চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-08-25 13:23:50


 

চলতি বাণিজ্যের ৩২তম পর্বে থাকছে:

১. ছুটিতে রেকর্ড যাত্রী পরিবহন চীনা রেলওয়ের

২. বিশ্বের গাড়ি শিল্পকে চাপে ফেলেছে চীনের বিদ্যুৎচালিত গাড়ি

৩. ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চীনা কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সই

 

ছুটিতে রেকর্ড যাত্রী পরিবহন চীনা রেলওয়ের

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী আসা যাওয়া করে চীনের রাজধানীতে অবস্থিত ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্টে। কেবল এই পার্কটি নয়, অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রেও ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অন্যদিকে ছুটিতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের যাতায়াত বেড়ে যায়। ফলে অন্যতম আরামদায়ক পরিবহন ট্রেনে দেখা যায় উপচে পড়া যাত্রীচাপ। চীনের সরকারি রেলওয়ে গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে ছুটিতে যাত্রী নিয়ে অন্তত ৭০ কোটি ১০ লাখ ট্রিপ দিয়েছে তারা।

গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মানুষের এমন স্রোত দেখা গেছে চীনের রাজধানী শহরে। দ্য ইউনিভার্সাল বেইজিং রিসোর্টে ভিড় করেন নানা বয়সী মানুষ। এমনিতেই সারা বছর ভিড় লেগে থাকে এই রিসোর্টে। তারমধ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ায় এই জনস্রোত যেন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

কেবল রাজধানী বেইজিং নয়, আশপাশের শহর ও প্রদেশ থেকেও পর্যটক আসে এই রিসোর্টে।

“হ্যারি পটার এবং ফরবিডেট জানুয়ারি দেখেছি, সেখানে অনেক মানুষের ভিড়। প্রায় ৩ ঘণ্টা লাইন ধরে দাড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু তবুও ভালো লেগেছে।“

প্রশ্ন হলো, ২০২১ সালে চালু হওয়া এই রিসোর্টে কী এমন আয়োজন আছে যে মানুষের ঢল নেমেছে? ইউনিভার্সাল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, নাচ-গান আর নানা থিমের আনন্দ আয়োজন। কী নেই এখানে। আছে ছোট বড় মিলিয়ে ৩৭টি রাইড, হলিউডের আদলে আছে ট্রান্সফরমার, কুংফু পান্ডা, জুরাসিক পার্ক কিংবা ডেসপিকেবল মি’র মতো থিম বেইজড শো দেখার সুযোগ। তাইতো সব বয়সী মানুষ জড়ো হয়েছেন এখানে। পরিসংখ্যান বলছে, এরইমধ্যে বেইজিংয়ের হটস্পট পর্যটন স্পটের মর্যাদা পেয়েছে এই রিসোর্ট।

বিশেষ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন বহু মানুষ। বাদ যায়নি পরিবারের ছোট্ট শিশুটিও। এখানে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান তাদের অভিজ্ঞতার কথা।

“দ্বিতীয় দিনের মতো এখানে আসলাম। প্রায় প্রতিটি রাইডে উঠেছি। গ্রীষ্মের ছুটি থাকার কারণে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে পুরো এলাকা।“

এতো গেল রাজধানী বেইজিংয়ের কথা। বাস্তবতা হলো গ্রীষ্মকালীন এই ছুটিতে পুরো দেশেই মানুষের চলাফেরা বেড়ে যায়। বিশেষ করে চীনের আরামদায়ক বাহন ট্রেনে পুরোটা সময় জুড়েই ছিলো উপচে পড়া ভিড়। চীনের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ৭০ কোটি ১০ লাখ ট্রিপ সম্পন্ন করেছে তারা।

চীনের সরকারি রেলওয়ে গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, জুলাইয়ের শুরু থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মানুষের ঢল নামে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। আবার ছুটিতে বহু মানুষ ফেরে নিজের গ্রামে, জন্মস্থানে।

তাইতো এই সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ রেলপথে যাতায়াত করে। চীনের রেলওয়ে গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড বলছে, চলতি মাসের শেষ সাপ্তাহিক ছুটিতে এক দিনেই দেশজুড়ে যাত্রী পরিবহন করেছে প্রায় দেড় কোটি।

গ্রীষ্মকালীন এ ছুটিতে চীনজুড়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ৪৪৪টি ট্রেন চলাচল করেছে। এই ট্রেন চলাচলের হার ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

যাত্রীসেবার মান বাড়াতে যাত্রীদের তথ্যপরিসেবা, টিকিট ক্রয় সংক্রান্ত সেবা, টিকিট পরিবর্তন কিংবা বিলম্ব ট্রেনের তথ্য আদান-প্রদানসহ সামগ্রিক নানা সেবার ব্যাপারে নজর দিচ্ছে চীনা রেলওয়ে।

চীনা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রীষ্মকালীন ছুটির এ সময়টা যাত্রীচাপ অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী নিজেদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাতে বাড়ি ফেরে। কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রীষ্মকালীন এই ছুটির যাত্রীচাপ আগস্টের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

 

ভিনদেশে চীন:

বিশ্বের গাড়ি শিল্পকে চাপে ফেলেছে চীনের বিদ্যুৎচালিত গাড়ি

চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় অভিজাত নানা গাড়ির ব্র্যান্ড। নজরকাড়া ডিজাইন আর আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল গাড়িগুলোকে করেছে অনন্য। ইউরোপের লাক্সারি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর সঙ্গে এখন টেক্কা দিচ্ছে চীনের অভিজাত ইলেকট্রিক কার। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গেল বছর চীনের ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রির পরিমাণ প্রায় সাত মিলিয়ন ছুঁয়েছে যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। 

ল্যাম্বরগিনি, পড়শে, বেন্টলি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর নাম শুনলেই চলে আসে বিলাসবহুল, অভিজাত শব্দগুলো। এগুলো দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, দামও আকাশ ছোঁয়া।

তবে সম্প্রতি চীনের ইলেকট্রিক গাড়িগুলো জনপ্রিয় হওয়ায়, নতুন এই জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোও।

ইলেকট্রিক গাড়ি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এগুলো কম কার্বন নিঃসরণ করে। আবার এ ধরনের গাড়িতে জ্বালানি নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না ব্যবহারকারীদের।

গেল কয়েক বছর ধরে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে চীনে। এর প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক গাড়ির বাজারে। এজন্য মার্কেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে ইলেকট্রিক গাড়ি বানানো শুরু করেছে ইউরোপের লাক্সারি ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সু সিংফেং জানিয়েছেন গেল বছর চীনে নির্মিত ইলেকট্রিক গাড়ি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে। বিক্রি হয়েছে ৭ মিলিয়নের কাছাকাছি। এই সংখ্যাটি বিশ্বের অটোমোবাইল জগতে গাড়ি বিক্রির চার ভাগের এক ভাগ।

পড়শে চায়নার ভাইস প্রেসিডেন্ট শেং তানশের জানিয়েছেন, "খরচ কম হওয়ায় তরুণ গাড়ি প্রেমিকরা প্রায় সব ধরনের ইলেকট্রিক গাড়ি পছন্দ করছেন। এ কারণে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের গাড়ি এখন রূপান্তরিত করা হচ্ছে নতুন জ্বালানি ব্যবস্থায়।"

এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২৫ সালের আগেই নতুন নির্মিত গাড়িগুলোর অধিকাংশই হবে ইলেকট্রিক অথবা প্লাগ ইন হাইব্রিড। সময় যত বাড়বে এই এমন গাড়ি ব্যবহারের হারও তত বাড়বে। পড়শের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ গাড়িকে ইলেকট্রিক মার্কেটে প্রবেশ করানো।

অন্যান্য ব্র্যান্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তারাও ঝুঁকছেন ইলেকট্রিক গাড়ির জগতে। বিশ্লেষকদের মতে, মানুষজন এখন কম খরচে পরিবেশবান্ধব গাড়ি চালাতে পছন্দ করছেন। গ্রাহকের সাশ্রয়ের দিকটি মাথায় রেখে নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাজিয়ে নিচ্ছেন গাড়ি নির্মাতারা।

প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

কোম্পানি প্রোফাইল:

ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চীনা কোম্পানির বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সই

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন বিষয়ক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হলো চীনের শীর্ষ ফটোভোল্টাইক কোম্পানি জিসিএল এসআই। ভারতীয় একটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে তারা। কোম্পানিটি বলছে, এর মাধ্যমে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম ও এ সংক্রান্ত বাণিজ্যের পরিধি আরও বিস্তৃত হলো।

এবার ভারতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে চীনের শীর্ষ ফটোভোল্টাইক কোম্পানি জিসিএল সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড –জিসিএল এসআই। একা নয়, ভারতীয় কোম্পানি এসএইএল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে এই চীনা কোম্পানি।

কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী ১ দশমিক ১ গিগাওয়াটের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবে এই দুই প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি এন টাইপ মডিউল সাপ্লাই ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করবে তারা।

চীনা সিকিউরিটিজ জার্নাল এক প্রতিবেদনে বলছে, এর মাধ্যমে এই চীনা কোম্পানির ব্যবসা সারা বিশ্বের আরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়লো। এর ফলে শুধু চীনে নয়, জিসিএল এসআই এর সুনাম নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্যান্য ভূখণ্ডেরও ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারতের মাটিতে প্রতি বছর একটি করে ২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্ল্যান্ট স্থাপন করা। এর পাশাপাশি কৌশলগত সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করার ব্যাপারেও একমত হয় উভয় পক্ষ।