আকাশ ছুঁতে চাই ৩৪
2023-09-07 10:00:06

যা আছে এবারের পর্বে


১. চীনের ছোট্ট গ্রামের ফুটবলার মেয়েরা

২. স্বাবলম্বী নারীর গল্প

৩. প্রবীণবান্ধব অ্যাপার্টমেন্ট

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

চীনের ছোট্ট গ্রামের ফুটবলার মেয়েরা

 

ফুটবল বা সকার খেলাকে এশিয়ার অনেক দেশেই অতীতে ছেলেদের খেলা বলে মনে করা হতো। তবে এখন দিন পাল্টেছে। এখন নারীরাও এগিয়ে এসেছেন এবং ফুটবল খেলায় বড় সাফল্য অর্জন করছেন। চীনের এক পাহাড়ি গ্রামের একিদল কিশোরী কিভাবে ফুটবল খেলা চর্চা করে এলাকায় নিজেদের তারকা ইমেজ গড়ে তুলেছে চলুন শুনি সেই গল্প।

 

শাংতোং প্রদেশের এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। সেই গ্রামে একদল কিশোরী মেয়ে ফুটবল খেলতে দারুণ ভালোবাসে। তারা গড়ে তুলেছে এক ফুটবল টিম। আশপাশের গ্রামের কিশোর কিশোরীরা তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং এখন এই খেলায় এগিয়ে আসছে অনেক মেয়ে।

ফুটবল খেলাকে সাধারণত ছেলেদের খেলা হিসেবে ভাবা হতো অতীতে। কিন্তু এখন দিন পালটে গেছে। ইইয়ুয়ান কাউন্টির ইয়ুয়েচুয়াং টাউনশিপের চাওচুয়াং গ্রাম।  চাওচুয়াং প্রাইমারি স্কুলে ২০১৯ সালে  একটি ফুটবল বা সকার প্রোগ্রাম নেয়া হয়। এই প্রোগ্রামে ২০জন মেয়েকে নির্বাচন করা হয় এবং তাদের নিয়ে ফুটবল টিম গঠন করা হয়। সপ্তাহে পাঁচদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের প্রশিক্ষণ চলে। প্রত্যেক বছর তাদের অন্তত ২০টি ম্যাচ খেলতে হয়।

বছরখানেক প্রশিক্ষণের পর মেয়েরা বুঝতে পারে যে ফুটবল কোন সহজ খেলা নয়। এই খেলায় সফল হতে হলে চাই টিম ওয়ার্ক। তারা তাদের প্রশিক্ষণে আরও মনোযোগী হয়। কিন্তু তাদের গ্রামে ফুটবল খেলার উন্নতমানের মাঠ ছিল না। তারা সাধারণ ঘেসো মাঠে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে।

তাদের কঠোর শ্রম বৃথা যায়নি। ইয়ুয়েচুয়াং টাউন প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে তাদের দল চ্যাম্পিয়ন হয়। কয়েক বছর ধরেই এই টুর্নামেন্টে এই স্কুলের টিম শিরোপা জিতে নিচ্ছে।

প্রথম দলের মেয়েরা এখন বড় হয়েছে। তারা এখনও ফুটবল খেলায় মনোযোগী। তারা তাদের এলাকায় রীতিমতো স্টার।

তাদের দেখে ওই এলাকার অন্য স্কুলের মেয়েরা তো বটেই ছেলেরাও অনুপ্রাণিত হয়েছে। বলতে গেলে ফুটবল খেলাকে জনপ্রিয় করেছে এবং মেয়েদের ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে এই কিশোরী ফুটবলাররা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

স্বাবলম্বী নারীর গল্প

স্বল্প বিনিয়োগ ও অল্প সময়ে ব্রয়লার মুরগি পালন করে সাবলম্বী হচ্ছেন বাংলাদেশের অনেক নারী।পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম এই মুরগি পালন। সহজ ব্যবস্থাপনা ও ভালো বাজার দরের কারণে ব্রয়লয়ার মুরগি পালন বিভিন্ন জেলার নারীদের পছন্দের পেশায় পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পরিবারের মাংসের চাহিদা পুরণ হচ্ছে অন্যদিকে বাড়তি আয়ের উৎস বলেও মনে করছেন তারা। এই পর্যায়ে থাকছে এমন সাবলম্বী দুইজন নারীর গল্প।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা নরসিংদীর প্রান্তিক খামারী খাদিজা আক্তার। স্বাবলম্বী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ২০০৮ সাল ছোট্ট পরিসরে শুরু করেন মুরগির খামার করার কাজ। সেই থেকে তার সময় কাটে এই খামারে।

 খাদিজা আক্তার, নারী উদ্যোক্তা

 

বেলাব উপজেলার তেতুলতলা গ্রামের এই নারীর নিত্যদিনের কাজের অংশ হয়ে গেছে মুরগিকে খাওয়ানো, মুরগির যত্ন নেওয়া। অল্প পুঁজি, ছোট ছোট পদক্ষেপ আর পরিশ্রমে এখন এখন দুইটি খামারের মালিক তিনি।

নারী উদ্যোক্তা খাদিজা আক্তার জানান, “সাবলম্বী হওয়ার চিন্তা থেকেই ২০০৮ সালে খামার দেই। যখন লাভ হতে থাকে তখন এখান থেকে লাভের টাকা দিয়ে সংসারের খরচের পাশাপাশি আরেকটা ফার্ম দেই”। 

