এই সুন্দর শরত্কালে বার্ষিক চায়না ছাংছুন চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করা হয়। ছাংছুন শহরের হোংছি রাস্তায় অবস্থিত ছাংছুন চলচ্চিত্র স্টুডিওর পুরনো ঠিকানায় সমাবেত হন অনেক চীনা মুভি তারকা। মিক্সিং স্টুডিও, ফটো স্টুডিও, দ্বাদশ স্ক্রিনিং রুম, প্রিন্টিং ওয়ার্কশপ - এসব জায়গায় যেখানে ‘প্রবীণ ছাংছুন চলচ্চিত্র ব্যক্তিরা একসময় করেছিলেন। সেখানকার আসল চেহারা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার ও মেরামত করার পর এখন এক একটি জীবন্ত শৈল্পিক ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে এবং মানুষকে সেই আবেগময় পুরনো দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে আনা হয়েছে।
আটাত্তর বছর আগে উত্তর-পূর্ব মুভি কোম্পানি ছাংছুন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। দশ বছর পর এর নাম বদলে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাংছুন মুভি স্টুডিও রাখা হয়। ১৯৯৯ সালে ছাংছুন ফিল্ম স্টুডিওকে ছাংছুন মুভি গ্রুপে পুনর্গঠন করা হয়। ছাংছুন ফিল্ম স্টুডিওয়ের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ইতিহাস রক্ষা ও রেকর্ড করার জন্য ২০১৪ সালে ছাংছুন ফিল্ম স্টুডিওয়ের পুরনো ঠিকানায় নির্মিত জাদুঘর সংস্কার ও মেরামত করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে আবার খোলা হয়। বিগত নয় বছরে জাদুঘরটি ‘চলচ্চিত্রের ইতিহাস দেখানো এবং চলচ্চিত্র সভ্যতার উত্তরাধিকার’কে নিজের মিশন হিসেবে বেছে নিয়েছে এবং ৯ বছরে ১০ লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ভ্রমণ করেছেন। ২০২০ সালে ছাংছুন ফিল্ম স্টুডিও চতুর্থ দলের জাতীয় শিল্প ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
জাদুঘরের নানা প্রদর্শনী হলে ঘুরে বেড়ালে মনে হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের চলচ্চিত্র ইতিহাসে প্রবেশ করা হয়েছে। জাদুঘরের দরজায় প্রবেশ করার পর ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মুভির দোলনা’য় কয়েকটি চোখ ধাঁধানো চরিত্র চোখে পড়ে। প্রথম পাপেট ফিল্ম ‘দ্য এম্পেররস ড্রিম’, প্রথম বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র ‘প্লেগ প্রিভেনশন’, প্রথম কার্টুন মুভি ‘ক্যাচিং টার্টলস ইন দ্য আর্ন’, প্রথম শর্ট ফিচার ফিল্ম ‘লিভ হিম টু ফাইট চিয়াং কাই-শেক’, প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্ম ‘দ্য ব্রিজ’...গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অনেক ‘প্রথম’ এখানে জন্মগ্রহণ করেছে।
জাদুঘরে সিনেমা প্রপস, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি একে একে প্রদর্শিত হয় এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের দৃশ্য এবং শুটিং দৃশ্যগুলো প্রাণবন্তভাবে ফিরে আসে। ‘The White-haired Girl দ্য হোয়াইট-হেয়ারেড গার্ল’ এবং ‘থার্ড সিস্টার লিউ’... গত ৭৮ বছরে ছাংছুন মুভি স্টুডিও এক হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে এবং ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৪০টিরও বেশি ভাষার তিন হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্র অনুবাদ ও ডাব করেছে।
জাদুঘরে চীনের বিদ্যমান প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সম্পূর্ণ স্পেশাল-ইফেক্ট স্টুডিও বা ছাংছুন মুভি স্টুডিওয়ের তৃতীয় শুটিং স্টুডিও পরিদর্শন করেন অনেক পর্যটক। সিঁদুরের মেঝে, সূক্ষ্মভাবে স্তুপ করা ল্যাম্প স্ট্যান্ড এবং কাঠের ধাপ - এই শুটিং স্টুডিওতে দাঁড়ালে অতীতে ফিরে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। আগে ‘পার্টি’র মেয়ে’ এবং ‘বীর পুত্র এবং কন্যা’সহ ছাংছুন মুভি স্টুডিওয়ের উদ্যোগে নির্মিত দশাধিক ক্ল্যাসিকাল মুভি’র স্পেশাল ইফেক্টের শট তৃতীয় শুটিং স্টুডিওতে সম্পন্ন হয়েছে।
জাদুঘরের কেন্দ্রীয় মহাচত্বরের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়ার পর একটি অদ্ভুত ছোট ভবন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিছু সময়ের জন্য এই ভবনটি বিনামূল্যে সাধারণের প্রবেশের জন্য খোলা হয়। এই ভবনটি চীনের বিদ্যমান সবচেয়ে আগে এবং সম্পূর্ণ ফিল্ম প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রির ধ্বংসাবশেষ, অর্থাত্ ছাংছুন মুভি স্টুডিওয়ের ফিল্ম প্রক্রিয়াকরণ কর্মশালা।
যেহেতু ডিজিটাল প্রযুক্তি ধীরে ধীরে ফিল্মকে প্রতিস্থাপন করেছে, তাই ছাংছুন মুভি স্টুডিওয়ের ফিল্ম প্রক্রিয়াকরণ কর্মশালা ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘পুরনোকে আগের মতো পুনরুদ্ধার’ নীতি অনুসরণ করে এই কর্মশালাতে ফিল্ম প্রিন্টিং রুম এবং লাইট ডিস্ট্রিবিউশন রুমসহ বিভিন্ন জায়গা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এখানে ফিল্ম প্রক্রিয়াকরণ, চলচ্চিত্র সনাক্তকরণ, নমুনা উত্পাদন এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলো প্রদর্শন করা হয়, যা দর্শকদের ফিল্ম চলচ্চিত্রের ইতিহাস বোঝার জন্য একটি জানালা খুলে দিয়েছে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর জন্য প্রদর্শনের জায়গাও দিয়েছে।