মমতাভরা মন নিয়ে মৈত্রীর ফুল ফুটিয়ে চলেছেন বিদেশে চীনা চিকিত্সকদল
2023-09-14 10:56:32


চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য গত ৬০ বছরে চীন ৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে ৩০ হাজার চিকিত্সক ও চিকিত্সাকর্মী পাঠিয়েছে। চিকিত্সা দলগুলো এ পর্যন্ত মোট ২৯ কোটি মানুষকে চিকিত্সাসেবা দিয়েছে। চীনা চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে ২ হাজার জন নানা দেশের জাতীয় সম্মান পেয়েছেন।

গত ১৯৬৩ সালে আলজেরিয়ায় প্রথম চিকিত্সকদল পাঠানো থেকে শুরু করে চীনা চিকিত্সা দলগুলো মমতাময়ী মন ও কৌশল দিয়ে স্থানীয় মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে। তারা মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের যৌথ সমাজ গড়ে তোলা এবং গণস্বাস্থ্যের যৌথ সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

২০২২ সালের মে মাসের একদিন রাত ১০টার দিকে মরক্কোয় সাহায্যকারী চীনা চিকিত্সক মা নান একটি জরুরি কল পান। সে কল থেকে তিনি জানতে পারেন, ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে আকস্মিকভাবে আহত হয়েছে। তার মধ্যম আঙুল ও অনামিকা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই ঘন্টার অস্ত্রোপচারে মেয়েটির আঙ্গুল দুটি রক্ষা পায়। মরক্কোয় সাহায্যকারী চীনের ১৭১ ব্যাচের চিকিত্সক হু বিং লিন বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারা চীনা চিকিত্সকদের কাছে যেতে পছন্দ করেন। চিকিত্সার মান এবং অন্যান্য দিক থেকে চীনা চিকিত্সকরা খুব ভালো। তারা ধনী গরিব নির্বিশেষ সকল রোগীকে সমানভাবে চিকিত্সা দেন।”

রুয়ান্ডার মাসাকা হাসপাতালে একবার একজন টিউমারের রোগী এসেছিলেন, যার অস্ত্রোপচারে অনেক ডাক্তার সাহস পাননি।

চীনা চিকিত্সকদল সাড়ে তিন ঘন্টা অপারেশনে এ রোগীর টিউমার অপসারণ করে। হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় ১৮ বছর বয়সী ওই রোগী রুয়ান্ডান ভাষায় মন্তব্য-বইয়ে লেখেন যে, “চীনা চিকিত্সকগণ, আপনারা আমাদেরকে প্রাণের ভরসা দিয়েছেন।”

কঠিন স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং চিকিত্সা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার অসুবিধা কাটিয়ে চীনা চিকিত্সকরা যথাসাধ্য স্থানীয় রোগীদের সেবা দেন।

অন্তর্মঙ্গোলিয়ার চতুর্থ হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগের পরিচালক লি চুন ১০ বছর ধরে রুয়ান্ডায় কাজ করেন। তিনি অপারেটিভ রোগীদের পেটের সুরক্ষার জন্য পেটের বেল্ট ও হাড়ভাঙা রোগীদের জন্য ট্র্যাকশন ফ্রেম তৈরি করেন। কখনও কখনও কোনও চাপযুক্ত আধান সেট না থাকলে তিনি আধানে চাপ দেওয়ার জন্য নিজের হাত দিয়ে এ কাজ করেন।

হু বেই প্রদেশের চিকিত্সক স্যুয়ে চিন ১৯৬৫ সালে আর্জেটিয়ার চিকিত্সকদলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ওই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে কাজ করতেন। স্থানীয় জটিল পরিবেশে ৩ বছরেরও বেশি সময়ে তিনি ও তার সহকর্মীরা সাফল্যের সঙ্গে হাজারেরও বেশি অস্ত্রোপচার করেন। সেটা ৬০ বছর আগের কথা হলেও বর্তমানে ৮৬ বছর বয়সী স্যুয়ে চিন তখনকার ছবি দেখে স্মরণ করে বলতে পারেন কি অপারেশন করেছিলেন এবং সেটা করতে গিয়ে কী অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

গত ৬০ বছরে চীনের চিকিত্সকদল স্থানীয় অনেক রোগীর প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি স্থানীয় ১ লাখ চিকিত্সককে আধুনিক চিকিৎসাকৌশল শিখিয়েছেন, যা দেশগুলোর চিকিত্সার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।

লি চুন শেং বলেন, “দশ বছর আগে আমরা যে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তাদের অনেকে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারা চীনা চিকিত্সকদের ব্যবস্থাপনা এবং চিকিত্সার চেতনা প্রতিদিনের কাজে ব্যবহার করছেন।”

বর্তমানে চীন ৪১টি দেশ ও অঞ্চলের ৪৬টি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং বিভিন্ন দেশে ২৫টি ক্লিনিকাল স্পেশালিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে।  

চীনা চিকিত্সকদলগুলো স্থানীয় অঞ্চলে ক্লিনিকাল মেডিসিন এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পের সর্বব্যাপী ও ত্রিমাত্রিক প্যাটার্ন, চিকিত্সা সরবরাহ, সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মী ও প্রযুক্তিগত বিনিময়সহ সম্পূর্ণ অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।

বর্তমানে চীনের চিকিত্সাদলগুলো বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১১০টি স্থানে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার কোনও সীমা নেই। তারা তাদের ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিদেশে জীবন রক্ষার গল্প তৈরি করে যাচ্ছে।