চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে চলছে আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্য মেলা-সিফটিস-২০২৩। ‘উন্মুক্ততা উন্নয়নের নেতৃত্ব দেয়, সহযোগিতা একটি জয়-জয় ভবিষ্যত তৈরি করে’- থিম নিয়ে ২ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে শুরু হওয়া মেলাটি চলবে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ৮৩টি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ২ হাজার ৪০০টিরও বেশি কোম্পানি সরাসরি এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে।
মেলাকে কেন্দ্র করে চীন তার পরিষেবা খাতের উন্মুক্তকরণকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৈশ্বিক পরিষেবা বাণিজ্যের প্রসার, পূর্ব-পশ্চিম সহযোগিতা ও সবুজ রূপান্তরে সিফটিস বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার বেইজিংয়ে চলতি বছরের পরিষেবা বাণিজ্যমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেন, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৪৫তম বার্ষিকী হিসাবে চলতি বছর তাঁর দেশে উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণকে আরও এগিয়ে নেবে। ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন ও আইনী পরিষেবাসহ পরিষেবা খাতের উন্মুক্তকরণকে আরও প্রসারিত করবে তাঁর দেশ।
চীন উচ্চ-মানের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলগুলোর একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় – এ কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিষেবা বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে চীনের আন্তর্জাতিক পরিষেবা বাণিজ্যমেলা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করবে, সংশ্লিষ্টদের আত্মবিশ্বাস জোরালো করবে এবং এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টাকে সমন্বিত করবে।
সি তাঁর ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন, চীন স্বেচ্ছায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের জন্য একটি জাতীয় বাণিজ্য বাজার প্রতিষ্ঠা করবে এবং সবুজ উন্নয়নে বৃহত্তর ভূমিকা পালনের জন্য পরিষেবা শিল্পকে সমর্থন করবে।
চায়না অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের প্রেসিডেন্ট চিন সুও প্রেসিডেন্ট সি বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে সিফটিস চীন, বাকি বিশ্বের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়াবে এবং দেশীয় উদ্যোগগুলোকে সুযোগ খুঁজতে এবং চীনের পরিষেবা বাণিজ্যকে একটি নতুন স্তরে এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করে।
সিফটিস বিশ্বজুড়ে ব্যবাসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিময় প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার করবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের বৃহত্তম ও সসমন্বিত এ পরিষেবা বাণিজ্য মেলা, উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণের বিষয়ে চীনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে যা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তব্যকে সমর্থন করে পেরুর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পেরুর কংগ্রেসের সভাপতি লুইস গঞ্জালেস পোসাদা, এবং সুইস অর্থনীতিবিদ ফিলিপ মনিয়ার বলেন, চীনের পরিষেবা মেলা চীন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
গ্রুপ অফ কর্পোরেট লিডারস- এলআইডিই’র সিইও হোসে রিকার্ডো ডস সান্তোস লুজ জুনিয়র বলেন, ‘চীন বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক এক্সপোর আয়োজন করছে, যা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যই নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মিথস্ক্রিয়া বাড়ানোর একটি উপায়’৷
আলজেরিয়ার অর্থনীতিবিদ সোহেল মেদ্দাহ মনে করেন, উদ্ভাবনে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তির জন্যই পরিষেবা বাণিজ্য মেলা বিশ্বব্যাপী এতটা জনপ্রিয় হয়েছে।
সবুজ উন্নয়নে চীনের বৃহত্তর ভূমিকা পালনে প্রেসিডেন্ট সির ব্ক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে কেনিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক প্যাট্রিক মাওয়াঙ্গি বলেন, চীনের উন্মুক্তকরণ, পূর্ব-পশ্চিমে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সর্বোপরী বিশ্বের সবুজ রূপান্তরের জন্য সিফটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
কায়রো-ভিত্তিক মিসর-চীন বিজনেস কাউন্সিলের মহাসচিব আবদেল সাত্তার এশরাহ বলেন, চীন এ মেলায় তার পরিষেবা খাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে সবুজ-প্রযুক্তির প্রসার ঘটবে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমি-এর নির্বাহী ডিন চুয়াং রুই বলেছেন, যখন পণ্যের বাণিজ্য আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার দ্বারা প্রভাবিত হয় তখন পরিষেবাগুলোর বাণিজ্য বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে একটি সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে।
চীনের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্ভাবন এবং উন্নত ব্যবসায়িক পরিবেশ ক্রমবর্ধমান পরিষেবা বাণিজ্যের জন্য একটি শক্তিশালী গ্যারান্টি দেয় বলে মনে করেন চুয়াং।
প্রসঙ্গত ২০২২ সালে, চীনের পরিষেবা আমদানি ও রপ্তানি বার্ষিক ১২.৯ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৮৩৫.৮ বিলিয়ন ডলার) রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, টানা নবম বছরে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস গ্রেটার চায়নার গ্রোথ অ্যাক্সিলারেশনের জেনারেল ম্যানেজার কু ফান বলেছেন, চীনের ব্যবসার পরিবেশের ক্রমাগত উন্মুক্তকরণ ও অপ্টিমাইজেশন এবং পরিষেবাগুলোতে বাণিজ্যের ডিজিটালাইজড এবং সবুজ বিকাশের সক্রিয় প্রচার দেশীয় এবং বিদেশী ব্যবসাগুলিকে ব্যাপকভাবে উপকৃত করছে।
কু বলেন তার কোম্পানী আরও বিনিয়োগের মাধ্যমে চীনা বাজারে আরও ভালোভাবে প্রবেশের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।