আগস্ট ২৫: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসা গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় যৌথভাবে চীন-আফ্রিকা শীর্ষ সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।
জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত এবারের ব্রিকস শীর্ষসম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, ব্রিকস দেশগুলোর উচিত আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করা, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরস্পরকে সাহায্য করা, রাজনৈতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা, শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করা, একে অপরের সভ্যতা থেকে শেখা এবং বৈশ্বিক শাসন সুসংহত করা। এসব প্রস্তাব ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার এবং উচ্চ মানের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপন এবং বৈশ্বিক শাসনকে আরও ন্যায়সংগত করার জন্য সহায়ক হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ কূটনীতিক গের্ট গ্রোব্লার বলেন, তিনি আশা করেন ব্রিকস দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন অর্জনে চীন অব্যাহতভাবে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান বিশ্বে অনির্দিষ্ট ও অস্থিতিশীলতার উপাদান অনেক বেশি। নতুন বাজারের প্রতিনিধি হিসেবে ব্রিকস দেশগুলো ‘উচ্চ মানের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক’ স্থাপন করছে। এর অর্থ, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা উচ্চ মানের, যা এক দিকে বর্তমানে বিশ্বের দুর্বল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে, আবার অন্য দিকে, যুগ ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে পারে। কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব? চীন এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রস্তাব দিয়েছে।
ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন ইতোমধ্যে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির অর্থ গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ পাঁচটি সংস্থা গত মে মাসে যৌথভাবে ‘বিশ্বের ডিজিটাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচক’ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, এই সূচকের গড় স্কোর ২০১৩ সালে যেখানে ছিল ৪৫ দশমিক ৩৩, সেখানে ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ০১-এ। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ২৬ শতাংশ। এবারের শীর্ষ সম্মেলনে চীন বাস্তব-ভিত্তিক সহযোগিতা, বিশেষ করে ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ উন্নয়ন এবং সরবরাহ চেইনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতার ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় জোরদারের মাধ্যমে ব্রিকসে অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিক খুঁজে পাওয়া যায়।
চীন-ব্রিকস দেশগুলোর নতুন যুগের বিজ্ঞান উন্নয়ন উদ্যান নির্মাণ করবে চীন। এছাড়া চীন ‘বিকস দেশগুলোর বিশ্ব রিমোট উপগ্রহ ডেটা ও ব্যবহার সহযোগিতা মঞ্চ’ স্থাপনের চেষ্টা করবে, যাতে বিভিন্ন দেশের কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং দুর্যোগ উপশমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থন দেওয়া যায়। চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ‘ব্রিকস দেশগুলোর টেকসই শিল্প বিনিময় ও সহযোগিতা ব্যবস্থা’ও স্থাপন করতে ইচ্ছুক।
রাজনৈতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিরাপত্তা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তবে এখনো স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাধারা দেখা যাচ্ছে এবং ভৌগলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অনেক জটিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ‘ছোট চক্র’ তৈরি করে বৈরিতা সৃষ্টি করে। ‘ব্রিকস দেশগুলোর উচিত পরস্পরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরস্পরকে সমর্থন দেওয়া, তথ্য বিনিময় ও প্রযুক্তি সহযোগিতা জোরদার করা এবং ঝুঁকি প্রতিরোধ করা’। ব্রিকসে রাজনৈতিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণে চীন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষদের অভিন্ন আকাঙ্খার প্রতিফলন। এটা বিশ্বের শান্তি রক্ষায় ব্রিকস দেশগুলোর অবদান রাখার জন্য সহায়ক হবে।
এর সঙ্গে ব্রিকসের উচ্চ মানের সহযোগিতা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা বলার অধিকার বৃদ্ধি উপলব্ধি করা যায়। পুরোপুরিভাবে নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা পালন করা, আন্তর্জাতিক অর্থ ও মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব ও কথা বলার অধিকার বাড়ানো - এসবই চীনের বরাবরের অবস্থান। এ পর্যন্ত, নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। সদস্য দেশগুলোর প্রায় এক শ’টি প্রকল্পকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমা দেশের নেত্বত্বাধীন বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থায় নতুন বাছাই বিকল্প উত্থাপন করা হয়েছে। নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের আরও বড় ভূমিকা ভবিষ্যতে আরও ভারসাম্য ও সহনশীল আন্তর্জাতিক আর্থিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য খুব তাত্পর্যপূর্ণ।
(শুয়েই/রহমান)