্তে ওড নামে একধরনের উদ্ভিদ জমিতে লাগানো হয়। ওড উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ইসাটিস টিংকটোরিয়া। শরৎকালে ওড উদ্ভিদ তোলা হয়।

এরপর ওড পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় বেশ কয়েকদিন। এতে পানিতে নীল রঙ ছাড়ে।এরপর এই পানিতে কাপড় ভিজাতে হয়। বেশ কয়েকবার কাপড়টিকে রঙ করা হয় ও শুকানো হয়।

 রঙের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ এবং আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান মেশানো হয়।রঙের পানিতে কাপড়টিকে ডুবিয়ে এক ধরনের কাঠের লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয়া হয়। হামান দিস্তার মতো এই লাঠি দিয়ে বারে বারে কাপড়টিকে বাড়ি দেয়ার পর আবার রঙ করার রীতি আছে। এরপর কাপড় ছাঁটা, এমব্রয়ডারি, সেলাই ইত্যাদির পর তৈরি হয় লিয়াং বু।

এই কাপড় তৈরিতে কয়েক মাস সময় লাগে। একসময় এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছিল। তবে এখন গ্রামপুনর্জীবনের ধারায় মিয়াও নারীদের লিয়াং বু তাদের ভাগ্য ফেরাতে সাহায্য করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে লিয়াং বু তৈরি করে আয়ের পথ করে নিয়েছেন মিয়াও নারীরা। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তারা লিয়াং বু বাজারজাত করছেন। লিয়াং বু তৈরির প্রক্রিয়া দেখতেও উৎসাহ রয়েছে পর্যটকদের। তারা কিনতেও আগ্রহী।

ফলে মিয়াও নারীরা এর বাণিজ্যিক উৎপাদনে সাফল্য পাচ্ছেন। তারা নিজেদের বাড়তি রোজগারের পথ খুঁজে নিয়েছেন এই কারুশিল্প থেকে। এরফলে চাঙা হচ্ছে এই গ্রামের অর্থনীতি।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

এআই জগতে বিশ্বসেরা ১০০ জনের তালিকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুম্মান

 

প্রযুক্তির উন্নয়নে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। দিন যত সামনের দিকে এগুচ্ছে প্রযুক্তিগত ধ্যান ধারণা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত ও বিকশিত হচ্ছে। আর এ পরিবর্তনের হাওয়ায় বেশি ভেসে বেড়াচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর প্রযুক্তির এ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশ্বসেরা ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী ড. রুম্মান চৌধুরী। এই তালিকার নাম ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন টাইম।

 

 তিনি একজন ডেটা সায়েন্টিস্ট ও সোশ্যাল সায়েন্টিস্ট এবং অ্যালগরিদমিক নৈতিকতার ক্ষেত্রে কাজ করছেন তিনি।এই বাংলাদেশি আমেরিকান তার লিংকডইন বায়োতে লিখেছেন, ‘গত ছয় বছর ধরে আমি নৈতিক, ব্যাখ্যাযোগ্য এবং স্বচ্ছ এআই-এর জন্য অত্যাধুনিক সামাজিক-প্রযুক্তিগত সমাধান তৈরির কাজ করছি।

ড. রুম্মান চৌধুরী হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে সেখানে সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটারের মেটা বা এমইটিএ (এমএল এথিকস, ট্রান্সপারেন্সি, অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি) দলের পরিচালক ছিলেন।মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্ল্যাটফর্মে অ্যালগরিদমিক ক্ষতিগুলো চিহ্নিত ও প্রশমিত করতে ফলিত গবেষক এবং প্রকৌশলীদের একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।

 রুম্মান চৌধুরী ১৯৮০ সালে নিউইয়র্কের রকল্যান্ড কাউন্টিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস এবং ২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশি-আমেরিকান এই নারী গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে কাজ করছেন।

টাইম ম্যাগাজিন বলছে, চলতি বছরের আগস্টের শুরুতে রুম্মান লাস ভেগাসে একটি ইভেন্টের সহ-সংগঠক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ওই ইভেন্টে প্রায় চার হাজার হ্যাকার গুগলের ওপেনএআই এবং অ্যানথ্রোপিক থেকে চ্যাটবটগুলো ভাঙতে জড়ো হয়েছিল।

এছাড়া টাইম ম্যাগাজিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন মন্ত্রী। আমিরাতের ওই মন্ত্রীর নাম ওমর আল-ওলামা। ২০১৭ সালে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এআই, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং রিমোট ওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

টাইমের এই তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক, ওপেনএআই সিইও স্যাম অল্টম্যান এবং মার্কিন কংগ্রেসম্যান আনা এশুও রয়েছেন।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

মিস সিল্ক রোড

হেইলংচিয়াং প্রদেশের চিসি সিটিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় মিস সিল্ক রোড প্রতিযোগিতা। সেরা সিল্করোড সুন্দরীর মুকুট মাথায় পরেন বেইজিংয়ের ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির এক তরুণী শিক্ষার্থী। 

লোকজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, নারীর সৌন্দর্যকে সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় করা এবং পাশাপাশি পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করা । এসব উদ্দেশ্য নিয়ে সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত হয় মিস সিল্ক রোড গ্লোবাল টুরিজম চায়নার গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠান। হেইলংচিয়াং প্রদেশের চিসি সিটিতে আয়োজিত হয় এই জমজমাট প্রতিযোগিতা। চিসি ইন্টারন্যাশনাল টুরিজম ফ্যাশন উইকও পালিত হয় একই সঙ্গে।

বেইজিং ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজির শিক্ষার্থী চিয়াং মেইছাং প্রথম পুরস্কার জয় করে সেরা সিল্করোড সুন্দরীর মুকুট মাথায় পড়েন।

থিয়েনচিন নরমাল ইউনিভারসিটির একজন শিক্ষার্থী ওয়াং ইয়াদান দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালযের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়াং ইয়াওয়েন তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

ফ্যাশন প্যারেডে চীনের নারীদের লোকজ ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পাশাপাশি আধুনিক চলতি ফ্যাশনও প্রদর্শিত হয়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্বার, আফরিন মিম, হোসনে মোবারক সৌরভ 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল