বাতাসের পিছনে ছোটা ‘সবুজ জ্বালানি’
2023-09-11 15:28:58

জ্বলন্ত সূর্যের নিচে কাজাখস্থান প্রকল্পের সমন্বয়কারী রিনাত তুরগাবেকভ আলমাতি অঞ্চলে নির্মিত কাপছাগেই ১০০ মেগাওয়াট ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এটা দেশটির একক বৃহত্তম ফোটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্পগুলোর অন্যতম। পাশাপাশি এটি চীন-কাজাখ সবুজ জ্বালানি সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলোরও অন্যতম। চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল এনার্জি কাজাখস্তানি সহযোগিতামূলক অংশীদারের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি নির্মাণ করেছে।

ইউনিভার্সাল এনার্জির একজন ‘প্রবীণ কর্মী’ হিসেবে তুরগাবেকভ দেখেছেন গোবি মরুভূমিতে নির্মিত একেকটি ফোটোভোলটাইক বিদ্যুৎকেন্দ্র কীভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিদ্যুৎসাম্য এনেছে এবং অঞ্চলে বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ‘এক অঞ্চল এক পথ’ বরাবর টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সহযোগিতা, পারস্পরিক কল্যাণ এবং উভয়ের জন্য সুবিধার নতুন অধ্যায় লিখে চলেছে।

চীনা প্রতিষ্ঠান তুরগাবেকভের জীবন-পথেও বিরাট পরিবর্তন এনেছে। তিনি চীনের থিয়ানচিনে লেখাপড়া করেছেন এবং ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন। শুরুর দিকে তিনি ইউনিভার্সাল এনার্জিতে অনুবাদক হিসাবে কাজ করতেন। কাজ করার এক পর্যায়ে চীনা সহকর্মীরা তাকে প্রকল্প সমন্বয়কের দায়িত্ব নিতে উত্সাহ দেন এবং কীভাবে উপ-ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়, কীভাবে আকস্মিক পরিস্থিতি সামাল দিতে হয় এবং কীভাবে কার্য সম্পাদন করতে হয়, সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন তাকে।

গত ৫ বছর ধরে ইউনিভার্সাল এনার্জিতে কাজ করার সময় তিনি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছেন। ২০২০ সাল ছিল ‘চীনা-কাজাখ উৎপাদন সক্ষমতা ও বিনিয়োগ সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তালিকা’য় অন্তর্ভূক্ত কাসকেলেন ৫০-মেগাওয়াট ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্ব। মহামারীর কারণে ওই সময় চীনা কর্মীরা সময়মতো কাজাখস্তানে যেতে পারতেন না। তা সত্ত্বেও তুরগাবেকভ কাজাখ দল ও চীনা কর্মীদের দূরবর্তী নির্দেশে একটু একটু করে কাজ এগিয়ে নিয় সময়মতো প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।

কোম্পানির চীন ও কাজাখ দলের যৌথ প্রচেষ্টায় কাসকেলেন ৫০-মেগাওয়াট ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎ প্রকল্প ২০২০ সালের জুন মাসে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এটি ছিল মহামারীকালে বাস্তবায়িত প্রথম আন্তঃসংযোগ ফোটোভোলটাইক বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্প। বছরে এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উত্পাদনের পরিমাণ ৮ কোটি ৮ লাখ কিলোওয়াট ঘন্টা। পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসাবে এটি কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে ৮০ হাজার ৮শ’ টন।

গত ৫ বছরে তুরগাবেকভের আয় অনেক বেড়েছে। তিনি কাজাখস্তানের বৃহত্তম শহর আলমাতিতে একটি বাড়িও কিনেছেন।

তুরগাবেকভের ব্যাখ্যা মতে, কাজাখস্তানে তাপবিদ্যুৎ ও অন্যান্য প্রথাগত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেশি, যার কারণে ভোক্তাদের বিদ্যুৎ খরচও বেশি হয়। পরিবেশবান্ধব সবুজ জ্বালানি কাজাখস্তানকে টেকসই উন্নয়ন পথে চলতে সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদেরকে ন্যায্য মূল্য বিদ্যুৎ পেতে সাহায্য করে। দেশটিতে দীর্ঘকাল ধরে উত্তরাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতে বিদ্যুৎঘাটতির দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু এখন চীনা কোম্পানি ফটোভোলটাইক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর হচ্ছে।

ইউনিভার্সাল এনার্জির প্রেসিডেন্ট নান ই জানান, তাদের কোম্পানি ২০১৫ সাল থেকে কাজাখস্তানে ফটোভোলটাইক ও বায়ু বিদ্যুতের মতো নতুন জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ শুরু করে। এ পর্যন্ত মোট ৩৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৬টি নতুন জ্বালানির বিদ্যু্ৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর প্রত্যেকটি ‘চীন-কাজাখ উত্পাদন সক্ষমতা ও বিনিয়োগ সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তালিকা’য় অন্তর্ভূক্ত প্রকল্প। এসব প্রকল্প বছরে কার্বনডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়েছে ১ বিলিয়ন টন এবং স্থানীয় ৬ লাখ পরিবারের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করেছে। কাজাখস্তানে ইউনিভার্সাল এনার্জির বিনিয়োগে নির্মিত ও পরিচালিত নতুন জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদন পরিমাণ ইতোমধ্যে ১৭০ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা ছাড়িয়ে গেছে. যা ১৭ লাখ টন কার্বনডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার সমান।

বর্তমানে আরও বেশি মানুষ ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নির্মাণের অংশে পরিণত হয়েছেন। মধ্য-এশীয় অঞ্চলে প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত চীনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়ছে। ফটোভোলটাইক ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে সেখানে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘বিদেশ গমন’ স্থানীয় নির্মাণের মানকে উন্নত করছে এবং স্থানীয় উন্নয়নকে সমর্থন যোগাচ্ছে।

নান ই’র মতে, যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ সহযোগিতা নির্মাণের মাধ্যমে চীন ও বিদেশি পক্ষের প্রাধান্য আরও ভালোভাবে নিশ্চিত হবে এবং উভয় পক্ষের জন্য তা উপকারী হবে। (প্রেমা/রহমান)