চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-08-31 19:35:24

চলতি বাণিজ্যের ৩৩তম পর্বে থাকছে:

১. নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণ করছ চীনের ব্রিক অ্যান্ড মর্টার বুকস্টোর

২. তুর্কি রেলপথ নির্মাণে চীনা কোম্পানির সাফল্য

৩. চীনে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার পরিকল্পনা করছে জার্মান টেক জায়ান্ট বশ

নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণ করছ চীনের ব্রিক অ্যান্ড মর্টার বুকস্টোর

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ক্রেতা আকর্ষণ করতে এবার নতুন উদ্যোম ও উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছে চীনের ব্রিক অ্যান্ড মর্টার বুকস্টোর। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের কিছু নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে কতোটা ক্রেতা আনাগোনা বাড়ানো যায় তাদের এই প্রতিষ্ঠানে। বিশেষ করে প্রদর্শনী কেন্দ্র, পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা কার্যক্রমের সুযোগ রাখা হয়েছে এখানে।


 

চীনের রাজধানী শহর বেইজিংয়ে চোখে পড়বে জমজমাট এক বইয়ের দোকান। যেন তেন দোকান নয়, রীতিমত এক বইয়ের দুনিয়া। তবে শুধু পড়ার জন্য নয়, সময় কাটানো, আড্ডা দেওয়া কিংবা পর্যটনের উদ্দেশ্যেও আসা যায় এখানে।

 

তবে ছেলে বুড়ো, মাঝবয়সী সবার আনাগোনা এখানে সমান তালে। ১৮৮ ইউয়ানের বিনিময়ে একজন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সংস্কৃতিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে কোন একঘেয়েমী নেই, বরং ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে নানা আয়োজন আছে। তাই তো গেল ২৫ বছর ধরে প্রতিনিয়ত চীনা সমাজে আলো ছড়াচ্ছে এই বইয়ের দোকান।

বইয়ের এই দোকানের একটি অংশে আছে প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণ কলাকৌশল সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা। ধারনা পাবেন প্রাচীন যুগের নানা সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে। যখন পড়তে ইচ্ছে করবে না তখন অনায়াসেই এসব দেখে সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন। পরিবারের সঙ্গে আসা এক চীনা শিশু তার অনুভূতির কথা জানায় বেশ আনন্দ নিয়ে।

“আমি এখানে এসে শিখেছি কীভাবে প্রাচীন ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রাচীন ব্রঞ্জের তৈরি আসবাবপত্র দেখতে কেমন ছিলো তাও জেনেছি। আমি ভবিষ্যতেও এমন কার্যক্রম অংশগ্রহণ করতে চাই।“

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিশুদের নিয়ে এসে আনন্দ সময় কাটানোর ব্যবস্থাও করা হয় এই অন্যরকম বইয়ের দোকানে।

“আমাদের এই সফরে বহু কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। আমাদের শিশুদের সঙ্গে ট্যুর গাইডের খুব ভালো হৃদ্যতা তৈরি হয়।“

 

এখানকার ভবন, নির্মাণশৈলী ও ভেতরের সাজসজ্জা অবাক করবে যে কাউকে। আছে প্রায় ৩ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের এক্সিবিশন এরিয়া। এখানে দেখতে পাওয়া যাবে ২০ শতকের স্থাপত্য রীতির নানা নমুনা। বিশেষ করে সানসিয়াংতুই সভ্যতার নানা নিদর্শন আছে এখানে।

এখানে এসে ধারনা পাওয়া যায় স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও দর্শন এবং নৃত্যকলা সম্পর্কে। তাইতো এখানে এসে নিয়মিত সময় কাটান, এসে বই পড়ে ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন এমন মানুষের সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে।

এই বইয়ের দোকানে নিয়মিত আসা এক নারী জানাচ্ছিলেন তার ভালো লাগার পেছনের কারণ।

 

“আমার কাছে মনে হয় পুরো জায়গাটাকে তারা আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেলে এক সুন্দর স্থাপত্যরীতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে কাঠের থামগুলোর কারণে এটি দেখতেও দারুণ লাগছে। আমি সাধারণত এখানে এসে চা খাই আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই।“

এসব কার্যক্রমের ফলও আসছে দ্রুত। বুকস্টোর কর্তৃপক্ষ বলছে, গেল বছরের চেয়ে চলতি বছর পর্যটক ও ক্রেতা আসার সংখ্যা অন্তত ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কেবল তাই নয়, এই বইয়ের দোকানের আলোকে চীনের বিভিন্ন জায়গা একই রকমের আরও বেশি কিছু প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেছে। ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকায় বাড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যবসায়ীক প্রতিযোগিতাও।

 

ভিনদেশে চীন:

তুর্কি রেলপথ নির্মাণে চীনা কোম্পানির সাফল্য

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুল থেকে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করেছে চীনের মালিকানাধীন দুই কোম্পানি। উন্নত এই রেল সেবার মাধ্যমে ৩৪ কিলোমিটারের এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট। আর প্রতি ৪টি করে সাবওয়ে গাড়ি বহন করতে পারবে প্রায় ১১শ’ যাত্রী। বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে।

 

সম্প্রতি তুরস্কে চালু হলো চীনের তৈরি চালকবিহীন ট্রেন। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির এই ট্রেন চালুর মাধ্যমে তুরস্কের মেট্রোরেল প্রকল্পে ঘটলো নতুন সংযোজন। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুল থেকে নতুন বিমানবন্দর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট।

তুরস্কের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায় প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে এই ট্রেন। তুরস্কের স্থানীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে সাজানো হয় ট্রেনটির বাইরের অংশ। প্রতি ৪টি করে সাবওয়ে গাড়ি বহন করতে পারবে প্রায় ১১শ’ যাত্রী।

এই রেলপথটি নির্মাণ করেছে সারা বিশ্বের মধ্যে রেল যোগাযোগের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান চীনের সিআরআরসি কর্পোরেশন লিমিটিড। কোম্পানিটির প্রধান মালিকানায় আছে সিআরআরসি গ্রুপ ও তিয়ানচিন ট্রাস্ট কোম্পানি লিমিটেড।

বিশ্বময় রেল যোগাযোগের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কাজ করে মূলত এর অংগ প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি ফিনান্সিয়াল লিজিং কোম্পানি লিমিটেড।

গ্রুপের অধীন গঠন করা এসব কোম্পানির মূল লক্ষ্য বিশ্বের দ্রুতগতির রেলসেবা দেওয়া। এক্ষেত্রে ট্রেনের ইঞ্জিন, রেল লাইনের নানা সরঞ্জাম ও রেলপথ নির্মাণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করে এই কোম্পানি। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আধুনিক ও উচ্চ গতির ট্রেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রেনের ইঞ্জিন, মালবাহী ট্রেন এবং শহরাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনের উপযোগী ট্রেন নির্মাণ ও সরবরাহ করাও কোম্পানির প্রধান লক্ষ্য।

চীনের বাইরের কোন দেশে চালকবিহীন মেট্রো প্রকল্প এটাই প্রথম সিআরআরসি ছুছৌ লোকোমোটিভ কোম্পানি লিমিটেড বা সিআরআরসি জেল্কের। কোম্পানিটি বলছে, ২০২০ সালে তুরস্কের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে চুক্তি সই করে তারা। চুক্তি অনুযায়ী তুরস্কের মেট্রোরেল প্রকল্পে মোট ১৭৬টি সাবওয়ে গাড়ি সরবরাহ করবে তারা। এরইমধ্যে ৪০টি সাবওয়ে গাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে কোম্পানিটির তুর্কি শাখার ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা হালুক ওগুজ জানান, বাকি ১৩৬টি সাবওয়ে গাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়

গেল এক দশক ধরে তুরস্কের মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ করছে সিআরআরসি জেল্ক। সংস্থাটি জানায়, এর আগেও তুরস্কে ৪শ’টি মেট্রোরেলের গাড়ি সরবরাহ করেছে তারা। বিশেষ করে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও ইজমির শহরের মেট্রো যোগাযোগের অংশ হয়ে কাজ করছে তারা। সিআরআরসি জেল্ক এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান চৌ ছিংহে জানান, আগামীতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা আরো বাড়বে এবং নতুন নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরি হবে।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার পরিকল্পনা করছে জার্মান টেক জায়ান্ট বশ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দূর-প্রাচ্যের দেশ চীনসহ পুরো এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার পরিকল্পনা করছে জার্মান টেক জায়ান্ট বশ। সামনের দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তারা। আমার তৈরি করা প্রতিবেদন জানাচ্ছেন নাজমুল হক রাইয়ান।

জার্মান প্রকৌশল ও প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানি বশ চীনে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি এক বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায় রবার্ট বশ জিএমবিএইচ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান স্টিফান হারটুং। এ সময় তিনি জানান, চীনে ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে উদ্ভাবন ও মুনাফার বিষয়টি মাথায় রেখেই সামগ্রিক পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

২০২২ সালে করোনা পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কোম্পানিটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মুনাফা অর্জন করেছে বলেও জানানো হয়। বশ চেয়ারম্যান জানান, বাজারে কোম্পানির পণ্যের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে আর এই চাহিদা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি।

সামনের বছরগুলোতে কোম্পানির বার্ষিক বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানায় বশ। তিনি জানান, এশিয়া অঞ্চলে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে সম্ভাবনা তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা। সে কারণে চীনসহ এশিয়ার বাজারে মনোযোগ দেওয়ার কথা জানানো হয় বশের পক্ষ থেকে।