সেপ্টেম্বর ১: মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডোর চীন সফরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মুখপাত্র শু ইয়ু থিং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগের নতুন ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রীদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনিক লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য-সম্পর্কিত গোপনীয়তা এবং গোপনীয় ব্যবসায়িক তথ্য রক্ষাকে জোরদার করতে কৌশলগত আলোচনা করেছেন দু’দেশের বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো গত ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবর চীন সফর করেন। এ সম্পর্কে মুখপাত্র শু বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক কেবল এই দু’দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বরং এর বৈশ্বিক প্রভাবও রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি বলেন, গত ২৮ অক্টোবর চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও ও রাইমন্ডোর মধ্যে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তাতে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তব ফল অর্জিত হয়েছে। দু’দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের সংলাপ চ্যানেল গড়ে তুলতে এবং আর্থ-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের যোগাযোগ জোরদার করতে দু’পক্ষ একমত হয়েছে।
এই সম্পর্কে মুখপাত্র শু বলেন, “দুই বাণিজ্যমন্ত্রী নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতে একমত হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাদের মধ্যে সময়মত সরাসরি আলোচনা হবে। প্রতিবছর অন্তত একবার বৈঠক হবে। বছরে দুইবার উপ-মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপ আয়োজিত হবে। দু’পক্ষের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেরকে এতে অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হবে।”
তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের রপ্তানি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করে এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে দু’পক্ষ আইনানুসারে রপ্তানি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় করবে। এই প্রক্রিয়ায় দু’দেশের সরকার একে অন্যের রপ্তানি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতি সম্পর্কে জানবে এবং যোগাযোগ জোরদার করবে।
শু ইয়ু থিং বলেন, যোগাযোগ চ্যানেল প্রতিষ্ঠা দু’দেশের বাণিজ্য বিভাগগুলোর মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক ইস্যুতে ব্যবস্থাগত ও সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করেছে, যেটি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করা এবং দু’দেশের শিল্প ও বাণিজ্য মহলে বাস্তব সহযোগিতা চালানোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
তিনি জানান, প্রশাসনিক লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য-সম্পর্কিত গোপনীয়তা এবং গোপনীয় ব্যবসায়িক তথ্য রক্ষাকে জোরদার করতে কৌশলগত আলোচনাও করেছে দু’পক্ষ। তিনি বলেন, দুই বাণিজ্যমন্ত্রী দু’দেশের পারস্পরিক আর্থ-বাণিজ্যিক ইস্যুতে বাস্তব ও পেশাগত বিনিময় করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আইনের ৩০১ নম্বর ধারার আওতায় চীনা সেমিকন্ডাক্টর আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ, বিনিয়োগ সীমিতকরণ ব্যবস্থা, বৈষম্যমূলক ভর্তুকি এবং চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে বেইজিং। চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং জোর দিয়ে বলেন, দেশের নিরাপত্তার সাধারণীকরণ স্বাভাবিক আর্থ-বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের জন্য অনুকুল নয় এবং একতরফা বাণিজ্যি সংরক্ষণবাদ বাজারের নীতি ও ন্যায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা শুধু বৈশ্বিক শিল্প চেইন ও সরবরাহ চেইনের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “সম্প্রতি মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ কিছু বিদেশি পুঁজিবিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে জানিয়েছে, চীনা বাজারে তারা কয়েক দশক ধরে কাজ করেছে এবং চীনে তাদের ব্যবসা আরও বাড়াতে আগ্রহী। তবে বর্তমানে চীনে বিনিয়োগ ও ব্যবসা চালানোর সর্বোচ্চ ঝুঁকি হচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে অনিশ্চয়তা ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে এটি।”
তিনি বলেন, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে চীনে মার্কিন অর্থ ব্যবহারের প্রকৃত পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের ব্যবসায়িক পরিবেশের প্রতি মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা তুলে ফুটে উঠেছে। (ওয়াং হাইমান/রহমান)