বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব
2023-08-28 19:26:20

 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩৩তম পর্বে যা থাকছে:

* ঘরের কাজে সার্ভিস রোবট ব্যবহারে ঝুঁকছে চীনারা

* ছেংতু মোটর শো’র মূল আকর্ষণ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি

*  চীনের তৈরি বিদ্যুৎচালিত বাসের হাত ধরে পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠছে ব্রাজিলের পরিবহন খাত

 

 

ঘরের কাজে সার্ভিস রোবট ব্যবহারে ঝুঁকছে চীনারা

 

আধুনিক জীবনধারা বজায় রাখতে নিজ বাসায় দৈনন্দিন কাজে রোবটের সাহায্য নিতে পছন্দ করছেন চীনারা। ইতোমধ্যে ঘর পরিষ্কার ও বাতাস বিশুদ্ধকরণের রোবট বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে চীনাদের মধ্যে। সেবাদানকারী রোবট বিক্রির পরিসংখ্যানও দিচ্ছে তেমনই ইঙ্গিত।

সম্প্রতি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে হয়ে গেলো বিশ্ব রোবট প্রদর্শনী। নানা আঁকারের প্রায় ৬শ’ ধরনের রোবট প্রদর্শিত হয় এখানে। ভিন্ন ভিন্ন কাজে পারদর্শী রোবটগুলো। নাচ, গান, লেখালেখি, ছবি আঁকা, এমনকি বাস্কেটবল খেলা- কী পারেনা এই রোবটগুলো। প্রদর্শনীতে রোবটগুলোর এসব কার্যক্রম নজরও কাড়ে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর।    

চীনাদের কাছে রোবট মানে ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত যান্ত্রিক একজোড়া হাতই শুধু নয়, দৈনন্দিন জীবনে সহকারী হিসেবে কাজ করা যন্ত্রমানবও। চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি উপমন্ত্রী সিন কুওপিন বলেন, চীন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রোবটের বাজার।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীন ৬৪ লাখ ৬০ হাজার সেবাদানকারী রোবট ও ৪ লাখ ৪৩ হাজার শিল্প ব্যবহার করা যায় এমন রোবট তৈরি করেছে। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার সার্ভিস রোবট তৈরি করেছে চীন যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। বয়স্ক মানুষের সেবা, স্বাস্থ্য ও নির্মানখাতসহ বিভিন্ন খাতে ইতোমধ্যে ব্যপক আকারে ব্যবহার করা হচ্ছে সার্ভিস রোবট।

চাইনিজ ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রনিক্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর চীনে সার্ভিস রোবটের বাজার ৬ হাজার কোটি ইউয়ানের মাইলফলক স্পর্শ করবে।

ঘর পরিষ্কার করার ক্লিনিং রোবট ও বাতাস বিশুদ্ধকরণে সক্ষম রোবট জয় করে নিয়েছে অনেক চীনার মন। দৈনন্দিন জীবনকে আধুনিক করতে আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে সার্ভিস রোবটের দিকে ঝুঁকছে চীনারা।

সম্প্রতি এক অনলাইন কেনাকাটা উৎসবে চীনের নেতৃস্থানীয় হোম সার্ভিস ব্র্যান্ড ইকোভ্যাক্স রোবটিকস দেড়শ কোটি ইউয়ানের পণ্য বিক্রি করেছে যা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।

চায়না ইন্টারন্যাশনাল ক্যাপিটাল করপোরেশন লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, শহুরে পরিবারগুলোতে ফ্লোর পরিষ্কারের রোবট ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৭ সালে শতকরা ৩ টি পরিবারে এই ফ্লোর পরিষ্কারের রোবট ছিলো। ২০২২ সালে নাগাদ চীনের শহুরে পরিবারের শতকরা ১০টিতেই আছে এই রোবট। 

২০২৩ সালের শুরুর দিকে কৃষি ও উৎপাদনখাতের সাথে রোবোটিক্সের একীকরণের জন্য একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করে চীন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সার্ভিস রোবটের মধ্যে রান্না, পরিষ্কার করা, মনিটরিং ও সঙ্গ দেওয়ার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

ছেংতু মোটর শো’র মূল আকর্ষণ পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি

 

পশ্চিম চীনের সব থেকে বড় বার্ষিক গাড়ি-প্রদর্শনীর নাম ছেংতু মোটর শো। শুক্রবার এর ২৬তম আসর শুরু হয়েছে। মোট ২০০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে বসেছে এবারের আসর, যেখানে প্রায় ১৩০টি ব্র্যান্ডের ১৬শ’র বেশি গাড়ি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এবারের আসরের মূল আকর্ষণ হলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ি।

টানা ৮ বছর ধরে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত মোটরযান উৎপাদনে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অবস্থান ধরে রেখেছে চীন। ছেংতু অটো শোতেও প্রদর্শনকারী গাড়ি কোম্পানিগুলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত মোটরযান ও পরিবেশবান্ধব ধারণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেড় লাখেরও বেশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত মোটরযান চীনে উৎপাদন ও বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।  

এই ধরনের ইতিবাচক ফল দেখে, ভলভো ও পোরশার মতো অনেক ঐতিহ্যবাহী গাড়ির ব্র্যান্ড তাদের নিজস্ব পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়ির মডেল বের করার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

