গণস্বাস্থ্য রক্ষার প্রহরী চিকিত্সক খাং মিন
2023-09-08 14:16:07

মিডল ইস্ট রেসপেরেটরি সিনড্রোম (MERS), কোভিড-১৯ বা জিকা ভাইরাস যাই হোক না কেন – প্রতিটি আকস্মিক প্রাদুর্ভাবেই সহকর্মীদের মধ্য থেকে খাং মিন প্রথম ছুটে যান সেটা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে। এ সময় তিনি প্রায়ই বলেন, “কিছুই হবে না। আমাকে দেন।” তার এ কথায় অনেকের মনের চাঞ্চল্য ও উদ্বেগ দূর হয়।

খাং মিন চীনের কুয়াং তোং প্রদেশের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রকোপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক। তিনি ১৮ বছর ধরে গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। কুয়াং তোং প্রদেশের ২১টি অঞ্চলে তিনি পা রেখেছেন। বারবার আকস্মিক প্রকোপের সম্মুখীন হন তিনি। তিনি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করেন, যাতে প্রকোপের বিস্তার রোধ হয়। খাং মিন বলেন, “এ সব গণস্বাস্থ্যের জন্য করছি। এটি গণস্বাস্থ্য চিকিত্সকদের অনুপ্রেরণা ও চালিকাশক্তি।”

২০২০ সালের জানুয়ারিতে কুয়াং তোং প্রদেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। ওই সময় অন্য প্রদেশ থেকে সবে ফিরেছেন খাং মিন। তবে তিনি একটি সেকেন্ডও নষ্ট না করে গভীর রাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে রোগীর ট্রেস নিয়ে গবেষণা করেন খাং মিন। তার সহকর্মী চুয়াং ইয়া লি বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেক রোগী নিয়ে পরিস্কারভাবে অনুসন্ধান করার জন্য তিনি সবসময় আমাদের নিয়ে তত্ক্ষণিকভাবে প্রকোপ-কবলিত অঞ্চলে ছুটে যান। ভাইরাসের সঙ্গে দৌড়ে জিততে চান তিনি।”

এটি করোনার সঙ্গে খাং মিন’র প্রথম লড়াই নয়। ২০১৫ সালে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (MERS) বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের মে মাসের এক রাতে একজন বিদেশি এমইআরএস রোগীর হংকং হয়ে কুয়াং তোং প্রদেশে প্রবশের খবর পাওয়া যায়। এ খবর জেনে খাং মিন ও তার সহকর্মীরা তত্ক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

দুই ঘন্টার মধ্যে তারা সে লোককে খুঁজে বের করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিরোধকমূলক ব্যবস্থা নিয়ে তাকে নির্দিষ্ট হাস্পাতালে স্থানান্তর করেন খাং মিন। তিনিই চীনের প্রথম এমইআরএস রোগী বলে সনাক্ত হন। দ্রুততার সঙ্গে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে স্থানীয় হাসপাতালে কোনো লোক আক্রান্ত হয় না। কমিউনিটিতেও রোগ ছড়ায় না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির ব্যাপক প্রশংসা করে।

যারা খাং মিনকে চেনেন, তারা সব সময় বলেন যে, খাং মিনের আছে এক ধরনের শক্তি। সে শক্তি হলো কাজ নিয়ে বলিষ্ঠতা। প্রকোপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কাজে বিশ্রামের সময়ও নেন না তিনি।

কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সময় খাং মিন টানা ৯০০ দিন রাত-দিন তার দল নিয়ে মহামারির ওপর গবেষণা করেন এবং অনুসন্ধান চালান।

২০২২ সালে তিনি হংকংয়ে সাহায্যকারী বিশেষজ্ঞ দলের নেতা হিসাবে হংকংয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে যান। হংকংয়ে কাজ করার ৫০ দিনে তিনি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যদের নিয়ে ১৯টি প্রকোপ এলাকা পরিদর্শন করেন, ৬০টি থিম কর্মসভায় যোগ দেন এবং ৩৬টি বিশেষ প্রতিবেদন লেখেন, যা হংকংয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কাজের জন্য সর্বশেষ তথ্য ও পেশাগত অভিমত প্রদান করে।

কোভিড-১৯ মহামারি ব্যবস্থাপনাকে ‘বি’ শ্রেণীতে নামিয়ে আনার পর বর্তমানে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার গণস্বাস্থ্য তত্ত্বাবধান কাজ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এসেছে। এ সময় খাং মিন ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর মনোযোগ দিচ্ছেন। তিনি তৃণমূল পর্যায়ের গণস্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবারের পর পরিবার ঘুরে দেখেন। ডেঙ্গু উত্পত্তিস্থান খোঁজার পাশাপাশি কমিউনিটিতে মশার ট্যাবলেট বিতরণ এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রচারণামূলক কাজে সাহায্য করেন।

খাং মিন বলেন, প্রত্যেক গণস্বাস্থ্য চিকিৎসক একেক জন ওয়াচটাওয়ারের প্রহরীর মতো। সব সময় তাকে সতর্ক থাকতে হয়, যাতে নানা জরুরি ব্যবস্থাপনা করা যায়।