অক্টোবর ২৮: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি ব্রিকসের বাণিজ্য ও শিল্প ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন, ব্রিকসের পঞ্চদশ শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, এবং চীন-আফ্রিকা শীর্ষ-সংলাপে অংশ নেন।
এ সব সম্মেলন ও অনুষ্ঠানে সি চিন পিং আবারও বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রস্তাব, বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রস্তাব, এবং বৈশ্বিক সভ্যতা প্রস্তাব তথা তিনটি ‘বৈশ্বিক প্রস্তাব’-এর কথা পুনরায় উল্লেখ করেন। এই তিনটি প্রস্তাব বিশ্বের পরিবর্তন, যুগের পরিবর্তন, এবং ইতিহাসের পরিবর্তনের মুখে তাঁর গভীর চিন্তাভাবনার ফল।
পৃথিবী বর্তমানে শতাব্দীর বড় পরিবর্তনের মুখে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। ব্রিকস শীর্ষসম্মেলনে তিনি বিদ্যমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব নতুন অশান্তি ও পরিবর্তনের একটি নতুন সময়ে প্রবেশ করেছে’।
কয়েক বছর আগে, প্রেসিডেন্ট সি ‘অশান্তি ও পরিবর্তনের সময়’ টার্মটি ব্যবহার করেন এবং ‘শতাব্দীর অদৃশ্য বড় পরিবর্তন’-এর কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বে ‘অশান্তি’ ও ‘পরিবর্তনের’ পারস্পরিক সম্পর্ককেই তিনি তুলে ধরার প্রয়াস পান। ২০২১ সালে এসব ধারণায় তিনি ‘নতুন’ শব্দটি যোগ করেন।
‘নতুন অশান্ত ও পরিবর্তনের সময়পর্ব’ কীভাবে বুঝবেন? প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তা বোঝাতে ‘বড় সমন্বয়, বড় বিন্যাস ও বড় পুনর্গঠন’ এবং ‘অনিশ্চিত, অস্থির ও অপ্রত্যাশিত’ টার্মদুটি ব্যবহার করেছেন।
বিগত বছরগুলোতে বিশ্ব শান্তিপূর্ণ ছিল না। রাজনৈতিকভাবে, কিছু দেশ শিবিরীয় সংঘর্ষে জড়িত এবং ’নতুন শীতলযুদ্ধ’-কে উসকে দিচ্ছে; অর্থনৈতিকভাবে, ‘সরবরাহচেইন বন্ধ করে’ দিয়ে এবং সামরিকভাবে যেখানে-সেখানে অন্যদের হস্তক্ষেপ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে, বৈশ্বিক কোভিড মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের মতো ঘটনা-দুর্ঘটনা বেড়েছে; বৈশ্বিক উন্নয়নের অস্থিতিশীল ফ্যাক্টর বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কঠোর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
একই পৃথিবীতে থেকে কোনো দেশ একা টিকে থাকতে পারে না। গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এটি চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ‘চীনা প্রস্তাব’। এটি যৌথ, বহুমুখী, সহযোগিতামূলক ও অবিরাম নিরাপত্তার ধারণা। এটি অধিক ধেকে অধিকতত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
এ বার দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকসের দেশগুলো এবং ৫০টিরও বেশি দেশের নেতৃবৃন্দ জড়ো হন কোনো নির্দিষ্ট পক্ষ বেছে নেওযার জন্য নয়। তারা শিবিরীয় সংঘর্ষে জড়াতে চান না, শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের একটি বড় পরিবেশ গড়ে তুলতে চান।
কথায় বলে, বিপদে সুযোগ থাকে, নতুন শক্তির জন্ম হয় অশান্তি ও পরিবর্তনের মধ্যে। বর্তমানে, ব্রিকস দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে উদীয়মান বাজারদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো। তারা বিশ্বে মৌলিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, বিগত ২০ বছরে, উদীয়মান বাজারদেশগুলো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো বৈশ্বিক অথনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে ৮০ শতাংশ। বিগত ৪০ বছরে, বিশ্বে এসব দেশের জিডিপি’র অনুপাত ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে।
এবারের ব্রিকস শীর্ষসম্মেলনে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, ইরান, মিসর ও ইথিওপিয়া—এই ছয়টি দেশকে সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, উদীয়মান বাজারদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই গ্রুপের উত্থান অপ্রতিরোধ্য।
যদি উদীয়মান বাজারদেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলো সুষ্ঠুভাবে উন্নয়ন করতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই নিজেদের জন্য আধুনিকায়নের পথ খুঁজে বের করতে হবে। বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলো পশ্চিমা দেশগুলোর আধুনিকায়নের মডেল নকল করলে, তা তাদের অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)