ইউয়ান রাজবংশের ‘চীনামাটি রোড’ থেকে আধুনিক ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’
2023-09-10 19:58:02

চীনামাটির বাসন প্রাচীন চীনের একটি মহান আবিষ্কার। মধ্যযুগে, পশ্চিমের দেশগুলো চীনকে ‘চীনামাটির দেশ’ বলে ডাকত। চীনামাটির বাসন এবং রেশম চীনের প্রতীক হয়ে ওঠে তখন।

চীনামাটির বাসন থাং রাজবংশ আমলে আবিষ্কৃত হয় এবং সুং রাজবংশ আমলে হয় বিকশিত। থাং এবং সুং রাজবংশ আমলে, বাইরের বিশ্বের কাছে চীন ছিল উন্মুক্ত। তখন চীনামাটির বাসন বিশ্বব্যাপী একটি উচ্চ-মানের পণ্য হয়ে উঠেছিল, হয়েছিল প্রশংসিত। থাং রাজবংশ আমলে চীনামাটির বাসন প্রধানত জাপান, কোরিয়ান উপদ্বীপ, মিসর, ইরান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো।  সুং রাজবংশ আমলে চীনামাটির শিল্প আরও সমৃদ্ধ হয়; নকশা ও রঙে আসে বৈচিত্র্য। উত্পাদন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়। সরকারি ভাটা ছাড়া পাঁচটি বিখ্যাত ভাটা তখন এই পণ্য উত্পদান করে রপ্তানি করত এবং রপ্তানিকৃত চীনামাটির বাসন প্রধানত নীল ও সাদা রঙের ছিল।

ইউয়ান রাজবংশ আমলে চীনামাটির বাসন সুং আমলে চীনামাটির ওপর ভিত্তি করে বিকশিত হতে থাকে। চীনামাটির বাসন উত্পাদনের ক্ষেত্রে, চিংত্যজেন চীনামাটির বাসন লুংছিউয়ান সেলাডনকে ছাড়িয়ে যায় এবং চীনামাটি শিল্পের শীর্ষ পণ্য হয়ে ওঠে। চিংত্যজেন ‘চীনামাটির রাজধানী’ হিসেবে দেশে-বিদেশে সুপরিচিত ছিল। নীল চীনামাটির বাসনের উপস্থিতি ইউয়ান রাজবংশ আমলে চীনামাটির রপ্তানিবাণিজ্য বাড়িয়ে দেয় এবং ইউয়ান রাজবংশ আমলে ইউরোপীয় দেশগুলোতে কয়েক মিলিয়ন চীনামাটির বাসন রপ্তানি করা হয়েছিল।

আমরা জানি, দীর্ঘকাল ধরে, প্রাচ্য ও পশ্চিমের মধ্যে প্রধানত ‘স্থল সিল্ক রোড’-এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়েছে। কিন্তু থাং রাজবংশ আমলের পর থেকে মধ্য-এশিয়ার পরিস্থিতির বড় পরিবর্তন ঘটে। প্রাচ্য এবং পশ্চিমের বাণিজ্য "স্থল" থেকে "সমুদ্রে" রূপান্তরের ধারা দেখা যায় তখন। ইউয়ান রাজবংশ আমলের সরকার বিদেশী বাণিজ্য সুরক্ষার প্রতি খুব মনোযোগ দিয়েছিল, এবং যুদ্ধের বাধা রোধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। সুং এবং ইউয়ান রাজবংশ আমলে চীনের ইতিহাসে সামুদ্রিক পরিবহনে সবচেয়ে উন্নত সময় ছিল এবং চীনের বিদেশী বাণিজ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময় ছিল। এর স্কোপ ও প্রভাব ছিল অভূতপূর্ব; তখনই গড়ে উঠেছিল বিখ্যাত ‘চীনামাটির রোড’।

আজ, প্রাচীন ‘স্থল সিল্ক রোড’ এবং ‘সামগ্রিক সিল্ক রোড’-এর ভিত্তিতে, চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ফলাফল – ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ প্রস্তাব করেছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কাজাখস্তানের নাজারবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বক্তৃতা দেন এবং যৌথভাবে ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট’ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। একই বছরের অক্টোবরে, তিনি ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্টে তাঁর বক্তৃতায় যৌথভাবে ‘একবিংশ শতাব্দীর সামগ্রিক সিল্ক রোড’ নির্মাণের প্রস্তাব দেন। ক্রমাগত উন্নয়ন ও উন্নতির পর, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতা কাঠামো অবশেষে গঠিত হয়।

"বেল্ট অ্যান্ড রোড" ব্যাপক পরামর্শ ও যৌথ নির্মাণের ভিত্তিতে, আঞ্চলিক অর্থনীতির সাথে বিশ্বের অর্থনীতিকে একীকরণের প্রচার করে, বৈশ্বিক উত্পাদন ও সরবরাহকে একীভূত করে, এবং সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ফল ভাগাভাগি করে নিতে সক্ষম করে তোলে। "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগ চীনের, কিন্তু এর সুযোগ ও উপকার সমগ্র বিশ্ব উপভোগ করতে পারে। বিস্তৃত আলোচনা, যৌথ অবদান এবং ভাগাভাগি করার সুবিধার ভিত্তিতে, সকল দেশ অন্তর্ভুক্তি ও উন্মুক্ততার নীতি অনুসরণ করে, অবশেষে অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলবে বলে আশা করা যায়।

আজ, যদি কোনো ইউরোপীয় চীনে তৈরি চীনামাটির বাসন ও চা কিনতে চান, তবে তাকে আর কয়েক মাসের পথ অতিক্রম করে চিংত্যজেনে যেতে হবে না। ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, চিংত্যজেন চীনামাটি, চা এবং অন্যান্য পণ্য বহনকারী রেলগাড়ি চিয়াংসি প্রদেশের চিংত্যজেন ইস্ট স্টেশন থেকে মস্কো, রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এটি ছিল জিংত্যজেন থেকে প্রথম চীন থেকে ইউরোপগামী ট্রেন। এটি যেন প্রথমবারের মতো জিংত্যজেনের চীনামাটির বাসন ও চা ইউরোপে নিয়ে যাওয়া ‘স্টিলের উট’। ঐতিহ্যবাহী সমুদ্র, বিমান এবং স্থল পরিবহনের সাথে তুলনা করে, চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস তার স্বল্প দূরত্ব, দ্রুত গতি, উচ্চ নিরাপত্তা, সবুজ পরিবেশগত সুরক্ষার কারণে আন্তর্জাতিক স্থল পরিবহনের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সমৃদ্ধি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার রূপান্তর এবং অপ্টিমাইজেশনকে অনিবার্য করে তোলে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে জয়-জয় ফলাফল অর্জন করা এবং একটি সহনশীল ও পারস্পরিক কল্যাণকর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হল  "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। এটি চীনের জয়-জয় সহযোগিতাকেন্দ্রিক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার অনিবার্য পথ।

বিভিন্ন দেশের মধ্যে স্বার্থের সম্পর্ক সঠিকভাবে মোকাবিলা করা জয়-জয় সহযোগিতার ভিত্তি। আন্তর্জাতিক বিনিময়ে, স্বার্থের সম্পর্ক হল সবচেয়ে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক, এবং তা হল সমস্ত কূটনৈতিক কার্যকলাপ ও বৈদেশিক নীতির ‘টাচস্টোন’। চীন ন্যায়পরায়ণতা ও স্বার্থের সঠিক ধারণাকে সমর্থন করে এবং ন্যায়পরায়ণতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতায়, নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের স্বার্থকে নষ্ট করা উচিত নয়। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি, চীন অন্যান্য দেশের যুক্তিসংগত উদ্বেগগুলোকে বিবেচনায় নেয়, অন্য দেশের স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সমাজের স্বার্থের ক্ষতি না করে, এবং সকল পক্ষের অভিন্ন স্বার্থের মধ্যে মিলন খোঁজার চেষ্টা করে।

শুধুমাত্র মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গঠনের পক্ষে কথা বলার মাধ্যমে, নিজের স্বার্থ অনুসরণ করার সময় অন্যান্য দেশের যুক্তিসংগত উদ্বেগগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে, এবং নিজের উন্নয়নের চেষ্টার সময় সকল দেশের সাধারণ উন্নয়নের কথা বিবেচনার মাধ্যমে, একটি নতুন ধরনের সমান ও ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। (ইয়াং/আলিম/ছাই)