‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. উৎপাদন শিল্পের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে চাকরিপ্রার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরোনো চীনের নতুন স্নাতকরা ক্রমবিকাশমান বুদ্ধিমান উত্পাদন শিল্পের প্রতি আগের চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
স্নাতকদের কর্মসংস্থান বিষয়ে অনলাইন নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম liepin.com প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর স্নাতকদের প্রত্যাশিত চাকরির ৮ দশমিক ১ শতাংশই ছিল বুদ্ধিমান উৎপাদন শিল্পে। চৌদ্দটি প্রধান শিল্পখাতের মধ্যে বুদ্ধিমান উৎপাদন শিল্পে চাকরির চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, যে ১০টি শিল্পে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন জমা দেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্মার্ট উৎপাদন, এআই-জেনারেটেড কন্টেন্ট এবং বড় আকারের এআই মডেল। এ ৩টি শিল্পে আবেদন বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩০৩ দশমিক ১২ শতাংশ, ২৯৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং ২৩৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের শেনচেন শহরে অবস্থিত একটি বুদ্ধিমান উত্পাদন প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি তাদের নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য ৯শ নতুন স্নাতককে তালিকাভুক্ত করেছে। এই ইভেন্টের আগে কলেজ তালিকাভুক্তি প্রোগ্রামের মাধ্যমে আরও ১ হাজার ৯শ স্নাতক বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। এদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই বুদ্ধিমান উৎপাদন-সম্পর্কিত চাকরিতে যোগ দেন।
টিসিএল টেকনোলোজি কোম্পানির ভাইস-প্রেসিডেন্ট উ লান বলেন,
“চলতি বছরে এ পর্যন্ত স্মার্ট উৎপাদন খাতে চাকরির জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জমা দেওয়া আবেদনের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়ে ৪৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যা ও অনুপাত উভয় বিচারে বুদ্ধিমান উৎপাদনের জন্য আমাদের মানবসম্পদ ক্রমাগত বাড়ছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত আমরা ২ হাজার ৮শ জনেরও বেশি স্নাতককে নিয়োগ করেছি।”
স্থানীয় ভোকেশনাল টেকনিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে বেরোনো যুবক লিয়াং চিয়ানহাং এক মাস আগে পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের একটি স্মার্ট কারখানায় যোগ দেন। উত্পাদন শিল্পের কাজ সম্পর্কে তার যে ধারণা ছিল, তা একেবারে ভেঙ্গে যায় এ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর। তিনি এখানে কাজ করেন ‘ব্যর্থতা বিশ্লেষণ পরীক্ষাগারে’ যেটির উদ্দেশ্য হলো পণ্যের গুণমান ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানো।
“উৎপাদন শিল্পে কাজে যোগ দেওয়ার আগে আমি ভেবেছিলাম এটা ছিল গতানুগতিক উৎপাদন লাইনের কাজ। কিন্তু আমি যখন এখানে ঢুকি, তখন বুঝতে পারি আমি যা ভেবেছিলাম সেরকম কিছুই না এখানে। একটি উৎপাদন লাইনের যন্ত্রপাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই কেবল কয়েকজন মানুষের প্রয়োজন হয়৷ পরে আমাকে ‘ব্যর্থতা বিশ্লেষণ পরীক্ষাগারে’ দায়িত্ব দেওয়া হয়।”
চীনের উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের অধীন আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক শি খুন বলেন,
“চীনের সকল স্তরের প্রশাসন উন্নত উত্পাদন প্রযুক্তিসম্বলিত কৌশলগত উদীয়মান শিল্পগুলোর বিকাশকে সমর্থন করছে৷ এই ব্যাপক ও অত্যাধুনিক শিল্পগুলো আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। শিল্পগুলোতে স্নাতকদের চাহিদা আগের চেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় হচ্ছে৷ ভবিষ্যতে স্নাতকদের জন্য এটা আরও আকর্ষণীয় হবে।”
ভবিষ্যতে যেসব স্নাতক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের মতো উদীয়মান শিল্পে যোগ দেবেন তাদের জন্য আরও বিস্তৃত উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদকঃ শিহাবুর রহমান
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. বিদেশি যুবকদের চীনের বিভিন্ন শহর পরিদর্শন ও শিক্ষা বিনিময়
সম্প্রতি চীনের বেইজিং, শেনচেন ও ছেংতুসহ বিভিন্ন শহর পরিদর্শন করেছে বিদেশি তরুণ-তরুণীদের কয়েকটি গ্রুপ। এসময় চীনা তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সভ্যতা-সম্পর্কিত শিক্ষা বিনিময় হয় তাদের। চীনের আধুনিকায়নে বিদেশি তরুণ-তরুণীরা অবাক হয়েছেন, উৎসাহ পেয়েছেন এবং অভিজ্ঞতার ঝুড়ি নিয়ে নিজ দেশে ফিরেছেন বলে জানান অংশগ্রহণকারীরা।
