২০২৩ সাল হচ্ছে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। ‘এক অঞ্জল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে সহযোগিতামূলক প্রকল্পে অনেক চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে ও করছে। এ সব প্রকল্প স্থানীয় জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে এবং স্থানীয় জনগণও এসব প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পূর্বাঞ্চলের দাশেরকান্দি গ্রামে আগে একটি দূষিত পানিপূর্ণ নদী ছিল। এতে গ্রামবাসীরা অনেক কষ্ট পেতেন। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় আগে, চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে একটি আধুনিক ময়লা জল পরিশোধনকেন্দ্র। কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর, নদীর পানি একেবারে পরিষ্কার হয়েছে। দাশেরকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা সাংবাদিকদেরকে স্থানীয় পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে অবহিত করেন। জনৈক গ্রামবাসী বলেন, ‘আগে এখানে কালো ও ময়লা পানি ছিল। এখন পরিষ্কার পানিতে আমরা সাঁতার কাটতে পারি।’ আরেকজন বাসিন্দা বলেন, ‘সপ্তাহান্তে বা সাধারণ ছুটিতে অনেক পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। জায়গাটা এখন অনেক সুন্দর ও আরামদায়ক।’
স্থানীয় পরিবেশ উন্নত ও গণকল্যাণ সৃষ্টির জন্য, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় চীন-বাংলাদেশ সহোযোগিতামুলক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে, ২০১৭ সালের আগস্টে দাশেরকান্দি পরিশোধনকেন্দ্রের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। চীনা সরকার এ প্রকল্পের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ দেয় এবং চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছেংতু সার্ভে, ডিজাইন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।
পরিশোধনকেন্দ্রটি নির্মাণের সময় ও পরে, প্রতিষ্ঠানটি চীনা বৈশিষ্ট্যময় উচ্চমানের প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। পাশাপাশি, কেন্দ্রে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক কাদা পোড়ানো কেন্দ্রও নির্মাণ করেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে পরিশোধনকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উচ্চ মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নর্দমার জল পরিশোধনের সার্বিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে এই কেন্দ্র। এটি একাধিক নদীর পরিবেশ ও পানির গুণগত মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় নর্দমার জল পরিশোধনকেন্দ্র হিসেবে, গত বছরের এপ্রিল মাসে চালু হওয়ার পর থেকে, এই প্লান্ট প্রতিদিন ঢাকা শহরের প্রায় ৫০ লাখ জনসংখ্যার সৃষ্টি করা নর্দমার জল পরিশোধন করতে পারে। এটি স্থানীয় জনগণের জন্য বাস্তব কল্যাণ বয়ে এনেছে। কেন্দ্রের কর্মচারী মুহাম্মাদ শেখ রাসেল বলেন, ‘আমরা প্লান্টে পরিশোধিত বিশুদ্ধ পানি আশেপাশের নদীতে নিঃসরণ করি। এখন নদী আর দূষিত নেই। এ প্রকল্প বাংলাদেশের পরিবেশের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
বতর্মানে দাশেরকান্দি গ্রামের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। অনেক পর্যটকও এখানে ঘুরতে আসেন। এজন্য অনেক গ্রামবাসীর কর্মসংস্থানও হয়েছে, আয় বেড়েছে। গ্রামবাসী জাহিদ বলেন, ‘পরিশোধনকেন্দ্রটি স্থাপিত হবার আগে, এলাকার লোকজন অনেক রোগে আক্রান্ত হতো, যেমন- ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া । এখন এ সব রোগ-বালাই দূর হয়েছে। আগে আমাদের অনেকের চাকরি ছিল না। প্রকল্পটি নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আমাদের অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ প্রকল্পটি আমাদের জন্য একটি ভালো কাজ। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি লাভবান হতে পারব।’
চলতি বছর হচ্ছে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার সপ্তম বার্ষিকী। আর দাশেরকান্দি পরিশোধনকেন্দ্রটি হচ্ছে দু’দেশের সহযোগিতার প্রতীক। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “ শুধু এ প্রকল্পটি নয়, বরং ভবিষ্যতে আরও বেশি এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এবং সেসব প্রকল্পে চীনা সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। এ ধরনের প্রকল্পের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের অনেক উন্নয়ন দরকার। আমাদের চীনের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। চীনা সরকারও অনেক আর্থিক পরিকল্পনা দিয়েছে। আমরা এসব পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাই।” (আকাশ/আলিম)