বিজ্ঞানবিশ্ব ৩৫তম পর্ব
2023-09-11 19:22:58

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩৫তম পর্বে যা থাকছে:

* চাঙ্গা হয়ে উঠছে চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্প

* প্রথমবারের মতো সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ করলো চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান

* টেকসই উন্নয়ন গবেষণায় সাহায্য করবে আলোর মানচিত্র

 

চাঙ্গা হয়ে উঠছে চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্প

 

চলতি বছরের স্মার্ট চায়না প্রদর্শনীতে পুরো বিশ্ব থেকে ৫০০’র বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক হয় চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালিটিতে। প্রদর্শনী ঘুরে টের পাওয়া যায় চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্প অনেকদূর এগিয়ে গেছে। 

সম্প্রতি শেষ হওয়া তিন দিনব্যাপী স্মার্ট চায়না প্রদর্শনীতে প্রযুক্তিপণ্যভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আসে নানা বুদ্ধিমান পণ্য। আধুনিক টেলিভিশন থেকে শুরু করে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি- কী ছিলো না সেখানে?

প্রদর্শনীটির এবারের থিম ছিলো ‘ইন্টেলিজেন্টলি কানেক্টেড নিউ এনার্জি ভেহিকেলস’। ৮০ হাজার বর্গ মিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে হয় এবারের প্রদর্শনী। হাজারো পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়িপ্রেমী ছুটে যান প্রদর্শনীতে। তারা বলছেন, অর্থ বাঁচানোর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাতেও জুড়ি নেই আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই গাড়িগুলোর।

ছোংছিংয়ের বাসিন্দা লিউ চিয়ে বলেন, পরবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়িগুলো বেশ সুবিধাজনক ও সস্তা।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি চীনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ির বাজার বেড়ে চলেছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের কাছে মনে হয় বিদ্যুৎ গ্যাস থেকেও সাশ্রয়ী। আর পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি ব্যবহার করে শহরের মধ্যে খুবই আরামের সঙ্গে কাজে যাওয়া যায়। এটি খুবই সুবিধাজনক ও সস্তা বিধায় আমি এধরণের 

আরও একটি গাড়ি কিনতে চাই।” 

সংশ্লিষ্টরা বলছে, গত পাঁচ বছরে দ্রুত বিকাশ ঘটেছে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ির। আর পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎচালিত গাড়ি তৈরিতে প্রয়োজন ভালো মানের ব্যাটারি। কিছু চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের ব্যাটারি তৈরি করতে সফল হয়েছে। 

এরই মধ্যে একটি হলো ছোংছিং ফিনড্রিমস ব্যাটারি। তারা গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে ব্যাটারিখাতে কাজ করছে। কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক থিয়ান ওয়েইহাও বলেন, “২০২০ সালে আমাদের কোম্পনি নতুন প্রজন্মের আইরন ফসফেট ‘ব্লেড ব্যাটারি’ বাজারে ছাড়ে। এটি ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মিলিমিটার দীর্ঘ এবং আঁকারে চারকোণা। এটি একটি বিশেষ উপায়ে গাড়িতে লাগানো হয় যা পাওয়ার সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ব্যাটারি তৈরি করার সময় আমরা বাতাসের আর্দ্রতা এবং ধুলোবালি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করি।”

ব্লেড ব্যাটারি খুব নিরাপদ এবং বেশ টেকসই। এটি একবার চার্জে সহজেই ৬০০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৬০ লাখের বেশি বিদ্যুৎচালিত পরিবেশবান্ধব গাড়ি বিক্রি হয়েছে চীনে, যা বিশ্বব্যাপী বিক্রিত গাড়ির অর্ধেকেরও বেশি।

চীনকে বিশ্ববাজারে এগিয়ে নিয়ে যেতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি প্রস্তুতের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে ছোংছিং অনুকূল ভৌগলিক পরিবেশ ও সহায়ক সরকারী নীতিসুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এর শিল্পের বিকাশ অব্যাহত রাখবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।  

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

প্রথমবারের মতো সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ করলো চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান

 

চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই প্রথম ‘গ্যালাক্টিক এনার্জি’ সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপন মিশন সম্পন্ন করলো। বেইজিংভিত্তিক এই কোম্পানিটি জানায়, ইয়েলো সি বা পীত সাগর থেকে  মঙ্গলবার বিকেলে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য সিরিস ওয়ান ক্যারিয়ার রকেট  উৎক্ষেপণ করেছে তারা। ক্যারিয়ার রকেটটিতে চারটি স্যাটেলাইটকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরের পূর্বনির্ধারিত কক্ষপথে পাঠায় তারা।

চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এ এক নতুন রেকর্ড। ইয়েলো সি থেকে চারটি স্যাটেলাইট নিয়ে আকাশপানে যাত্রা করলো রকেট। স্যাটেলাইটগুলো তৈরি করেছে বেইজিংভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট অপারেটর। ইন্টারনেট অব থিংস এর জন্য তথ্য সংগ্রহে এই স্যাটেলাইটগুলোকে কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছে গ্যালাক্টিক এনার্জি। 

সিরিস ওয়ান ক্যারিয়ার রকেটের এই মডেলটি সাগর থেকে উৎক্ষেপণ ও অবতরণ করতে সক্ষম, যা বেসরকারিভাবে প্রস্তুত রকেটের মধ্যে প্রথম। এর আগে সরকারি উদ্যোগে চীন পাঁচটি সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ করেছে। এর মধ্যে চারটি হয়েছে লং মার্চ ১১ রকেটের সাহায্যে এবং আরেকটি হয়েছে স্মার্ট ড্রাগন থ্রিয়ের সাহায্যে। এই মিশনগুলোতে ৩৭টি স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে পাঠানো হয়।

গ্যালাক্টিক এনার্জির ভাইস প্রেসিডেন্ট সিয়া থংকুন বলেন, “স্থলভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলো সরকারি রকেট মিশনে ব্যস্ত। তাই এর বিকল্প হিসেবে তাদের কোম্পানি সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণে জোর দিয়েছে। ফলে এবছর আমরা আরো বেশি রকেট মহাকাশে পাঠাতে পারবো। পাশপাশি এই সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ বেশ নিরাপদ ও কার্যকরীও বটে।“

সংশ্লিষ্টরা বলেন, স্থলভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া থেকে সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণ বেশি নিরাপদ। কারণ সমুদ্রভিত্তিক রকেট উৎক্ষেপণে চারপাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থাকে না, ফলে ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ায় বিষুবরেখার কাছাকাছি থেকে রকেট উক্ষেপণ করা যায়। যা খরচ কমিয়ে দেয় এবং কিছু স্যাটেলাইট আরও বেশিদিন টিকে থাকে।

তথ্য-উপাত্ত বলছে গ্যালাক্টিক এনার্জি অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইতোমধ্যেই অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছে। তাদের সিরিস ওয়ান রকেটে করে এখন পর্যন্ত ৩৩টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। উত্তোলনের ৩৩ মেট্রিক টন ওজনসহ রকেটটি স্যাটেলাইটের ৩০০ কেজি ওজন বহন করতে সক্ষম।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

টেকসই উন্নয়ন গবেষণায় সাহায্য করবে আলোর মানচিত্র

সম্প্রতি সফলভাবে একটি নতুন দূর-অনুধাবন উপগ্রহ নির্ধারিত কক্ষপথে প্রেরণ করেছে চীন। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, কৃষি ফলনের পূর্বাভাসসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হবে উপগ্রহটি। এদিকে গত বুধবার প্রথমবারের মতো শহুরে রাত্রিকালীন আলোর দূর-অনুধাবন উপাত্তের প্রথম মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীন।

লংমার্চ-ফোর সি পরিবহন রকেটের মাধ্যমে মহাকাশপানে উড়ে যায় ইয়াওকান-থ্রি থ্রি জিরো থ্রি নামের নতুন এক দূর-অনুধাবন উপগ্রহ। কানসু প্রদেশের চিউছুয়ান উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় উপগ্রহটিকে। উপগ্রহটিকে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, ভূমি জরিপ, কৃষি ফলনের পূর্বাভাস এবং দুর্যোগ প্রতিরোধ ও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এটি ছিলো লংমার্চ পরিবহন রকেট সিরিজের ৪৮৬তম ফ্লাইট মিশন।

এদিকে সম্প্রতি দূর-অনুধাবন উপাত্ত ব্যবহার করে এক আলোর মানচিত্র প্রকাশ করেছে চীন যা বিশ্বে এটাই প্রথম। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিগ ডেটার আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র -সিবিএস এই মানচিত্র প্রকাশ করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শহুরে টেকসই উন্নয়ন গবেষণার জন্য সহায়তা প্রদান করবে এই মানচিত্র। 

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিগ ডেটার তৃতীয় আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রকাশ পায় মানচিত্রটি। মানচিত্রটিতে রয়েছে বিশ্বব্যাপী ১৪৭টি শহর ও ১০৫টি দেশের ১০ মিটার রেজুলেশনের রাত্রিকালীন আলোর দূর-অনুধাবন তথ্য।

এই তথ্যগুলো এসডিজিএসএটি ওয়ান স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা হয়েছে। স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয় ২০২১ সালের ৫ই নভেম্বরে। এটিই ছিলো জাতিসংঘের ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত বিশ্বের প্রথম মহাকাশ বিজ্ঞান স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইটটি তৈরি করেছে চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস। তারা জানায়, মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ডেটা সরবরাহ করার জন্য স্যাটেলাইটটি ডিজাইন করা হয়েছে।

সিবিএএসের প্রধান কুয়ো হুয়াথং বলেন, পৃথিবীপৃষ্ঠে কম আলোতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ শনাক্ত করতে কাজে আসবে এই মানচিত্রটি।

তিনি বলেন, “মানুষের কার্যকলাপকে সঠিকভাবে চিত্রিত করতে পারে এই স্যাটালাইটটি। এই স্যাটেলাইটের রেজুলেশন বিশ্বে সর্বোচ্চ। রেজুলেশন যত বেশি হবে ছবি ততই স্পষ্ট আসবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১১তে বেশ কিছু সূচক রয়েছে যা এই স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্য থেকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাবে এবং পরবর্তীতে শহুরে লেআউট ডিজাইনে এই তথ্য কাজে লাগবে।”

তিনি আরো বলেন, “এই মানচিত্রে থাকা তথ্যগুলোতে শহরের মানব বসতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র সম্পূর্ণরূপে উঠে এসেছে। ফলে এই তথ্যগুলো শহুরে টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত গবেষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী