বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুননির্মাণ কাজ দেখতে হেই লং চিয়াং প্রদেশে প্রেসিডেন্ট সি
2023-09-08 15:39:09

সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড় ডকসুরির প্রভাবে চীনের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা হয়েছিল। এ দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পুননির্মাণের কাজ কেমন চলছে, তার খোঁজ-খবর নিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (বৃহস্পতিবার) হেই লং চিয়াং প্রদেশের শাং চি শহর পরিদর্শন করেন।

চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে বেইজিং ও থিয়ান চিন শহর এবং হ্য পেই ও হেই লং চিয়াং প্রদেশসহ নানা জায়গায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রবল বৃষ্টি হয় এবং তাতে সৃষ্ট বন্যায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বর্তমানে পুননির্মাণ কাজ চলছে এবং এমন প্রেক্ষাপটে হেই লং চিয়াং প্রদেশ আসেন প্রেসিডেন্ট সি।

জাপান-বিরোধী যুদ্ধের বীর চাও শাং চির নামানুসারে শাং চি শহরের নামকরণ করা হয়। হেই লং চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হারবিনের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এ শহর চীনের বিখ্যাত একটি চাল উত্পাদনকারী এলাকা। এখানে চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ ২২৬ হাজার হেক্টর এবং গত বছর এখানে খাদ্য উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন।

আগস্ট মাসের শুরুতে শাং চি শহরে দেখা দেয় ১৯৫৭ সালের পর গত ৬৬ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যা। ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়। কিছু দিন আগে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর স্থানীয় কমিটি কৃষি ক্ষেত্রে দুর্যোগ প্রতিরোধ ও মোকাবিলা বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। স্থানীয় কমিটির সম্মেলনে বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি ও স্থাপনা দ্রুত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে এবং কৃষকরা আবার চাষ শুরু করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হবে।

এখন খাদ্য উত্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম চলছে। প্রেসিডেন্ট সি লং ওয়াং মিয়াও গ্রামে আসেন ফসলি জমিতে ধানের উৎপাদন পরিস্থিতি দেখতে।

সিপিসির পলিট ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সম্মেলনে পরিবহন, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোর মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুননির্মাণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট সি লং ওয়াং মিয়াও গ্রামে হেঁটেহেঁটে রাস্তার পাশে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও অবকাঠামোর মেরামত ও পুননির্মাণের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। এবার বন্যায় শাং চি শহরে সাড়ে ২৮ হাজার পরিবারের ৭৯ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লং ওয়াং মিয়াও গ্রামে স্থায়ী ১৯৩টি পরিবারের মধ্যে ১৪৫টি পরিবারও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসিডেন্ট সি দুর্যোগ-পীড়িত পরিবারে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেন। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, সবাই অসুবিধা কাটিয়ে উঠে উত্পাদন স্বাভাবিক করতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রেসিডেন্ট সি বেশ কয়েক বার বন্যা-কবলিত এলাকা সফর করেন। ২০২০ সালের গ্রীষ্মে চীন ১৯৯৮ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর বন্যার শিকার হয়। ওই বছরের আগস্ট মাসে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আন হু প্রদেশ সফর করেন এবং দুর্যোগ-পীড়িত এলাকার স্থানীয় মানুষ ও কর্মীদের অবস্থা দেখেন।

তিনি বলেন, “দুর্যোগ-পীড়িত এলাকার মানুষের কথা সবসময় আমার মনে থাকে। আপনারা স্বাভাবিক উত্পাদন ও জীবনযাপনে ফিরেছেন দেখে আমিও স্বস্তি বোধ করছি।”

বন্য প্রতিরোধ ও মোকাবিলার উপর অধিক গুরুত্ব দেন প্রেসিডেন্ট সি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মানুষের জীবন সবচেয়ে মূল্যবান – এই কথাটি মনে রাখতে হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় টাইফুন মোকাবিলার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, দশ বার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলেও নয় বারই কোন দুর্যোগ হয়নি। তবে এমন একটি বারও যেন না হয় যে, আমরা প্রতিরোধমূলক কোনও ব্যবস্থাই রাখিনি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে মানবজাতির বেঁচে থাকা ও বিকাশ একটা চিরন্তন বিষয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্যোগ মোকাবিলা করা একটি রাজনৈতিক দল ও একটি দেশের জীবনের প্রতি সম্মানের প্রতিফলন। (শিশির/রহমান/রুবি)