ত্রিশটিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা ৬০ জনের বেশি তরুণ-তরুণী রাজধানী বেইজিং, শেনচেন ও ছেংতুর মতো চীনা শহরগুলো পরিদর্শন করে। এসময় উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও শিক্ষায় চীনা তরুণদের সঙ্গে গভীর বিনিময় হয় তাদের। সভ্যতার বিকাশে গভীর জ্ঞানের আদান-প্রদান হয়।
গেল মাসে এই সফরের আয়োজন করে চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়। আয়োজকরা জানান, তরুণদের চিন্তার আদান-প্রদান, একে অপরের কাছ থেকে শেখা এবং বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এই সফরের লক্ষ্য।
সফরকারী গ্রুপগুলোর অনেক সদস্য চীনা আধুনিকায়নে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে বলে জানান হাঙ্গেরি থেকে আসা এক তরুণ অংশগ্রহণকারী।
"চীন সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পেতে এই সফরটি আমার জন্য সত্যিই সহায়ক ছিল। আমি চীনে যেসব প্রযুক্তি দেখেছি, তাতে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। এটি কতটা উন্নত, তা না দেখলে বুঝা কঠিন। এখানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এতোটাই, যে ইউরোপেও এমন অনেক কিছু দেখা যায় না।
উন্নয়নশীল দেশগুলো বিশ্ব পরিমণ্ডলে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন ভারতের এক শিক্ষার্থী।
"আমি মনে করি, গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্ব নেওয়ার এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে আওয়াজ তোলার একটি দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে চীন ও ভারতের।
অভিন্ন অগ্রগতির জন্য বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের যুবকদের আরও সুযোগ থাকবে, এমনটিই প্রত্যাশা পর্যটক তরুণদের।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
৩. বিদেশী অধ্যয়ন ট্যুর গ্রুপ চীনা সংস্কৃতিতে মুগ্ধ
সম্প্রতি একটি বিদেশি স্টাডি ট্যুর গ্রুপ বেইজিং ও সাংহাই ভ্রমণ করেছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে চা শিল্পের মতো ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে ভ্রমণে আসা শিক্ষার্থীরা।
বেইজিং ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার ইউনিভার্সিটির উথং বুকস্টোরে, কীভাবে চা তৈরি করা হয়, কিভাবে চা পাতার পার্থক্য করা যায় এবং স্বাদ কেমন তা সরাসরি উপভোগ করেন এবং শেখে একটি ইতালীয় স্টাডি ট্যুর গ্রুপ।
শুধু তাই নয়, বেইজিংয়ে চীনা ওষুধ, কাগজ কাটা, চিত্রকলা এবং ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে শেখানো হয় তাদের। সাংহাইতে, তাদের মাঠ জরিপ কার্যক্রমে প্রাধান্য দেয়া হয়। সাংহাই স্থাপত্য শৈলী যা পশ্চিমা এবং চীনা উপাদানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত, সাংহাই মিউজিয়াম, অ্যাস্ট্রোনমি মিউজিয়াম এবং সাংহাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর পরিদর্শন করে স্টাডি ট্যুর গ্রুপ।
ঘুরতে এসে খুব আনন্দিত বলে জানান ইতালীয় গ্রুপের একজন শিক্ষার্থী রেন তিয়ানই।
"আমি চীনা চা পান করতে পছন্দ করি। এটি আমার প্রথম চীন সফর। আমি মনে করি, চীনা জনগণের সাথে মিশতে পারাটা আমার জন্য একটি ভালো সুযোগ এবং সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলো ঘুরে দেখারও সুযোগ পেয়েছি আমি। আমি সাংহাইয়েও ঘুরতে যাবো।
গ্রীষ্মের ছুটিতে ১০টিরও বেশি বিদেশী স্টাডি ট্যুর গ্রুপ এখানে ঘুরতে এসেছে বলে জানান চা শিল্পের প্রভাষক লি চান।
‘আগস্টে ৫-৬টি দেশ থেকে ২ শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী স্টাডি ট্যুরে আসে। তারা এখানে চাইনিজ পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি, বাদ্যযন্ত্র কুছিন বাজানো এবং ফুল সাজানোর চেষ্টা করে।‘
বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডি ট্যুর গ্রুপের জন্য চাইনিজ ভাষার কোর্সও চালু করা হয়েছে।
গ্রুপ ট্যুরের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষায় পড়াশোনা করেছে বা করছে। তাই ভাষা শেখার পাশাপাশি চীনা সংস্কৃতি নিয়ে তাদের আগ্রহ অনেক বেশি।
‘আমি চীনা ভাষা এবং সংস্কৃতি খুব পছন্দ করি। বেইজিং খুব সুন্দর। আমরা থিয়ানআনমেন স্কোয়ার, গ্রেট ওয়াল এবং হুথং ঘুরে দেখেছি।’
চীনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এবং বর্তমানে যা ঘটছে তার সাক্ষী হতে গ্রীষ্মের ছুটিতে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং মিশরসহ ১৫টি দেশ থেকে স্টাডি ট্যুরে চীন ঘুরতে আসেন শিক্ষার্থীরা।
আয়োজকরা জানান, চীন এবং অন্যান্য দেশের তরুণদের নিয়ে বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষা,সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দেয় এ ধরনের স্টাডি ট্যুর।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী