শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩৫
2023-09-13 19:28:57

কৃষিপণ্যের বিনিময় বাড়াবে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩৫

 

এবারের পর্বে রয়েছে

১. নিজেদের মধ্যে বিনিময় বাড়াবে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো

২. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্যোগী চীন

৩. ধান কাটার মৌসুমে মাতোয়ারা কৃষকরা

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

 

নিজেদের মধ্যে বিনিময় বাড়াবে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো

আমদানী রপ্তানীতে এখনো পিছিয়ে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোতে। সম্প্রতি আয়োজিত ব্রিকস সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে। তারা চায়, কৃষি পণ্য বিনিময়ের বড় সম্ভাবনা তৈরি হোক এই ব্লকে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন ও ভারতের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পণ্য উৎপাদন করা দেশগুলো।  

 

                                               

বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষের বসবাস ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোতে। এত মানুষের প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে বড় বাজার হচ্ছে এই ব্লকে। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির চার ভাগের একভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।     

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত ব্রিকস সামিটে সদস্য দেশগুলো নজর দিয়েছে নিজ নিজ দেশের কৃষি ক্ষেত্রকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে। পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে সব ধরনের বাধা একসঙ্গে মোকাবেলা করার প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ব নেতারা।

চীন এবং ভারত খাদ্যের বড় আমদানিকারক হলেও ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে খাদ্যপণ্য আদান-প্রদান করে খুবই কম। এগ্রিকালচার বিজনেস চেম্বার অব সাউথ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ওয়ানডিলে জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা।

ওয়ানডিলে শিহলবো, চিফ ইকোনোমিস্ট, এগ্রিকালচার বিজনেস চেম্বার অব সাউথ এশিয়া

"৩০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বড় মার্কেট তৈরি করেছি আমরা। এর মধ্যে চায়না এবং ইন্ডিয়া ৮৫ শতাংশ কাভার করছে। সাধারণত ব্রিকসের বাইরের দেশগুলো থেকে বেশিরভাগ পণ্য আমদানী করা হয়। আমরা এখন চিন্তা করছি কিভাবে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আরও বেশি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ করতে পারে, আরো সমৃদ্ধ হতে পারে।"

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বড় ফার্মিং কোম্পানি জেড জেড টু দেশে উৎপাদিত হওয়া আপেল, পিয়ার এবং অ্যাভোকাডো ফল যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে রপ্তানি করে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মনে করে, রপ্তানিতে কোন বাউন্ডারি থাকা উচিত নয়, এতে ব্যবসার ক্ষেত্র সংকুচিত হবে। 

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যাশা করছে, তাদের উৎপাদিত পণ্যগুলো ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যেও রপ্তানি করা যাবে। জেড জেড টু’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টমি ভ্যান জাইল বলেন, চীন এবং ভারতে নতুন বাজার তৈরি হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে।

টমি ভ্যান জাইল, সিইও, জেড জেড টু

"দক্ষিণ আফ্রিকায় উৎপাদিত পণ্যগুলোর জন্য বড় সম্ভাবনামায় কেন্দ্র হয়ে উঠবে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চল। অন্যদেশে রপ্তানি করার জন্য আমাদের সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। ব্রিকস যদি মনে করে তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।"

গেল বছর রেকর্ড পরিমাণ কৃষি পণ্য রপ্তানি করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, যার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। সাউথ আফ্রিকা যে পরিমাণ উৎপন্ন করে তার অর্ধেকের বেশি খাদ্যপণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে দেয়। দেশটি  প্রত্যাশা করছে ব্রিক্সভক্ত দেশগুলোতেও সামনের দিনগুলোতে রপ্তানির বড় সুযোগ তৈরি হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়ানডিলে বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে সব দেশের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

"ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পণ্য আদান-প্রদান বাড়াতে হলে ইম্পোর্ট ট্যারিফ বা অন্য আমদানিতে ট্যাক্স কতটা কমানো যায় এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ইম্পোর্ট ট্যারিফ কমানো না গেলে পণ্য আমদানি, রপ্তানি বা অন্যান্য ব্যবসা প্রসারিত করা কোনভাবেই সম্ভব না।"

কৃষিক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বাস্তবায়ন হলে শুধু ব্রিকসভুক্ত দেশ নয় অন্য অঞ্চলের অর্থনীতির চেহারাও পাল্টে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্যোগী চীন

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে চীনের উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। অন্যান্য প্রাণীর পাশাপাশি দেশটি এখন নজর দিয়েছে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংরক্ষণে। এর সুফল এখন ভালোভাবেই চোখে পড়ছে। চীনের ইয়ুননান প্রদেশের বনাঞ্চলে বাড়ছে ফেইরি’র পাতা বানরের সংখ্যা। একসময় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হলেও এখন এদের সংখ্যা বেড়েছে পরিবেশ সংরক্ষণমূলক উদ্যোগের ফলে।

বিশ্বের বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর অন্যতম হলো ফেইরির পাতা বানর। ওরা জীবন ধারণ করে ঝর্ণার জল আর বনের ফলমূল খেয়ে।

দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার পার্বত্য বনাঞ্চলে এদের বাস। ওদের সংখ্যা এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের ছবি তোলেন চাং শানহ্য। এই ইকো ফটোগ্রাফার পাতা বানরদের সবচেয়ে বড় দলটির  সন্ধান পেয়েছেন।

লম্বা লেজ, কাচের মতো চকচকে চোখ এবং রূপালী-নীল লোমে ঢাকা এই বানরগুলো থাকে গভীর অরণ্যে। তারা উল্টো হয়ে ঝুলতে পারে। ওরা খুব হাসিখুশি। শাবক অবস্থায় এদের রং থাকে সোনালি। এসময় তাদের দেখতে দারুণ লাগে।

চাং জানান বেশ কয়েক বছর ধরে বানরদের সংখ্যা বাড়ছে। চীনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশসংরক্ষণমূলক কাজের ফলেই প্রকৃতির এই সন্তানরা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। আগের তুলনায় তাদের অনেক বেশি সংখ্যায় দেখা যায়।

চেং শানহ্য, ইকো-ফটোগ্রাফার

‘’এই বছর ১১টি সোনালি রঙের নবজাতক আমরা গুনেছি। তাহলে বলা যায়, ফেইরিস লিফ মাংকির দলের সংখ্যা বাড়ছে। এখন ওরা আমাদের বন্ধু হয়ে গেছে। ওরা আগের মতো আর অত লাজুক নেই। তারা মানুষকে দেখে অভ্যস্ত হয়েছে। আমরা বানরের দলগুলোকে রক্ষা করি। সত্যি বলতে কি আমরা আমাদের অরণ্য এবং যা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে সেই জলকে রক্ষা করি।‘’

শুধু বানর নয়, অন্যান্য বিপন্ন প্রাণীদের সংরক্ষণেও দারুণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বিশ্বের অনেক দেশই এখন অনুসরণ কেরছে চীনের দেখানো পথ।  

 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: এইচআরএস অভি

 

ধান কাটার মৌসুমে মাতোয়ারা কৃষকরা

দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম প্রধান খাবার হলো ভাত। এজন্য বছরজুড়েই চাহিদা থাকে ধানের। শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রাজ করছে চীন। এই তালিকায় ভারতে পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের মতো চীনেও বছরব্যাপী বিভিন্ন জাতের ধান তোলা হয়। চীনের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদনকারী এলাকা চিয়াংসি প্রদেশে শুরু হয়েছে প্রথম মৌসুমের ধান কাটার কাজ।

পরিপক্ক হয়ে ওঠায় আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ধান কাটতে নেমেছে চীনের চিয়াংসি প্রদেশের স্থানীয় কৃষকরা। 

এই ধান কাটা চলবে আরো ১৫ দিন। স্থানীয় কৃষি কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ধানের ফলন আগের বছর থেকে বেশ ভালো। প্রতি হেক্টর জমি থেকে ৭ হাজার ৫০০ কিলোগ্রাম ধান পাবার আশা করছে স্থানীয় কৃষি কর্তৃপক্ষ। গতবছরেও হেক্টর প্রতি ধান পাওয়া গেছে মাত্র ৬ হাজার ৭৫০ কিলোগ্রাম। গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

শুধুমাত্র লিনছুয়ান জেলায় ২ লাখ ৫৮ হাজার টনের উপর প্রথম মৌসুমের ধান উৎপাদন হবে এবার যা আগের বছরের চেয়ে ৫ হাজার ৪০০ টন বেশি। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এই শহরে মূলত দুই জাতের ধান চাষ হয়ে আসছে। এর মধ্যে একটি জাত হলো ইন্ডিকা ধান যেটি মার্চ ও এপ্রিলে রোপন করা হয় এবং আরেকটি হলো জাপোনিকা হাইব্রিড ধান, যেটি জুন মাসে রোপন করা হয়। দুটি ধানের জাতই তাপ ও সূর্যালোক প্রতিরোধী, পাশাপাশি উৎপাদনেও ভারসাম্যপূর্ণ।

প্রথম মৌসুমের ধান কাটা শেষ হয়ে গেলে স্থানীয় কৃষকরা ইন্ডিকা-জাপোনিকা হাইব্রিড ধান চাষের জন্য সেচ কাজ শুরু করবে। 

এদিকে পুরো অঞ্চল জুড়েই ধান কাটা হচ্ছে আধুনিক মেশিনের সাহায্যে। এবছর কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে ও সময় বাঁচাতে নতুন ধরণের হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে যেটি ধান কাটার পাশাপাশি খড় কুঁচি করে বাইরে ফেলে দিতে পারে। এতে যেমন পরিবেশ দূষণই কমে তেমনি মাটির গুণগত মানও বৃদ্ধি পায়, সারের দাম কমায় এবং পরবর্তী মৌসুমে ফলন অনেক ভালো হয়। স্থানীয় কৃষকদের মতে, এই ধরনের মেশিন ব্যবহারে ফসল কাটার সময় শস্যের ক্ষতি কম হয়।

সিনচিয়ান জেলার নানছাং শহরে পরবর্তী মৌসুমের ধানের চারা রোপনে ২ হাজারের বেশি কৃষিকাজের মেশিন ইতোমধ্যে মাঠে নামানো হয়েছে। একটি নতুন চারা রোপণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে চীনের কৃষকরা। এই পদ্ধতিতে শুরুতে ধানের বীজ ভিজিয়ে নার্সারি ট্রেতে রাখে তারা। এই পদ্ধতিতে খরচ অনেক কম হয় এবং তুলনামূলক উৎপাদনও বেশি হয়।

গ্রীষ্মকালের প্রখর তাপ যেনো বীজগুলোকে পুড়িয়ে না ফেলতে পারে সেজন্য স্থানীয় কৃষকরা লম্বা সময় নিয়ে বীজগুলোকে বড় করে থাকে। এতে বীজগুলো মানে যেমন ভালো হয় তেমনি শেকড়ও অনেক মজবুদ হয়ে ওঠে। ফলে ফসলের মানেও আসে ইতিবাচক পরিবর্তন।

 

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

 

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী