‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৩৪
2023-09-05 10:00:10


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। শরতে বর্ণিল চীন, বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা

২। ঘুরে আসুন স্বর্গীয় লেক থিয়ানচি  থেকে 

৩। পর্যটনে শীর্ষ চীনের ১০ কাউন্টি

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া 

একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ঘুরে বেড়াই।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩৪তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

১। শরতে বর্ণিল চীন, বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা

ঋতু পরিক্রমার চীনে এখন শরৎকাল। গ্রীষ্মের অগ্নিস্নান আর বর্ষায় অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের পর আসে শরতের আলোছায়ার খেলা; এই মেঘ, এই বৃষ্টি, তো কিছুক্ষণ পরই রোদের হাতছানি। তবে নেই বজ্রপাত ও মেঘের গর্জন। ভ্যাপসা গরমের বদলে বইছে মিষ্টি বাতাস।

শরতের শুরুতেই নানা রঙের ঢল নেমেছে চীন জুড়ে। বিভিন্ন স্থানে গাছের পাতার রঙিন আভা অপরুপ করে সাজিয়েছে প্রকৃতিকেও। পাহাড়-সাগর থেকে শুরু করে অরণ্য-নগর, সব জায়গায় চোখে পড়বে শরতের অনিন্দ্য সুন্দরের মেলা। বলা যায়, এ যেন রুপকথার রাজ্য।

শরতে শুরুতেই এই বর্ণিল আয়োজনের পসরা প্রকৃতি জুড়ে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চিলিন প্রদেশের ম্যাপল বনে নামে অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যের ফোয়ারা। হাতছানি দেয় ম্যাপলের লাল-হলুদ আর নানা রঙের বর্ণালী। শরতের গাছপালার প্রাণবন্ত রঙ মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদেরও। শরতে চীনের প্রকৃতির এই অসাধারণ পরিবর্তনকে উপভোগ করতে দেশটির বিভিন্ন স্থানে আনাগোনা বেড়েছে পর্যটকদের। 

উত্তর-পশ্চিম চীনের শানসি প্রদেশের জলপ্রপাত ভরে ওঠে এই মৌসুমে। কাঁদামাটি-জলে নামে পাহাড়ি ঢল। আর এখানেই তৈরি হয় বিশাল স্রোতের ধারা। সেখানে আলোর বিকিরণ তৈরি করে অসাধারণ দৃশ্যের।

 

এদিকে, তিব্বতের আকাশ ছোয়া পর্বতের বুকে নামে ভিন্ন এক সৌন্দর্য্য। কালো পাথরের ছোমোলাংমা পর্বত সাজে সাদা বরফের সম্মিলনে। উপরে শুভ্রমেঘমালার বিচরণ এনে দেয় অমোঘ আকর্ষণ।

সৌন্দর্য্য উপভোগে তাই শত ঝুকি আর জীবন নাশের আশঙ্কা তুচ্ছ করে ছোটে পর্যটক দল। হিমবাহের ঘন-অন্ধকারাচ্ছন্ন তুষার ভেদ করে এগিয়ে যায় সৌন্দর্য্যের নেশায়।

 

চীনের হাইনান প্রদেশের বিস্তৃত সমুদ্রের কোলে দেখা মিলবে সৌখিন নাবিকের। দ্বীপ-দ্বীপান্তর হয়ে ছুটে যাওয়া যায় গাংচিলের পথ ধরে। এসব দ্বীপেই আছে অবসর যাপনের সব উপকরণ। পর্যটকদের জন্য সাজিয়ে রাখা হোটেল-মোটেল আর রিসোর্টে থাকে নানা আয়োজন।

 

কেবল বন-বাদাড় বা পাহাড়-পর্বত-সমুদ্র নয়, শহরে ফিরলেও চোখে পড়বে পার্ক ও সড়ক দ্বীপে শরতের ছোয়া। সবুজে মোড়ানো শহুরে জীবনও তাই একঘেয়ে হয়না শরতের ছোয়ায়।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। ঘুরে আসুন স্বর্গীয় লেক থিয়ানচি  থেকে 

মরুভুমি, লেক ও পাহাড়ের মিশেলে চীনের অপরূপ সুন্দর প্রদেশ সিনচিয়াং। প্রতি বছরের জুন জুলাইয়ের সময় বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন এখানে। সিনচিয়াংয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সবুজ পাহাড়ে ঘেরা মনোরম লেক থিয়ান চি।  যার বাংলা অর্থ স্বর্গীয় লেক। পাহাড়ের বুক থেকে বেরিয়ে আসা লেক সেই সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এক কথায়, এটি একটি চোখ ধাঁধানো, মন ছুঁয়ে যাওয়া দৃশ্য।

যেখানে চারদিকজুড়ে শুধু বিশাল পাহাড় আর গাঢ় সবুজ গাছের হাতছানি। পাহাড়গুলো যেন আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আর গ্রীষ্মের আকাশে শরতের মেঘের খেলা। আকাশজোড়া পেজা তুলোর মত সাদা মেঘ আর পাহাড়ের ছায়া এসে মিশেছে কাচের মত স্বচ্ছ নীল পানিতে।

পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর লেকের একটি এই স্বর্গীয় হ্রদ বা থিয়ান চি লেক। থিয়ান শান পর্বতের বোগদা চূড়ার মুল উপত্যকায় অবস্থিত থিয়ানচি লেককে বলা হয়   "তিয়ানশান পর্বতমালার মুক্তা"। ৩.৫ কিমি দীর্ঘ এবং ০.৩৫  থেকে ১.৫ কিমি চওড়া এই লেকের গভীরতা ১০৫  মিটার। 

এখানে লেকের পাশেই আছে স্বর্গীয় রাণীর মন্দির। স্বর্গের রানী এই লেকে  গোসল করতে আসতেন । তাই এটিকে চীনারা একটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিশ্বাস করেন।

এখানে এসে তাদের প্রিয়জনের জন্য প্রার্থনা করেন। অনেকে  মনে করেন এখানে এসে প্রার্থনা করলে তা খুব দ্রুত পূরণ হবে। অনেকে লেকের ভিতরের একটি গাছে লাল ফিতাতে তাদের প্রিয়জনদের জন্য শুভকামনা লেখেন।

এই লেকের প্রতিচ্ছবি এতোই সুন্দর যে, এটা দেখতে অনেকটাই মেয়েদের আয়নার মতো দুর্দান্ত। পাহাড়ের চূড়ায় বরফের লেয়ারযুক্ত এবং সবুজে ঢাকা পাহাড়। সূর্যের আলো এবং আবহাওয়ার সাথে সাথে এই লেকের পানির রঙ পরিবর্তিত হয়। সকালের সূর্যোদয়ের সময় এর রঙ হয় তুষারশুভ্র।যখন দুপুরের সূর্য উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, তখন এই লেকের পানি নীল রঙ ধারন করে। সন্ধ্যা হলেই লেকটি  ধারন করে আরেকটি  মায়াবী রূপে।

 

মাঝে মাঝে  পাহাড়ের চূড়ায় বরফের আস্তরণ  সাদা ড্রাগনের মতো  দেখা যায়। তাই পর্যটকরা  এটিকে বেইলং বা  সাদা ড্রাগন উপত্যকাও বলে থাকেন। কেবল শীত ও বর্ষায় নয়, সারা বছরই বজায় থাকে এর সৌন্দর্য। প্রকৃতি এখানে নিজেকে সাজিয়েছে আপন রূপে।  পর্যটকরা এখানে বেড়াতে এসে মন খারাপ করে বাড়ি ফেরেন না। যারা চিরসবুজের ছোঁয়া পেতে চান, তাদের যেতে হবে পাহাড়ি জনপদে।

এই লেকে যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে প্রবেশ কেন্দ্র থেকে টিকেট কাটতে হবে তারপর শাটল বাস রাইড। পাহাড়ের বুক চিড়ে  চমত্কার দৃশ্যে উপভোগ করতে করতে মুহূর্তেই আপনার ৩০ মিনিট সময় কেটে যাবে। এরপর পায়ে হেটে চলার পথ। কাঠের  সিড়ি বেয়ে মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটলেই আপনি পৌছে যাবেন লেকের কাছে। আপনি হাটতে না চাইলে আছে বিকল্প ট্যাক্সি।

লেকের ভিতরে চলাচল করে বাহারি রঙের ছোট ছোট জাহাজ। আপনি চাইলে সে জাহাজে করেও উপভোগ করতে পারেন এর পরিপূর্ণ ছোঁয়া।  এছাড়া এই লেকের বিভিন্ন কোণ থেকে নির্মলতা এবং অত্যাশ্চর্য দৃশ্য অনুভব করতে লেকের চারপাশে রয়েছে হাঁটার ব্যবস্থা। যেখানে প্রতিদিনই হাঁটছেন হাজারো দর্শনার্থী।

কেউ যদি নির্মল সবুজে হাড়িয়ে যেতে চায় তাহলে তার জন্য আকর্ষনীয় গন্তব্য হবে থিয়ান শান পাহাড়ের এই থিয়ান চি লেক। 

প্রতিবেদন- হোসনে মোবারক সৌরভ

সম্পাদনা- আফরিন মিম

৩। পর্যটনে শীর্ষ চীনের ১০ কাউন্টি

চেচিয়াং প্রদেশের আনচি কাউন্টি ২০২৩ সালে পর্যটক আকর্ষণে চীনের শীর্ষ কাউন্টির মর্যাদা পেয়েছে। ১০০টি কাউন্টি ও কাউন্টি স্তরের শহরের মধ্যে এ গৌরব অর্জন করে। সম্প্রতি চায়না ডেইলির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

তালিকায় শীর্ষ দশে প্রথম স্থানসহ ৬টি কাউন্টিই চেচিয়াং প্রদেশের। শীর্ষ দশের কাউন্টিগুলো হলো, দ্বিতীয় চিয়াংসু প্রদেশের চাংশু শহর, তৃতীয় চেচিয়াং প্রদেশের চাংসিয়াং কাউন্টি, চতুর্থ হুনান প্রদেশের লিউইয়াং সিটি, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম চেচিয়াং প্রদেশের তংচিয়াং সিটি, সিয়াংসান কাউন্টি ও তেছিং কাউন্টি, অষ্টম সিছুয়ান প্রদেশের তুচিয়াংইয়ান সিট, নবম ও দশম চেচিয়াং প্রদেশের ছুয়অন কাউন্টি ও তংলু কাউন্টি।

পর্যটন অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সরকারী প্রচার, পর্যটন শিল্প ড্রাইভিং ফাংশন, পর্যটন উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা, পর্যটন সুবিধা এবং পরিষেবা ফাংশন, পর্যটন মান তত্ত্বাবধান এবং বাজার তত্ত্বাবধান এই ছয়টি দিকের উপর সেরা কাউন্টিগুলো নির্বাচন করা হয়। 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী