এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।
পিলাফের কিংবদন্তি
কথিত আছে, ১০০০ বছর আগে, আবু আইলি ইবসিনা নামে একজন ডাক্তার ছিলেন। একসময় তিনি খুব দুর্বল ছিলেন এবং অনেক ওষুধ খেয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরে তিনি ডায়াটোথেরাপির জন্য এক ধরনের ভাত তৈরি করেন। তিনি মাটন, গাজর, পেঁয়াজ, পরিষ্কার তেল, মাটন তেল, চাল, জল এবং লবণ যোগ করে কম আঁচে সিদ্ধ করেন। খাবারটি রঙ, স্বাদ এবং গন্ধে অনন্য হয়, যা মানুষের ক্ষুধা জাগাতে পারে। তিনি সকাল-সন্ধ্যা একটি ছোট বাটি ভর্তি করে এ খাবার খেতেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আশেপাশের লোকজন খুব অবাক হন। পরে, তিনি এই ‘প্রেসক্রিপশন’ সবার কাছে পৌঁছে দেন এবং এটিই বর্তমানের ‘পিলাফ’।
‘পিলাফ’ হল উইগুর ও উজবেক জাতির ভাতের একটি প্রধান রূপ। উইগুরদের ভাষায় একে ‘বোর্নারো’ বলা হয়। এর প্রধান কাঁচামাল মাটন, চাল, পরিষ্কার তেল, গাজর, পেঁয়াজ ইত্যাদি। রান্না করা হয় ভাজা, ফুটানো ও স্টুইংয়ের মাধ্যমে। তৈরি পিলাফ চকচকে, সুগন্ধিযক্ত এবং পুষ্টিকর। গাজর হল পিলাফের মূল, যা ‘লিটল জিনসেং’ এবং ‘গ্রাউন্ড জিনসেং’ নামে পরিচিত। গাজর পুষ্টিকর। রক্তের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি তৃষ্ণা নিবারণ করে, স্নায়ুকে শান্ত রাখে এবং বুদ্ধিমত্তা উন্নত করে। পেঁয়াজকে সিনচিয়াংবাসী বলে পিয়াজি। এটিও পিলাফের একটি অপরিহার্য উপাদান। এতে প্রচুর প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, শর্করা থাকে এবং এতে মারকাপটান, ডিসালফাইডস, ট্রাইসালফাইড এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে। পেঁয়াজ সর্দি, মাথাব্যথা, ঠাসা নাক, স্ট্রোক, ফোলা মুখ এবং আমাশয় নিরাময়ে কার্যকর। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পেঁয়াজের রক্ত জমাট বাঁধানোর ক্ষমতা আছে। তাই ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো পেঁয়াজকে ‘সবজির রানী’ বলে।
সিনচিয়াংয়ের মুসলমানরা এই খাদ্য উপাদানগুলোকে একত্রিত করে। কারণ, এসব কাঁচামাল পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। তাই, পিলাফকে উইগুরা পুরুষদের জন্য ‘বুগাজি’ (পুষ্টি) বলে এবং সিনচিয়াংয়ের হান জাতির জনগণ একে ‘দারুণ টনিক’ হিসেবে মানে।
পিলাফ তৈরির প্রক্রিয়া
পিলাফ থিয়ানশান পর্বতমালার উত্তর ও দক্ষিণের প্রায় পুরোটাজুড়েই খাওয়া হয়। মাটন দিয়ে পিলাফ তৈরির পাশাপাশি গরুর মাংস, মুরগি, স্নো চিকেন, ইয়াকের মাংস, উটের মাংস ইত্যাদিও পিলাফ তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি কিছু পিলাফ রয়েছে যেগুলোতে মাংস থাকে না, তবে এর পরিবর্তে শুকনো ফল যেমন কিশমিশ, শুকনো এপ্রিকট এবং শুকনো তরমুজ ব্যবহার করা হয়, যাকে মিষ্টি পিলাফ বা নিরামিষ পিলাফ বলা হয়। অঞ্চল ও জীবনযাপনের অভ্যাসের পার্থক্যের কারণে, দক্ষিণ সিনচিয়াং ও উত্তর সিনচিয়াংয়ের পিলাফ রান্না উপায় আলাদা এবং সেখানে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন পিলাফ রান্না করা হয়।
গ্রীষ্ম ও শরত্কালে, উইগুরদের পিলাফ খাওয়ার আরও উপায় রয়েছে। দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের উইগুররা পিলাফে ‘পি ইয়ে’ অথবা আপেল ব্যবহার করে করে, যাতে পিলাফে হালকা ফলের সুগন্ধ থাকে। কেউ কেউ পিলাফে ভার্মিসেলি, বাঁধাকপি, টমেটো, গোলমরিচ ইত্যাদি মেশান, যাকে ‘ছাই পু লাও’ বলা হয়। সবজিযুক্ত পিলাফ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। পিলাফের সাথে দই মিশিয়ে খেতে উইগুররা পছন্দ করে। এভাবে অনন্য স্বাদ পাওয়া যায়। পিলাফ গ্রীষ্মের তাপ উপশমের জন্য একটি আদর্শ খাবারও বটে।
ডিম পিলাফ নামে এক ধরণের পিলাফও রয়েছে। পিলাফ রান্নার পর একটি ডিমের আকারের গর্ত করে সেখানে একটি ডিম ফেটে কুসমসহ সাদা অংশ ঢেলে দেওয়া হয়। রান্না হয়ে গেছে ডিম চালের দানা দিয়ে আবৃত থাকে, যার স্বাদ খুব সুগন্ধযুক্ত।
বিশিষ্ট অতিথিদের আপ্যায়ন করার জন্য বিশেষ পিলাফ রান্নার নিয়ম আছে। পিলাফের প্রতিটি পাত্রে মাংসের পুর দেওয়া বান রাখা হয়, যা ‘পিলাফ বান’ নামে পরিচিত। পিলাফ ও পিলাফ বান উইগুরদের প্রথম শ্রেণীর খাবার। বিশিষ্ট অতিথি, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা এলে তাদের আপ্যায়নের জন্য মেজবান এই ধরনের খাবার রান্না করেন। এটি সৌজন্যমূলক এবং মার্জিত সামাজিকতার বহিঃপ্রকাশ।
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (উর্মী/আলিম)