দীর্ঘদিনের এই মুরগি পালনে খাদিজাকে পড়তে হয়েছে বেশকিছু সমস্যায়। তবে তার কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে চীনের শীর্ষ কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ।  প্রশিক্ষণ ও মুরগির মান সম্মত খাবারের যোগান খাদিজার চিন্তার ভাজ দূর করেছে। এখন তিনি জানেন মুরগি পালনের খুঁটিনাটি।

খাদিজা জানান, “ প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে মুরগি পালনে নানা ধরণের ঝামেলার মধ্যদিয়ে যেতে হতো। দেখা যেত মুরগি প্রায়ই অসুস্থ হতো, মুরগির ওজন বেশি আসতো। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এখন সমস্যা কেটে গেছে। এছাড়া হঠাত মুরগি অসুস্থ হলেও প্রশিক্ষকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাদের পরামর্শ নিয়ে থাকি। তারা খুব সহযোগিতা করে”।

আর্থিক অস্বচ্ছলতাকে বিদায় জানানোর যে লক্ষ্য নিয়ে খাদিজার এই খামার শুরু, সেই লক্ষ্যে আজ তিনি পৌছেছেন। খামার থেকে যে টাকা আয় করেন তাই দিয়ে চলছে তার সংসারের খরচ।

 খাদিজা বলেন, “ এই ফার্ম দেওয়ার আগে আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। টাকা ইনকাম করতে পারতাম না। ছেলে মেয়ের পড়ালেখা করাতে পারছিলাম না। এখন এই পোল্ট্রি ফার্ম থেকে যে টাকা আসে তাই দিয়ে সংসার চলছে। ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চলছে। আগের থেকে এখন আমরা অনেক স্বচ্ছল”। 

শুধু খাদিজা নয়, এই সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই এলাকায় তৈরি হয়েছে আরও নারী উদ্যোক্তা।  বিশেষ করে মহামারি করোনার সময় তিন লাখ টাকা দিয়ে শুরু করেন মুরগি পালন। মাত্র তিন বছরে এরই মধ্যে করেছেন আরেকটি খামার। তার এই তিন বছরের নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পেও সহযোগিতা করেছে চীনা প্রতিষ্ঠানের নিউ হোপের প্রশিক্ষণ।

 পারুল আক্তার, নারী উদ্যোক্তা

সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি তেতুলতলার প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরা এখন অনেকের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছেন।

পারুল আক্তার বলেন, “প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আমাদের চারপাশের নারীরাও অনেক উদ্যোগী হয়েছে খামার করতে। তারাও স্বাবলম্বী হতে চায়। তারা চায় তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে। আমরাও তাদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করি”।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুই নারী উদ্যোক্তার মতো অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে আরও বহু নারী উৎসাহিত হচ্ছেন, এগিয়ে আসছেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যয়ে। পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম তাদের এই মুরগি পালন। সহজ ব্যাবস্থাপনা ও ভালো বাজার দরের কারণে ব্রয়লয়ার মুরগি পালন বিভিন্ন জেলার নারীদের পছন্দের পেশায় পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পরিবারের মাংসের চাহিদা পুরণ হচ্ছে অন্যদিকে বাড়তি আয়ের উৎস বলেও মনে করছেন তারা। 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- সাজিদ রাজু

 

 

প্রবীণবান্ধব অ্যাপার্টমেন্ট

চীনে প্রবীণ নাগরিকরা সমাজে শ্রদ্ধা, সম্মান ও যত্ন পেয়ে থাকেন। তাদের জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধা দিনে দিনে বাড়ছে। সম্প্রতি শানতোং প্রদেশে বেশ কিছু প্রবীণ বান্ধব অ্যাপার্টমেন্টও গড়ে উঠেছে।

প্রবীণ নারীরা তৈরি করছেন কারুশিল্পের সামগ্রী। কাপড়ের ফুল তৈরি করছেন তারা। নিতান্ত শখের বশে সুন্দরভাবে সময় কাটাতে কাজটি করছেন এই প্রবীণ নারীর দল। তাদের অ্যাপার্টমেন্টে বসে এটা তারা করছেন। তাদের সাহায্য করছেন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।

শুধু কারুশিল্প সামগ্রী তৈরিই নয়, কেউ বাজাচ্ছেন পিয়ানো, কেউ বা জানালার পাশে বসে সময় কাটাচ্ছেন কারও বা জন্মদিন পালিত হচ্ছে। জীবনের বৃদ্ধ বয়সটা যেন তাদের কাছে বোঝা না হয়ে আনন্দের হয়ে ওঠে। 

এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে চীনের শানতোং প্রদেশের বিনচোও শহরের চানহুয়া জেলার অ্যিাপার্টমেন্ট কমিউনিটিতে। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে প্রবীন বানস্ধব অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স।

 এই কমিউনিটিতে চিকিৎসা সেবা পুনর্বাসন ও নার্সিং দেয়া হয়। প্রবীণ দম্পতি অথবা যারা একা তাদের জন্য এখানে বিশেষভাবে প্রস্তুত কিবছু প্রবীণবান্ধব অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

 এনজয় দ্য গোল্ডেন এজ বা সোনালী বয়সকে উপভোগ করা শীর্ষক এই প্রকল্পে প্রবীণদের শেষ জীবনকে আনন্দময় করে তোলার সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে।

এমন আরও অনেক কমিউনিটি রয়েছে চীনে যেখানে প্রবীণ নারী-পুরুষরা তাদের বৃদ্ধ বয়সে পাচ্ছেন সেবা, যত্ন, চিকিৎসা ও বিনোদন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আফরিন মিম, নাজমুল হক রাইয়ান

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল