জি-টোয়েন্টির শীর্ষসম্মেলন ভারতীয় সময় ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে শেষ হয়। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল: এক পৃথিবী, এক বাড়ি, এক ভবিষ্যত।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, যার সাথে এবারের প্রতিপাদ্যের অনেক মিল রয়েছে। এবার নয়াদিল্লি শীর্ষসম্মেলনে, বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখে, সবাই মতৈক্যে পৌঁছেছে যে, আমরা সবাই একই নৌকার যাত্রী এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সবার উচিত ঐক্যবদ্ধ থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা করা।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং শীর্ষসম্মেলনে এ ব্যাপারে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার কথা পুনরায় জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে আমাদের বিশ্বে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। এ পরিবর্তনগুলো আমাদেরকে জানাচ্ছে যে, মানবজাতির ভাগ্য এক অপরের সঙ্গে জড়িত। গুরুতর সংকট ও অভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে ঐক্যবদ্ধ থেকে সহযোগিতা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এবার শীর্ষসম্মেলনের ঘোষণায়ও একই কথা বলা হয়েছে; বলা হয়েছে: কাউকে ছেড়ে না দিয়ে বাস্তব ব্যবস্থা নিয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং মানবজাতিকেন্দ্রিক কল্যাণকর ও সমৃদ্ধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।
তা ছাড়া, এবারের শীর্ষসম্মেলনে আফ্রিকান ইউনিয়ন নতুন সদস্য হিসেবে জি-২০তে যোগ দিয়েছে। কিছুদিন আগে, আগস্ট মাসে, ব্রিক্সের ১৫তম শীর্ষসম্মেলনে, আজেন্টিনা, মিসর, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইথিওপিয়াকে নতুন সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। প্রভাবশালী দুটি বিশ্ব সংস্থার সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধিকে উন্নয়নশীল বিশ্বের ইচ্ছার প্রতিফলন বলা যেতে পারে। চীন প্রথম দেশ যে আফ্রিকান ইউনিয়নের জি-২০-তে যোগদানকে সমর্থন করেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের ফলাফল বাস্তবায়নের একটি সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোকে নিজেদের পথে চলতে এবং ঐক্যবদ্ধ থেকে নিজেদের সমস্যা সমাধনের প্রক্রিয়ায় চীন সমর্থন দেবে। আফ্রিকার উন্নয়নে সাহায্য করার পাশাপাশি, বিশ্বে তাদের প্রভাব বৃদ্ধিকেও সমর্থন করে চীন।
অবশ্য, এবার জি-২০ শীর্ষসম্মেলনের আগে এর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাও বেশি ছিল। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘর্ষ নিয়ে নানান পক্ষের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে, শীর্ষসম্মেলনে যৌথ ঘোষণায় মতভেদ পাশে রেখে একই কণ্ঠে কথা বলা হয়েছে। এটি বিশ্বের জন্য ভালো একটি খবর।
বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে জি-২০ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর আজ আমরা অর্থনীতি ছাড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামাজিক নিশ্চয়তাসহ নানার সমস্যার মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন, সাগরে জাপানের পারমাণবিক দূষিত পানি নিঃসরণ, মহামারী-পরবর্তী অর্থনীতির পুরুদ্ধারসহ নানান সমস্যার মোকাবিলায় নানান পক্ষের সহযোগিতা ও ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা একা থাকতে পারি না বরং ঐক্যবদ্ধ থেকে সহযোগিতা করা হলো একমাত্র সিঠিক উপায়। (শিশির/আলিম/রুবি)