অভিন্ন সমৃদ্ধি আনায়নকারী কর্মসূচির কারণে আয় বেড়েছে কৃষক পরিবারের
2023-09-08 14:22:49


চীনের শান তোং প্রদেশের সিয়া চিন জেলার ইয়েলো নদীর অববাহিকা অঞ্চলের বন-পার্কে ৪শ’ হেক্টর জমিতে প্রাচীন তুঁত গাছে রয়েছে পাতার সমাহার। ভোর ৫টার দিকে ছু ইয়ুন তোং নিজ পরিবারের তুঁত বাগানে পৌঁছে যান। তিনি তুঁত গাছের পাতা সংগ্রহ করে বাড়িতে নেন রেশম পোকাকে খাওয়ানোর জন্য।

ছু ইয়ুন তোং সিয়ান চিন জেলার সু লিউ চুয়াং উপজেলার ছিয়ান টুন গ্রামের একজন কৃষক। বর্তমানে তার আরেকটি নতুন পরিচয় হয়েছে। পিং আন অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী কর্মসূচির একজন রেশম পোকা লালনকারী।

তিনি বলেন, “আগে শুধু তুঁত বাগান ছিল। রেশম পোকা কিভাবে লালন করতে হয়, তা জানতাম না। তাই তুঁত পাতা কাটার পর ফেলে দিতাম।”

২০২২ সাল থেকে স্থানীয় সরকার পিং আন অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী ওয়ার্কশপ গঠন করে এবং স্থানীয় গ্রামবাসীদেরকে রেশম পোকা লালনের জন্য প্রযুক্তিগত নির্দেশনা দিতে রেশম পোকা লালনকারী কৃষি সমবায়ে আমন্ত্রণ জানায়। স্থানীয় সরকার পিং আন হু গ্রামের সম্মিলিত সম্পত্তি নিয়ে আশেপাশের ৬টি গ্রাম ও ৫০টিরও বেশি পরিবারকে শেয়ারহোল্ডার হিসাবে যুক্ত করে রেশম পোকা প্রজনন করতে শুরু করে।

ছিয়ান টুন গ্রামের ছিয়াও তান ২০২২ সালে পিং আন অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণকারী প্রথম দলের কৃষকদের একজন। ছিয়াও তান ৯০ দশকে জন্মগ্রহণ করেন। রেশম পোকা লালন নিয়ে তিনি পরিস্কারভাবে হিসাব করে বলেন, প্রতি বছর ৩ মাসের বেশি সময় রেশম পোকা লালন করা যায়। এরই মধ্যে ৪ থেকে ৫ ব্যাচ রেশম পোকা প্রজনন সম্ভব হয়েছে। সমবায় প্রতি কেজি ৪০ ইউয়ান দামে রেশম কীট কোকুন ক্রয় করে। এটি থেকে ২০ হাজার ইউয়ান উপার্জন করা সম্ভব হয়।

আগে সিয়া চিন জেলার নানা গ্রামের অধিকাংশ তরুণ পুরুষ শ্রম দিতে অন্য অঞ্চলে যেতেন। নারীরা গ্রামে অবস্থান করে প্রবীণ ও শিশুদের দেখাশোনা করতেন। এ প্রেক্ষাপটে সিয়া চিন জেলার বেশ কয়েকটি কাউন্টি হস্তশিল্পকেন্দ্রিক অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী ওয়ার্কশপ গঠন করে।


সিয়া চিন জেলার তোং লি কুয়ান চুন উপজেলার তুয়ান চুয়াং গ্রামে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) কমিটির উদ্যানে প্রবেশ করলে দেখা যায় ‘চাই সি তাই’ নামের অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী কারখানায় শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন গ্রামবাসীরা।

গ্রামের অধিবাসী ইয়ু ওয়েই ওয়েই বলেন, “আগে যে কাজ করতাম, সেটি করে বেশি উপার্জন করতে চাইলে কোনও অবসর থাকতো না। একটু অবসর নিতে চাইলে বেশি উপার্জন করতে পারতাম না। বর্তমানে এখানে কাজ করে পরিবারকে দেখাশোনা ও বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।”

ইয়ু ওয়েই ওয়েই ২০২২ সালের মে মাসে তুয়ান চুয়াং গ্রামে অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। প্রতি মাসে তিনি কয়েক হাজার ইউয়ান উপার্জন করতে পারেন। হাতে পয়সা থাকার ফলে তিনি সবসময় পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো খাবার কিনতে পারেন এবং নতুন সেমিস্টারে শিশুদের শখ মেটানোর চিন্তা করছেন।

সিয়া চিন জেলার স্থায়ী সদস্য ও সংগঠনমন্ত্রী লিউ সুয়ে উ জানান, গ্রামে কিছু উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম শুরু করতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দির্কনির্দেশনা দেওয়ার মাধ্যমে পেপার কাটিং, হাতে তৈরি সিল্ক ফুলসহ নানা ধরনের ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলে জনশ্রম ও স্বল্প উপার্জনকারী কৃষকদের বাড়ির পাশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নিয়োগের খরচ কমানোর পাশাপাশি গ্রামীণ শিল্পের কার্যকারিতা ও মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।

বর্তমানে সিয়া চিন জেলায় ৬৮টি উৎপাদন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ৩৭টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গ্রামে অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে গ্রাম কতৃপক্ষের পক্ষে বার্ষিক ২১ লাখ ইউয়ানের বেশি আয় এবং ২ হাজার ৪শ’ জনেরও বেশি গ্রামবাসীর পক্ষে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউয়ান উপার্জন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।

সিয়া চিন জেলার সিপিসি’র সম্পাদক শা শু হোং বলেন, “অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনকারী ওয়ার্কশপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান, নাগরিক, গ্রাম প্রশাসন ও গ্রামকে যুক্ত করা হয়েছে। সবাই নিজ নিজ সম্পদ কাজে লাগিয়ে সুবিধা বাড়াতে পেরেছে, যার মাধ্যমে ‘প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সমষ্টিগত সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।”