থিয়েন চিনের হাই নদীতে ভ্রমণ
2023-09-07 09:46:21

সদ্যসমাপ্ত চীনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বা সামার ভ্যাকেশনে ভ্রমণ পরিস্থিতি কেমন ছিল? ছুটির সময় সন্তানদেরকে নিয়ে মাতৃভূমির সুন্দর নদী ও পাহাড় দর্শন অনেকের কাছে ‘সেরা পছন্দের বিষয়’ হয়ে উঠেছে বর্তমানে। আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে শ্রোতাবন্ধুদের নিয়ে আমি চীনের থিয়েন চিন শহরে ঘুরে বেড়াবো।

হাই নদী থিয়েন চিনের মাতৃনদী। থিয়েন চিন শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদী ৬ শ’ বছরেরও বেশি সময়ের উন্নয়নের স্বাক্ষী। রাতে জাহাজে চড়ে হাই নদী ভ্রমণ করলে চোখে পড়ে দু’পারের চোখ ধাঁধানো আলোর প্রদর্শনী। হাই নদীতে চলাচলকারী প্রমোদতরী হলো চলতি বছরে থিয়েন চিন শহরের নতুন পর্যটন প্রকল্প। এই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ভ্রমণের চাহিদা বেড়েছে এবং পর্যটকদের সংখ্যা অনুপাতে প্রমোদ তরীর সংখ্যাও বেড়েছে।

ক্রসটক, ব্যান্ড সঙ্গীত পরিবেশনা, লোকসঙ্গীত, ফ্যাশন শো ও লোকজ ফুল প্রদর্শনসহ নানা থিমযুক্ত কার্যক্রম দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণ করছে। হাই নদীতে প্রমোদতরীর ‘ভ্রাম্যমান মঞ্চ’ পর্যটকদের আনন্দ উপভোগে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চলতি বছর প্রমোদতরীর পর্যটকদের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সেখানকার প্রমোদতরী জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি দু’তীরের ব্যবসাও আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে।

রেনাতো পেগোরারো একটি খাঁটি ইতালীয় রেস্টুরেন্টের মালিক। তিনি বলেন, “এই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমার ব্যবসা অনেক ভালো হয়েছে। অনেকে হাই নদী ভ্রমণের পর আমার দোকানে সুস্বাদু ইতালীয় খাবার উপভোগ করেন। ইতালীয় সুস্বাদু খাবারের সংস্কৃতি আরও বেশি চীনা বন্ধুকে জানানোর সুযোগ পেয়ে আমি খুব আনন্দিত।”

চলতি বছরের জুন মাসে শুরু হওয়া তৃতীয় হাই নদীর আন্তর্জাতিক উপভোগ মৌসুম হাজার হাজার ব্যবসা, সংস্কৃতি ও পর্যটন উদ্যোগকে আকৃষ্ট করে। তিন মাসের মধ্যে ৫ শতাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শত বছর আগে থেকে হাই নদী থিয়েন চিনের আইকনিক ‘অর্থনৈতিক জীবনরেখা’। দু’তীরের পাশে কারখানা, চিমনি, ঘাঁটি ও মালবাহী স্টেশনগুলো আধুনিক থিয়েন চিনের শিল্প বিকাশ এবং উত্তর চীনের বৃহত্তম শৈল্পিক ও বাণিজ্যিক শহর গঠনকে উত্সাহিত করেছিল।

নতুন শতাব্দীতে প্রবেশ করে থিয়েন চিন কর্তৃপক্ষ হাই নদীর উভয় তীরে ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প শুরু করে। শহরের শিল্প পূর্বে প্রসারিত হয়েছে এবং পুরনো উদ্যোগগুলোকে স্থানান্তরিত ও সংস্কার করা হয়েছে। অনেক পুরনো কারখানা ভবন সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল শিল্প পার্ক, ভোক্তাপণ্য ব্যবসার স্থান ও নকশার শহরে রূপান্তরিত হয়েছে এবং নতুন প্রাণশক্তিতে জেগে উঠেছে।

হাই নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এক গুচ্ছ বিশিষ্ট্য ভবন। এখানকার লালচে-বাদামী অ্যান্টিক বিল্ডিংটিতে গড়ে উঠেছে আধুনিক সূক্ষ্ম সব দোকান। এটি থিয়েন চিন তৃতীয় তুলার কল সৃজনশীল ব্লক। আগে এই জায়গা ছিলো থিয়েন চিনের তৃতীয় তুলার কল। এ কারখানার শত শত বছরের ইতিহাস রয়েছে। পুরানো কারখানা এখন আধুনিক সৃজনশীল ব্লকে পরিণত হয়েছে।

হাই নদীর ভূদৃশ্য ক্রমাগত প্রসারিত হয়েছে। নিম্ন অববাহিকায় নানা বৈশিষ্ট্যময় পার্ক ও উদ্যান শহরের প্রাণবন্ত শক্তি প্রকাশের নতুন উপাদান হয়ে উঠেছে। পার্কে একদল শিশু আনন্দের সঙ্গে বালি ও পাথরের দুর্গ গড়ে তুলছে এবং পর্যটকরা যারা সমুদ্র থেকে শেলফিশ তুলেছেন তারা সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে আসছেন।