১. সিনচিয়াংয়ে ভালোবাসা পেয়েছেন তানজানিয়ার নারী
২. মানবতার সেবায় নারী চিকিৎসক লিং ফেং
৩. চাং হোং ইয়ানের চায়ের আড্ডা
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
সিনচিয়াংয়ে ভালোবাসা পেয়েছেন তানজানিয়ার নারী
ওসি: চীনে অনেক বিদেশি বাস করেন যারা এখানে বিয়ে করেছেন, নিজের জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি খুঁজে পেয়েছেন। এমনি একজন মানুষ তানজানিয়ার নারী দিয়া। সুদূর আফ্রিকার দেশ তানজানিয়া থেকে এসে তিনিচীনের সিনচিয়াংয়ে নিজের সংসার ও ক্যারিয়ার দুটোই গড়েছেন। তার আনন্দময় জীবনের কথা শুনবো প্রতিবেদনে।
চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। এখানকার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর কাশগর। কাশগরের একটি প্রাচীন এলাকা কাশি সিটি। এখানে দেশবিদেশের পর্যটকরা আসেন। নানা রকম ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী বিক্রি হয়। এখানে আছেন তানজানিয়ার এক তরুণী । নাম তার দিয়া। দিয়া এখানে দিলি অ্যান্ড দিয়া ক্যাফে নামে একটি কফিশপ দিয়েছেন। দিয়া বিয়ে করেছেন স্থানীয় এক তরুণকে।
দিয়া বলেন তিনি কফি খেয়ে বড় হয়েছেন আর তার স্বামী চা খেয়ে।
দিয়া বলেন, ‘আমি যখন সিনচিয়াংয়ে এলাম, হঠাৎ করেই এই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। দেখলাম আমার সংস্কৃতির সঙ্গে খুব মিল। এভাবে আমি আমার ভালোবাসা এখানকার মানুষকে দিতে পেরেছি।’
পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়া থেকে চীনের সিনচিয়াংয়ে এসে কাশগরে কফিশপ খোলাটা দিয়ার জন্য খুব সহজ হয়নি। তবে দশবছর আগে শুরু হওয়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় এখন অনেক বিদেশি চীনে আসছেন। তারা এখানেই গড়ে নিচ্ছেন নিজের জীবন।
কাশগরের রয়েছে দুই হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। প্রাচীন সিল্ক রোডের সঙ্গে এর নিবিড় যোগাযোগ। এখানে দিয়া বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তার বিশেষ কফির কারণে। তিনি একজন অনলাইন সেলিব্রেটি।
দিয়া জানান, ‘‘ এই কফি স্থানীয় দুধে তৈরি। সেজন্য এটা এত স্পেশাল।’
তানজানিয়া কফির জন্য বিখ্যাত এবং চীন চায়ের জন্য। দিয়া তার এবং স্বামীর ভালোবাসা একত্রে মিলাতে পেরেছেন।
কাশগরের একটি বিখ্যাত বাজার এলাকা খান বাজার। দিয়ার ক্যাফে থেকে এই বাজার খুব দূরে নয়। এই বাজার রাতে খোলে। এখানে নানা রকম মজাদার খাবার পাওয়া যায়। যদিও সিনচিয়াং থেকে তানজানিয়া অনেক দূরে অবস্থিত তবু এখানকার খাবার ও সংস্কৃতির সঙ্গে তানজানিয়ার খাবার সংস্কৃতির বেশ মিল রয়েছে। যেমন স্থানীয় একটি মুখোরোচক খাবার। চীনা ভাষায় ‘খাও পাওচি’ যেটাকে তানজানিয়ায় বলে
‘একদম একরকম। আমরা এটাকে ভেজে তুলি আর এখানে বেক করা হয়। এটুকুই পার্থক্য। তবে এর উপকরণ একদম এক।’
দিয়া তানজানিয়াকে মিস করেন তবে কাশগরে তিনি বাস করে সুখী। তিনি সিচিয়াংয়ের বৌমা হতে পেরে আনন্দিত। এখানকার মানুষ তাকে আপন করে নিয়েছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
মানবতার সেবায় নারী চিকিৎসক লিং ফেং
দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিতদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানে কাজ করছেন চীনের নারী চিকিৎসক লিং ফেং ও তার নেতৃত্বে কয়েকটি মেডিকেল টিম। সম্প্রতি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত সিকাচে শহরে ৫হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দিয়েছেন তারা। আর বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসা পেয়ে খুশি এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। মানবদরদী চিকিৎসক লিং ফেংয়ের কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
চীনের নারী চিকিৎসক লিং ফেং। কাজ করছেন বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সুয়ানউ হাসপাতালের চিফ নিউরোসার্জন হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর এই হাসপাতালে কাজের পাশাপাশি নিজ নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনামূল্যে সেবা কার্যক্রম পরিচালনাও করেন তিনি।
সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সিকাচে শহরে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন লিং ফেং ও তার চিকিৎসক দল। লিংয়ের নেতৃত্ব ৩৫ জন ডাক্তারের দল চারদিনব্যাপী এই প্রচারাভিযানে ৫ হাজার জনেরও বেশি রোগী ও ১৩ টি অস্ত্রোপচার করেন।
একই সাথে শহর ও গ্রামে সেবা প্রদানে ছোট ছোট চারটি দলে বিভক্ত করা হয় চিকিৎসক দলকে। এরপর কাউন্টির হাসপাতালগুলোর সার্জনদের সাথে মিলে সেবা প্রদান করেন তারা।
সিকাচে শহরের মানুষদের বেশিরভাগ সমস্যা হাটু জয়েন্ট। কাজের অভ্যাস এবং জলবায়ুর কারণে স্থানীয়রা এ সমস্যাতেই ভোগেন সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয়দের এ রোগ সম্পর্কে লিং ফেং বলেন, "হাঁটুর জয়েন্টের সমস্যা এখানে এতটাই প্রকট যে প্রায় প্রতিটা ঘরে এ সমস্যা দেখা যায়। আমরা দেখেছি তরুণ বা বৃদ্ধ সবাই এই সমস্যায় ভুগছেন। এজন্য হাঁটুর ব্যথায় সবাই প্রায় নিচু হয়ে হাটতে বাধ্য হয়।,"
এবারের প্রচারাভিযান শুরুর আগে এমআরআই স্ক্যানার এবং হাইপারবারিক অক্সিজেন চেম্বার তৈরি করতে মেডিকেল ডিভাইস নির্মাতাদের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। এতে করে এসব আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সরাসরি গ্রামে চিকিৎসা দেন তারা।
এ প্রসঙ্গে লিং বলেন, "গ্রামের অনেক রোগী আমাদের ক্যাম্পেইনে তাদের প্রথম এমআরআই পরীক্ষা করেছেন। যেহেতু এমআরআই স্ক্যান হল মাথা, সার্ভিকাল মেরুদণ্ড এবং হাঁটুর জয়েন্টের সমস্যা শনাক্ত করার একটি ভাল উপায়, ফলে সহজেই হাঁটুর সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছি”।
এই চার দিনের ক্যাম্পেইনে ঘাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া বা টর্টিকোলিসে আক্রান্ত একজন ছেলের অস্ত্রোপচার করেন স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসকরা। সাতজন চিকিৎসকের যৌথ প্রচেষ্টায় ছেলেটির সফল অস্ত্রোপচার হয়।
আর্থিক অস্বচ্ছলতা বা স্বাস্থ্যজ্ঞানের অভাবের কারণে, অনেক স্থানীয় বাসিন্দা সচেতন নয় তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে। ফলে অনেক ছোট রোগও ধীরে ধীরে বড় রোগে পরিণত হয়। এই রোগীদের শুরু থেকেই সচেতন করার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য ২০১৭ সাল থেকে লিং ফেং এর নেতৃত্বে কাজ করছে চীনের এই মেডিকেল স্বেচ্ছাসেবক দল।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
চাং হোং ইয়ানের চায়ের আড্ডা