পলেস্টার চায়নার হেড অব মার্কেটিং ইয়াং লিয়ুন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে পুরোপুরি পরিবেশ দূষণমুক্ত গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

লিয়ুন বলেন, “আমরা টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি খুবই যত্নশীল। পুরো গাড়িটি তৈরিতে যেসব পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন গাড়ির ভেতরে যে কাপড়টি ব্যবহার করা হয়েছে খেয়াল রেখেছি সেটি উৎপাদনেও যেনো কাবর্ণ নিঃসরণ না হয়। আমাদের পরিকল্পনা আছে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা একটি সত্যিকারের পরিবেশ দূষণমুক্ত গাড়ি তৈরি করবো।”

এদিকে পোরশা চায়নার সিইও মাইকেল ক্রিশ্চ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের বিক্রিযোগ্য গাড়ির ৮০ শতাংশ হবে বিদ্যুৎচালিত। এই ব্রতকে সামনে রেখে কোম্পানিটি কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মাইকেল।

তিনি বলেন, “এটা খুবই স্পষ্ট যে চীনে গতিশীলতার ভবিষ্যৎ এই বৈদ্যুতিকরণ। অবশ্যই আমরা এর প্রথমদিকের উদ্ভাবক হতে চাই এবং ভবিষ্যতে সম্পুর্ণ বৈদ্যুতিকরণে পোরশা বদ্ধপরিকর। এটা বলাও জরুরি যে চীনা পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত গাড়িগুলো এখন বিশ্বে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আছে এবং আমি মনে করি, চীনের এজন্য গর্ববোধ করা উচিৎ। তাই আমি মনে করি, বৈদ্যুতিকরণ চীনের কেবল ভবিষ্যতই না, বর্তমানেও এর সরব উপস্থিতি আছে।”

অত্যাধুনিক মোটরযান প্রদর্শনের পাশাপাশি, ছেংতু অটো শো তরুণ ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আউটডোর খেলাধুলা থেকে ক্যাম্পিংসহ ভিন্ন নানা কার্যক্রমের আয়োজন করে। ১০ দিন ধরে চলবে পশ্চিম চীনের সব থেকে বড় এই গাড়ির প্রদর্শনীটি।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

চীনের তৈরি বিদ্যুৎচালিত বাসের হাত ধরে পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠছে ব্রাজিলের পরিবহন খাত

 

পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎচালিত গাড়ি উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে আছে চীন। শুধু নিজ দেশেই নয়, বিশ্বজুড়েই পরিবেশবান্ধব গাড়ির প্রচার চালিয়ে আসছে দেশটি। এরই অংশ হিসাবে ব্রিকস কাঠামোর মাধ্যমে টেকসই অগ্রগতির জন্য চীন ও ব্রাজিল একসাথে কাজ শুরু করে। বর্তমানে চীনের তৈরি বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে ব্রাজিলের একটি শহরের পরিবহন খাত হয়ে উঠেছে আরও পরিবেশবান্ধব।

২০২১ সালে একটি চীনা সৌর ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিওয়াইডি সর্বপ্রথম ব্রাজিলের সাও হোসে ডস ক্যাম্পোস মিউনিসিপালিটিতে গ্রিনলাইন প্রকল্পের আওতায় ১২টি বিদ্যুৎচালিত বাস পাঠায়। এটিই ছিলো ব্রাজিলের সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক দ্রুতগতিসম্পন্ন বাস সংযোগ।

বাসগুলোতে করে ১৪ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ভ্রমণ করা যায় এবং মোট ১৩টি স্টপেজে থামে বাসটি। স্থানীয়দের মাঝে বেশ জনপ্রিয় এই বাস সংযোগ।  তিন ঘন্টা চার্জ করলে বাসটি টানা ২৫০ কিলোমিটার চলতে পারে এবং বাসটিতে সর্বোচ্চ ১৬৮ জন যাত্রী চড়তে পারে। 

শহরটির পরিবহন কর্তৃপক্ষ আশা করছে পরিবহন খাতকে পরিবেশবান্ধব করতে আরও বেশি অবদান রাখবে বৈদ্যুতিক বাস।

শহরটির পরিবহন বিভাগের সচিব গ্লাউসিও লামারচা রোচা বলেন, অতিরিক্ত আরো ৪০০ বৈদ্যুতিক বাস কেনার পরিকল্পনা করছেন তারা যা শহরের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বড় আকারে কমিয়ে দিতে পারে।

রোচা বলেন, “বর্তমানে শহরজুড়ে ১০১টি রুটে বাস চলাচল করে। আমরা বাস সার্ভিস নেটওয়ার্কটিকে পুনরায় ডিজাইন করছি এবং অতিরিক্ত আরো ৪০০ বৈদ্যুতিক বাস কেনার পরিকল্পনা করছি যেগুলো শহরজুড়ে চলাচল করবে। এর মাধ্যমে শহরের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ৮০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা সম্ভব।”

গতানুগতিক সাধারণ বাসের তুলনায়, একটি গ্রিন লাইন বৈদ্যুতিক বাস প্রতি বছর ১৮৪ টনের বেশি কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারে, যা ১ হাজার ৩১১টি গাছ লাগানোর সমান ।  

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান, মাহমুদ হাশিম, সাজিদ রাজু

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী