বাংলাদেশে কুমির চাষের গল্প | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩৪
এবারের পর্বে রয়েছে
১. ঘুরে দাড়াচ্ছে কুমিরের খামার
২. মরুভূমির বুকে সবুজ বাগান গড়ছে চীন
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
ঘুরে দাড়াচ্ছে কুমিরের খামার
খাল কেটে কুমির আনা বিপদের হলেও, খামারে কুমিরের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে বিপদজ্জনক, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এ প্রাণীটি। দীর্ঘ দুই দশক ধরে নানারকম চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহে ভালুকায় গড়ে তোলা দেশের প্রথম কুমিরের খামার।
ভয়ংকর এই প্রাণীটি দিনের বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকলেও খাবার দেয়ার সময় আবির্ভূত হয় স্বরূপে। কে কার আগে খাবে, এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে শুরু হয় কাড়াকাড়ি। খাওয়ার পর্ব শেষ হওয়া মাত্রই আগের জায়গায় ফিরে আবারো ধারণ করে চুপচাপ মূর্তিরূপ!
খাল কেটে কুমির আনার প্রবাদটি ইতিবাচক বাস্তবতা পেয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকায়। বাংলাদেশে কুমিরের খামার তৈরীর স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন দেশের আলোচিত লেখক মুশতাক আহমেদ। গেল ২০০৪ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন পায় তার রেপটাইলস ফার্ম।
সে সময় মালয়েশিয়া থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা খরচ করে আনা হয় ৭৫টি কুমির, যার মধ্যে পুরুষ কুমির ছিলো ১৫টি।
বিপুল সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে এতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। খামারটি বিনিয়োগ পায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে টিকে আছে খামারটি।
কুমিরের প্রজননের মৌসুম মূলত বর্ষাকালে। বাসা তৈরীর শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যেই ডিম দেয় এরা। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ৮০ থেকে ৮৫ দিন। আর এক জোড়া কুমিরের জন্য প্রয়োজন হয় ৮০ বর্গ মিটার জায়গা।
এ প্রজাতির কুমির সাধারণত ঘাস, লতাপাতা জড়ো করে ডাঙ্গায় ডিম দেয়। তাদের খাবারের জন্য রয়েছে ফার্মের নিজস্ব ব্রয়লার মুরগি। পাশাপাশি গরুর মাংস ও মাছও পছন্দ কুমিরের। স্ত্রী কুমিরের তুলনায় পুরুষ কুমির দ্রুত বাড়ে।
এই ফার্মে রয়েছে ডিম ফোটানোর অত্যাধুনিক ইনকিউবেটর, কুমিরের বাচ্চার জন্য বিশেষভাবে তৈরি হ্যাচারি। এছাড়া পৃথক শেড ও চামড়া প্রসেসিং করার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে এ খামারে।
একটি কুমিরের বয়স দুই থেকে তিন বছর হলেই তার চামড়া বিক্রির জন্য উপযুক্ত হয়ে পড়ে এবং এটিকে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দামি চামড়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিন বছর বয়স পর্যন্ত কুমির লালন করতে প্রতিটির পেছনে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এগুলোর প্রতিটি চামড়া বিক্রি হয় গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়।
ফার্মের কর্মকর্তারা জানান, সারা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির কুমির পাওয়া যায়। এদের মধ্যে লোনা পানির কুমির সবচেয়ে বড় হয়। তবে স্বাদু পানিতেও এই কুমিরদের পালন করা যায়।
একটি কুমিরের আকার যখন ৫ থেকে ৭ ফুট হয় তখন এর চামড়া প্রকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ ডলারে বিক্রি করা হয়। প্রকৃত অর্থে দাম নির্ভর করে চামড়ার আকৃতি ও গুণগত মানের ওপর।
ফার্ম প্রতিষ্ঠার এক দশক পর ২০১৪ সালে প্রথমবারের মত ৪৩০টি কুমিরের চামড়া প্রায় দুই লাখ ডলারে পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপানে রপ্তানি করা হয়। এর পরের বছরও সেখানে ৪০০টি চামড়া পাঠানো হয়। সে বছর আয় হয় প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার ডলার। এভাবে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে চামড়া রপ্তানীর হার। এ পর্যন্ত দেড় হাজারের অধিক চামড়া রপ্তানী হয়েছে জাপানে। এছাড়া অন্য দেশেও রপ্তানী করা হয়েছে।
