দেহঘড়ি পর্ব-০৩৩
2023-08-27 19:52:13


‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

কোমর ব্যথার চিকিৎসায় ভালো বিকল্প টিসিএম

লোয়ার ব্যাক পেইন বা পিঠের নিচের অংশে ব্যথা একটি ব্যাপকবিস্তৃত স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে লোয়ার ব্যাক পেইনের যন্ত্রণায় ভোগেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এ সমস্যা একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগে রূপ নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সমস্যা ও রোগ প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মে-অক্ষম করে তোলে সেগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাক পেইন। এই ব্যথা সত্যিই একটি বোঝার মতো, যা আপনাকে জীবন উপভোগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আপনি যদি লোয়ার ব্যাক পেইন কমানোর উপায় খুঁজে থাকেন, তাহলে চিরাচরিত চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএম হতে পারে একটি উত্তম বিকল্প।

লোয়ার ব্যাক পেইনের কারণ নির্ণয় করা এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তারদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এর কারণ স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। ইমেজিং স্ক্যান মেরুদণ্ডের কাঠামোগত ক্ষতির একটি চিত্র পেতে সাহায্য করে বটে, তবে এটি সম্পূর্ণ চিত্র দিতে পারে না। ব্যথা শুধুমাত্র শরীরের গঠনগত কারণে হয় না। এটা রাসায়নিক, মানসিক, আচরণগত বা সমাজতাত্ত্বিক কারণেও হতে পারে। এগুলোর সম্মিলিত কারণেও হতে পারে ব্যাক পেইন।

আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস সম্প্রতি লোয়ার ব্যাক পেইন চিকিত্সা-সংক্রান্ত একটি নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যাতে এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রথমেই ব্যথার ওষুধ না নিয়ে প্রাকৃতিক ও বিকল্প থেরাপি যেমন আকুপাংচার ও ম্যাসেজ চেষ্টা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

টিসিএম ও আকুপাংচার কেবল ব্যথার তাৎক্ষণিক সমাধান দেয় না। বরং এটি ব্যথার মূল উৎস খুঁজে বের করে এবং সেটার সামগ্রিক সমাধান দেয়। একজন টিসিএম বিশেষজ্ঞ প্রতিটি রোগীর লক্ষণগুলো বিশ্লেষণ করে একটি চিকিৎসা প্রোটোকল নির্ধারণ করেন, যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকে ভেষজ ফর্মুলেশন, আকুপাংচার, নির্দিষ্ট ব্যায়াম ও ডায়েট।

যেসব বিষয় লোয়ার ব্যাক পেইন সৃষ্টি করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মেরুদণ্ডের ডিস্কে ক্ষতি, ডিস্ক নড়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া, স্পন্ডাইলোলিস্থেসিস, মেরুদণ্ডের স্কোলিওসিস, বাত, মাংসপেশীর টান, পেশীতে খিঁচুনি, স্নায়ুতে ক্ষতি হওয়া, কিডনিতে পাথর বা পিত্তথলির পাথর, হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য। লোয়ার ব্যাক পেইন একজন ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এবং মানসিক চাপ ও হতাশা একটি তীব্র সমস্যাকে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় পরিণত করতে পারে।

লোয়ার ব্যাক পেইনের চিকিৎসায় দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়ার জন্য ভেষজ ফর্মুলেশন ও আকুপাংচারের পাশাপাশি কতগুলো অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার বলে মনে করেন টিসিএম চিকিৎসকরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মেডিটেশন, মৃদু ব্যায়াম, এবং প্রদাহ-উপশমকারী খাদ্যাভ্যাস। জানিয়ে দিচ্ছি এগুলো কীভাবে করবেন সেটা:

মৃদু ব্যায়াম করুন: মৃদু ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে হাঁটা, সাঁতার কাটা, থাই চি, যোগব্যায়াম ও মৃদু স্ট্রেচিং। আপনার পিঠে ব্যথা হলে বিছানায় শুয়ে থাকতেই ভালো লাগতে পারে, তবে নড়াচড়া না করলে তা উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করবে।

ভারী কিছু উত্তোলনে সতর্ক থাকুন: সবসময় মনে রাখবেন কোনও কিছু উঁচু করার জন্য বাঁকা হওয়ার প্রয়োজন হলে হাঁটু থেকে বাঁকতে হবে, পিঠ থেকে নয়। এমনকি ব্যায়ামের সময়ও সামনের দিকে বাঁকা এড়ানোর চেষ্টা করুন।

খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকুন: লোয়ার ব্যাক পেইন হলে কফি, মশলাদার খাবার, এবং টমেটো, আলু ও বেগুনের মতো নাইট-শেড সবজি এড়িয়ে চলুন।

বসার ভঙ্গি বদলান: কাজ করার সময় যেভাবে আপনি বসেন, সেটা একটু ঠিক করে নিন। পিঠ বাঁকা করে না বসে একেবারে সোজা হয়ে বসুন এবং প্রতি ঘন্টায় অন্তত কয়েক মিনিটের জন্য উঠুন এবং একটু হাঁটাচলা করুন।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

উদ্ভাবনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শাংহাই মেন্টাল হেলথ সেন্টার

শাংহাই মেন্টাল হেলথ সেন্টার মানসিক রোগের চিকিৎসায় চীনের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। শাংহাই চিয়াও থুং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে অধিভুক্ত এই মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা কেবল একটি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানই নয়; চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। আগে এ কেন্দ্রের নাম ছিল মার্সি হাসপাতাল এবং শাংহাই সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল। সুহুই ক্যাম্পাস এবং মিনহাং ক্যাম্পাস নিয়ে গঠিত ২ হাজার ১শ’ শয্যার এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১১শ’রও বেশি সার্বক্ষণিক চিকিৎসাকর্মী।

সাধারণ মনোরোগবিদ্যা, ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞান, মুড ডিসঅর্ডার, শিশু ও কিশোর মনোরোগবিদ্যা, জরা মনোরোগবিদ্যা, পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং আসক্তি মেডিসিনসহ ক্লিনিকাল সাব-স্পেশালিটিতে এ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে অসাধারণ প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। মানসিক রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এ প্রতিষ্ঠানটি।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা কেন্দ্র, শাংহাইয়ের প্রধান সাইকোথেরাপি ও মনোবৈজ্ঞানিক পরামর্শ কেন্দ্র, নগরীর প্রধান মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র, প্রধান মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্র, মানসিক রোগ বিষয়ক জাতীয় ক্লিনিক্যাল সেন্টার এবং সাইকোট্রপিক্স বিষয়ক ক্লিনিকাল পরীক্ষাকেন্দ্র হিসাবে ভূমিকা পালন করছে শাংহাই মেন্টাল হেলথ সেন্টার।

এই কেন্দ্রে শাংহাই চিয়াও থুং ইউনিভার্সিটির অধীন ‘সাইকিয়াট্রি ও মানসিক স্বাস্থ্য’ এবং ‘সাইকোলজি’ – এই দুটি ডক্টরেট প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। এছাড়া এটি মানসিক রোগের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের একটি মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ফুদান ইউনিভার্সিটি, থুংচি ইউনিভার্সিটি, শাংহাই ইউনিভার্সিটি ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন, ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটি এবং শাংহাই নরমাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষণ হাসপাতাল। বিশ্বজুড়ে এটি ব্যাপক একাডেমিক বিনিময় কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অন্যান্য বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা চালাচ্ছে।

শাংহাই মেন্টাল হেলথ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক বিজ্ঞান-ভিত্তিক ও মানবিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

#ভেষজের গুণ

ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর জুজুবি

ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধে যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, তার মধ্য অন্যতম লাল খেজুর, যেটি জুজুবি নামেও পরিচিত। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপন্ন এই ফলটি মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর। এটি শরীরে শক্তি যোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, লিভারকে সুস্থ রাখে, হজমশক্তি বাড়ায়, উদ্বেগ দূর করার মধ্য দিয়ে ঘুমে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিশুদ্ধ করে। অল্প মিষ্টি এই সুস্বাদু ফল কাঁচা খাওয়া যায় আবার শুকিয়ে চায়ের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।

দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মতো ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেহকে রক্ষা করে। লাল খেজুর এই রোগ প্রতিরোধক কোষের উৎপাদন বাড়ায় এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে আমাদের ওকোষে প্রবেশে বাধা দেয়।

অ্যামিনো অ্যাসিড-সমৃদ্ধ লাল খেজুর প্রোটিন সংশ্লেষণকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমাদের লিভারের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করে। এ ফলে এমন উপাদান রয়েছে, যা হেপাটাইটিস ভাইরাল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

জুজুবি আয়রনের একটি দুর্দান্ত উৎস। আয়রন হলো লোহিত রক্তকণিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই ফল রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা বাড়ায়, যা মাসিক ও প্রসবের কারণে সৃষ্টি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। এতে অত্যাবশ্যকীয় সংকেত অণু রয়েছে, যা বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং অস্থি মজ্জায় নতুন রক্ত কোষের উৎপাদন বাড়ায়।

ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় মনে করা হয়, লাল খেজুর মনকে প্রশান্ত করে এবং এতে থাকা স্যাপোনিন ঘোর নিদ্রায় সাহায্য করে।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।