চীনের চেচিয়াং প্রদেশের চা খুব বিখ্যাত। এই খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে নিজের পরিচিতি ও অর্থনৈতিক সাফল্য দুটোই পেয়েছেন চাং হোংইয়ান। চীনের গ্রাম পুনর্জীবনের ধারায় তিনিও শহর থেকে গ্রামে ফিরে নিজের এবং আশপাশের মানুষকে সমৃদ্ধ করেছেন। গড়ে তুলেছেন নারীদের নিয়ে একটি দল। বিস্তারিত শুনবো প্রতিবেদনে।
চীনের চা সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। চেচিয়াং প্রদেশের চা সংস্কৃতির রয়েছে বিশেষ গৌরবময় ইতিহাস। এই সংস্কৃতি গৌরব বয়ে এনেছে চেচিয়াংয়ের মেয়ে চাং হোং ইয়ানের জীবনে।
চেচিয়াংয়ের হাংচৌ সিটির চিংশান গ্রামের একটি সরাইখানা উফাং শানফাং। এই গ্রামের মানুষ তো বটেই আশপাশের অঞ্চলেও এই সরাইখানার নাম লোকের মুখে মুখে ফেরে। কারণ এখানে প্রাচীন চীনের সংস্কৃতির ধারা অনুসরণ করে সেই আমেজে চা পরিবেশন করা হয়। এই সরাইখানায় চা পরিবেশন করে খ্যাতি ও অর্থ দুটোই পেয়েছেন চাং হোং ইয়ান।
চা পরিবেশনের পাশাপাশি তিনি ও তার টিমের সদস্যরা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইতিহাসকেও তুলে ধরেন। হাংচৌর একটি চা বাগানেই এই সরাইখানাটি স্থাপন করা হয়েছে।
চাং হোং ইয়ান ছোটবেলায় ছিলেন ইনট্রোভার্ট ধরনের। লোকের সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারতেন না।
তিনি একসময় শহরে একটি চাকরিতে ঢোকেন। কিন্তু স্বাস্থগত কারণে সেই চাকরিটি ছাড়তে হয়। চাং এর বাবা মা সেসময় হোটেল ব্যবসা শুরু করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। চাং তাদের সঙ্গে যোগ দেন। অনেকেই তখন ভেবেছিলেন চাং এই কাজে সাফল্য পাবেন না।
চিংশান গ্রাম বিশেষ ধরনের চিংশান চায়ের জন্য খ্যাত। চাংয়ের বাবা মা নিজস্ব কারখানা গড়ে তোলেন চা প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য।
২০১৬ সালে চাংয়ের বয়স ছিল ২৯ বছর। তিনি চায়ের সরাইখানা খোলেন। এ বিষয়ে তিনি প্রশিক্ষণ নেন ও লেখাপড়া করেন।
তিনি থাং ও সং রাজবংশের সময়কার চা সংস্কৃতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। সেই সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি তার দোকানে ঐতিহ্যবাহী চা উৎসবের আয়োজন করেন। তার দলের নারীরা হানফু পরে চা পরিবেশন করেন। তার দোকানের সকল সরঞ্জাম ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি।
চাং জানান তার টিমের সদস্যদের মধ্যে একজনের আগে সিফুডের দোকান ছিল অন্যজনের একটি হেয়ার স্যালোন ছিল। তিনি তাদেরকে নিজের দলের সদস্য করেন কারণ তার মনে হয়েছিল এরা ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে আগ্রহী এবং হানফু পরতে পছন্দ করে।
চাং নিজের সাফল্যে খুব আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘যখন আমি স্কুলে পড়তাম তখন কোন পুরস্কার পাইনি। কেউ আমাকে বিশেষভাবে চিনতো না। কিন্তু এই চিংশান চায়ের এই সরাইখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমি অনেক অ্যাওয়ার্ড ও পরিচিতি পেয়েছি। ‘
এভাবেই নিজের জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোগী নারী চাং।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া,
কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আফরিন মিম, আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্বার
অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল