‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৩৩
2023-08-29 19:00:05

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। চীনের মশামুক্ত পার্কে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা

২। চীনের সুরভিত পাহাড়

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।  

১। চীনের মশামুক্ত পার্কে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা   

 

কিছু সময়ের জন্য যান্ত্রিকতার যাতনা থেকে মুক্তি কিংবা পছন্দের মানুষদের সাথে ভালো সময় কাটাতে পার্কে আসেন দর্শনার্থীরা। কেউ আসেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ আবার বন্ধুদের সঙ্গে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে গল্প, আড্ডা কিংবা গান।

 

 

 

কিন্তু কিছু কারণে পার্কের আড্ডাও কখনো কখনো অসাচ্ছন্দ্যের হয়ে উঠতে পারে। পার্কের অন্যতম বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে মশা। মশার প্রকোপে অনেকেই হয়ে যান পার্কবিমুখ। পার্কে আসা দর্শনার্থীরা যাতে মশার প্রকোপে না পড়েন এজন্য অভিনব এক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ছেংতু শহরের লিভিং ওয়াটার পার্ক কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনা করে পার্কটিকে মশামুক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

 

 

দক্ষিণ- পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু’তে রয়েছে হাজারেরও বেশি পরিবেশগত পার্ক। এর মধ্যে লিভিং ওয়াটার পার্ক কর্তৃপক্ষের মশা নিধনের এই উদ্যোগ নতুন আসা দেখিয়েছে শহরের অন্যান্য পার্কগুলোকে।

 

 

 

মশানিধনে এই পার্কে স্থাপন করা হয়েছে ৫০টিও বেশি মশকনিধক যন্ত্র। মশা মারার প্রচলিত যন্ত্রগুলোর থেকে বেশ ব্যতিক্রম নতুন এই যন্ত্র। এতে ব্যবহার করা হয়নি কোনো ধরনের রাসায়নিক, এমনকি ফগার মেশিনের মতো শব্দ দূষণ কিংবা চোখের কোন ক্ষতি করে না গ্রীন মসকিউটো হান্টার্স নামের নতুন এই যন্ত্র।

 

 

সাধারণত মানুষের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের মাধ্যমেই মানুষকে ট্র্যাক করে থাকে মশা। কিন্তু গ্রীন মসকিউটো হান্টার্স মানুষের শ্বাস থেকে নির্গত সেই কাবর্ন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়। যখন এই যন্ত্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ মানুষের দেহের সম পরিমাণ থাকে মশা এতে বিভ্রান্ত হয়ে গ্রীন মসকিউটো হান্টার্স নামের যন্ত্রটির কাছে আসে এবং এই যন্ত্রের ফাঁদে আটকা পরে। এভাবে পার্কে ছড়িয়ে থাকা ৫০ টি মেশিনে আটকা পরে সব মশা।

 

নতুন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে লিভিং ওয়াটার পার্ক কর্তৃপক্ষ। তিন সপ্তাহ কার্যক্রমে প্রায় ১২ হাজার পোকামাকড় আটকা পড়ে ওই মেশিনে।

 

 

তবে মশা মুক্ত করার এই পদ্ধতি শতভাগ কার্যকরী না হলেও পার্কে বেশিরভাগ মশাকে আটকে রাখতে সক্ষম। পার্কে মশার জ্বালা থেকে মুক্তি পেয়ে বেজায় খুশি ঘুরতে আশা দর্শনার্থীরা।

 

ঘুরতে আসা দর্শনার্থী শি চিয়াওমিং বলেন, "আগে এখানে পার্কে আমাকে অনেক মশা কামড়েছে। আপনি যদি এখানে কিছুক্ষণ বসে থাকেন বা থাকেন তবে আপনার হাতে মশার কামড় লেগেছে। কিন্তু এখন আগের থেকে অনেক ভালো, আজকের মতো আমি এখানে বসে আছি। দশ মিনিট এবং কোনো মশা কামড়াতে অনুভব করিনি,” ।

 

 

ঘুরতে আশা আরেক দর্শনার্থী লি ইমিন বলেন, "আমি মনে করি এটির পরিবেশ এবং নকশা সহ সামগ্রিকভাবে এটি দেখতে সুন্দর। অন্যান্য পার্কের তুলনায় আপাতদৃষ্টিতে কম মশা আছে, তবে আপনি যদি শর্ট-হাতা শার্ট পরেন তবে আপনাকে মাঝে মাঝে কামড় দিতে পারে," ।

বর্তমানে মশার প্রকোপ কমাতে কম গাছও রোপন করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পার্কেই শারিরীক ব্যায়াম করার বিশেষ ব্যাবস্থাও চালু করার পরিকল্পনা করছেন ছেংতু কর্মকর্তারা।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- সাজিদ রাজু

 

২। চীনের সুরভিত পাহাড়

ফ্রাগরেন্ট হিলস পার্ক। প্রায় ৪০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই পার্কটি অবস্থিত বেইজিং শহরের উত্তর পশ্চিমে। 

বিখ্যাত ওয়েস্টার্ন হিলসের পূর্ব পাশের এই পার্কে ঘুরার উপযুক্ত সময় হলো শরৎকাল। এই সময়ে গাছের পাতার রঙ পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। এই রঙ পরিবর্তনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে পুরো বেইজিং শহরের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী স্থান হলো ফ্রাগরেন্ট হিলস বা সুরভিত পাহাড়।

ফ্রাগরেন্ট হিলস পার্কের আরেকটি নাম হলো সিয়াংশান পার্ক। এখানে রয়েছে সিয়াংলু পর্বত শৃংগ। এর উচ্চতা ১৮৩০ ফুট। সিয়াংশান পার্কে পাহাড়ের ঢালে আছে রেড স্মোক গাছের বন। শরৎকালে এই গাছের পাতা টকটকে লাল হয়ে ওঠে। সেই লাল পাতার অসাধারণ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছর অনেক পর্যটক আসেন। কেবল কারে চড়ে এই রঙিন পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখা সবচেয়ে সুবিধাজনক। কেবল কারে পুরো পাহাড়ের একটি পাশ দেখা যায় যেখানে পাশাপাশি লাল,কমলা, গোলাপি ও হলুদ রঙের এক বিচিত্র বর্ণিল শোভা মনকে ভরিয়ে তোলে। এখানে আছে ছোট ছোট জলাশয়ে রঙিন মাছ দেখার সুযোগ।

পার্কটি প্রথম নির্মিত হয় ১১৮৬ সালে চিন রাশবংশের শাসনামলে। ইয়ুয়ান ও মিং রাজবংশের শাসনামলে এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়। গড়ে ওঠে অনেক মন্দির ও হল। ১৭৪৫ সালে সম্রাট ছিয়ানলং আরও বেশ কিছু হল, মন্দির ও প্যাভিলিয়ন গড়ে তোলেন এবং এর নাম দেন চিংই গার্ডেন যার অর্থ প্রশান্তির বাগান। তবে ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে বিদেশি হানাদাররা এই পার্কের অনেক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ১৯৪৯ সালে মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর সরকারিভাবে আবার পার্কটিকে গড়ে তোলা হয় এবং একে বেইজিংয়ের দশটি সেরা পার্কের অন্যতম ঘোষণা করা হয়।

 


এই পার্কে আছে ইয়ানচিং লেক, চাও মিয়াও মন্দির, চিয়ানসিন চাই স্থাপনা, চিংছুই লেক, শুয়াংছিং ভিলা ইত্যাদি।  এই পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন অসাধারণ তেমনি এর রয়েছে বিশাল ঐতিহাসিক গুরুত্ব। শুয়াংছিং ভিলা এক সময় চীনের মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও সে তুং এর বাসভবন এবং চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদর দপ্তর ছিল।

 

অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এই পার্কে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় জমে। তাই ভিড় এড়িয়ে রঙিন পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করতে হলে সেপ্টেম্বর মাসে এখানে যাওয়া সুবিধাজনক।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী