গতকাল (বুধবার) ২০২৩ চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্যমেলা বা সিফটিস বেইজিংয়ে শেষ হয়। ৮৩টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ১৫৫ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর আয়োজিত ৫ দিনের এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার মানুষ মেলা দেখতে আসে এবং মেলা থেকে ১ হাজার ১শ’টি ফল অর্জিত হয়। বৈশিষ্ট্যময় পণ্যের প্রদর্শনী, প্রদর্শনী ভবনের ভিড় এবং লক্ষ্যণীয় বিনিময়ের উপাত্তের মধ্য দিয়ে চীনা অর্থনীতির প্রতি আস্থা প্রতিফলিত হয়। যারা চীনের অর্থনীতি নিয়ে খারাপ কথা বলে, তাদেরকে ভাল শিক্ষা দিয়েছে এসব সাফল্য।
এবার সিফসিটের হোস্ট দেশ ছিল যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের ৬০টি কোম্পানি ও সংস্থা নিয়ে গঠিত গত ৪ বছরের মধ্যে বৃহত্তম প্রতিনিধিদল মেলায় অংশগ্রহণ করে। বৃটিশ প্রতিনিধিরা কথিত ‘অর্থনীতি বিছিন্নতা’র কথা অস্বীকার করেন। মার্কিন কোম্পানিগুলোও সক্রিয়ভাবে মেলায় অংশগ্রহণ করে। কোয়ালকম ও ইন্টেলসহ বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি ও সল্যুশন প্রকল্প নিয়ে আসে দেশটি।
বিদেশি তথ্যমাধ্যমের মতে, পাশ্চাত্যের কোনও কোনও দেশ চীনের ওপর আস্থার অভাবের কথা বলে কারণ তারা নিজ দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখতে পায় না; তারা লক্ষ্য ও আস্থা হারিয়েছে এবং চীনের কাছ থেকে কিছুটা ‘সান্ত্বনা’ পেতে চায়। তবে চীনের অর্থনীতি নিয়ে খারাপ কথা বললেও তারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এবারের মেলা থেকে ‘চীনের আস্থা’র তথ্য সঠিকভাবে বিবেচনা করে তাদের অভিন্ন উন্নয়নের সুযোগ খোঁজা উচিত।
এবারের সিফটিসে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০ শতাংশ আন্তর্জাতিক কোম্পানি। বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ কোম্পানির অনেকগুলো, নানা ক্ষেত্রের প্রধান কোম্পানি এবং পরিষেবা শিল্পের শীর্ষ ৩০টি দেশের মধ্যে ২৮টি এ মেলায় অংশ নেয়। এতে প্রতিফলিত হয় যে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো চীনা বাজারকে বেশ গুরুত্ব দেয়।
বর্তমানে চীনে পণ্যভোগ ও পরিষেবাভোগ সমান গুরুত্বপূর্ণ হবার ধারা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে পরিবহন, খাদ্য ও আবাসন ব্যবস্থাসহ পরিষেবা খাতে খুচরা বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এবারের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ৫০ কোটিরও বেশি দশর্ক চলচ্চিত্র দেখতে সিনেমা হলে যায়। বহুজাতিক কোম্পানির জন্য যেখানে বাজার আছে, সেখানে আছে সুযোগও। পাশাপাশি চীন উন্মুক্তকরণ প্রসারিত করতে বিদেশি ব্যবসায়ীদের আরও বেশি আস্থা অর্জন করেছে; নির্মাণশিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করেছে এবং পরিষেবা শিল্পে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রবেশগম্যতা ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করছে। এবার সিফটিসে চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন, আইন ও পেশাদার পরীক্ষাসহ নানা ক্ষেত্র বিশ্বের কাছে আরও উন্মুক্ত করা হবে।
কোয়ালকম কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন বলেন, চীন উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে স্পষ্ট ভাল খবর বেরিয়েছে বলে চীনা বাজারের ওপর তার কোম্পানির আস্থা বেড়েছে। পাশাপাশি ভ্যালু চেইনের উচ্চ প্রান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। এবার মেলায় ৬৬টি কোম্পানি প্রথম বারের মতো এআই, অর্থ-প্রযুক্তি, চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতিক উদ্ভাবনসহ নানা ক্ষেত্রের ১২৫টি নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য প্রকাশ করে।
পরিষেবা ব্যবসা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন চালিকাশক্তি এবং চীনা অর্থনীতি সমস্যা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা এবং জীবনীশক্তির সাক্ষী। চলতি বছর বিশ্বব্যাংক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চীনের অর্থনীতির জন্য যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছে। বিশ্লেষকের মতে, ভবিষ্যতেও চীন বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে থাকবে।
অন্যদের খারাপ কথা বলা নিজেদের ভাল করা যায় না। চীনের টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন হলে বিশ্ব আরও সমৃদ্ধ হবে। যারা দরজা বন্ধ করে চীনের সমালোচনা করে, তাদের উচিত চোখ খুলে চীনের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কেমন তা একটু দেখা। (শিশির/রহমান/রুবি)