সরকারের অনুমতি পেলে দেশ-বিদেশের হোটেলে কুমিরের মাংস বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন খামারের ব্যবস্থাপক ও কুমির বিশেষজ্ঞ ডা: আবু সাইম আরিফ।
ডা: আবু সাইম আরিফ, কুমির বিশেষজ্ঞ ও ফার্ম ব্যবস্থাপক
“চামড়ার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে কুমিরের হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশীয় বাজারে বাইপ্রোডাক্টগুলো বিক্রি করা গেলে অর্জন করা যাবে ব্যাপক মুনাফা।“
৭৫টি প্রাপ্তবয়স্ক কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ ফার্মে এখন প্রায় ৩ হাজার কুমিরের বসবাস। তাদের পরিচর্যায় কাজ করছেন দক্ষ ও সাহসী জনবল।
প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে এতো বড় পরিসরে কুমির চাষের কারণে ভালুকার এই ‘হাতিবেড়’ গ্রামটি সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে ‘কুমিরের গ্রাম’ হিসেবে।
২ দশক আগে শুরু হওয়া এই খামারটি নানা চড়াই উৎরায় পেরিয়ে সফলতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে। তাদের দেখাদেখি আরো দু’একটি প্রতিষ্ঠান নজর দিয়েছে কুমিরের খামার তৈরিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতি কুমির চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আর এ সঙ্গে জড়িয়ে থাকা উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার যদি তাদের পাশে আরো আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত হয় তবে আন্তর্জাতিকভাবে আরও ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশে কুমির চাষের গল্প। আর এভাবেই সমৃদ্ধ হবে দেশের রপ্তানী খাত।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
মরুভূমির বুকে সবুজ বাগান
পুরো দেশকে সবুজে ঢেকে দিতে দারুণ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার। এমনকি মরুর বুকেও সবুজের নির্যাস এনে দিয়েছেন দেশটির কৃষি উদ্যোক্তরা। সম্প্রতি গোবি মরুভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি খামার। সেখানে নানারকম সবজি ফলাচ্ছেন কৃষকরা। চীনের উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের গোবি মরুভূমিতে ১০০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি-শিল্প পার্ক। এই কৃষি শিল্প পার্ক একদিকে মরুভূমির একটি অংশকে সবুজে ঢেকে দিয়েছে অন্যদিকে আয় বাড়িয়েছে স্থানীয়দের।
মরুভূমির বুকে চাষাবাদ করা বেশ কঠিন একটি কাজ। কারণ এ ধরনের জায়গায় পানির তীব্র সংকট থাকে। এবং প্রতিবছরই মরুভূমির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে গিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হতে পারে। গোবি মরুভূমির প্রসার রোধ করতে চীনা সরকারের যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে, সেটি রীতিমতো বিস্ময়কর।
গেল ২০২১ সালে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে এই কৃষি শিল্পপার্ক। বর্তমানে এই পার্কে রয়েছে ৪ হাজার গ্রিনহাউজ, ২০০ হেক্টর বনভূমি। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি ফলবাগান। এর পাশাপাশি ১ লাখ ৫০ হাজার ভেড়ার প্রজনন কেন্দ্র ও খামার রয়েছে এই মরুভূমিতে ।
পার্কের গ্রিন হাউজগুলোর ম্যানেজার তাওয়াককুল তোহতি এসেছেন কাছের গ্রাম থেকে। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন একটি কাজ ছিলো, যা সম্ভব করেছে চীন সরকার। এই শিল্পপার্ককে ঘিরে উন্নত হয়েছে স্থানীয়দের জীবনমান। পাল্টে গিয়েছে সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারা।
একটি দেশকে কত কম সময়ের মধ্যে সবুজ চেহারা দেয়া যায়, তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে চীন। এখন সে পথেই হাঁটতে শুরু করেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী