আকাশ ছুঁতে চাই ৩২
2023-08-25 14:47:47

কী কী আছে এবারের পর্বে

 

১. মায়ের কাছ থেকেই সুরপ্রীতি পেয়েছেন ভায়োলিন শিল্পী লাও লি

২. ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নারীর কর্মসংস্থান

৩. নার্স  সুয়েফিং: সেবার মধ্যেই তার আনন্দ

৪. গ্রাম পুনর্জীবনে ভূমিকা রাখছেন নারীরা

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

মায়ের কাছ থেকেই সুরপ্রীতি পেয়েছেন ভায়োলিন শিল্পী লাও লি

একজন সফল ভায়োলিন শিল্পী লাও লি। তিনি তার সুরের জাদুতে শুধু চীনের শ্রোতাদেরই মুগ্ধ করেননি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পেয়েছেন খ্যাতি। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভায়োলিন বাজিয়ে পেয়েছেন শ্রোতাদের অকুণ্ঠ প্রশংসা। চলুন শোনা যাক খ্যাতিমান এই নারীর সফলতার গল্প।

 

 

চীনের একজন বিখ্যাত ভায়োলিন শিল্পী লাও লি। এই নারী যখন তার মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন থেকেই শুনছেন ভায়োলিনের সুর। লাও লি তার মায়ের কাছেই প্রথম ভায়েলিন বাজানো শেখেন। তার মা সংগীত ভালোবাসতেন।

লাও বেড়ে উঠেছেন হুবেই প্রদেশের উহান সিটি এবং পরে বেইজিংয়ে।  সেন্ট্রাল কনজারভেটরি অব মিউজিকের সংশ্লিষ্ট প্রাইমারি স্কুলে পড়েন তিনি। সেই শিশু বয়সেই তার সৌভাগ্য হয় কিংবদন্তি ভায়োলিন অধ্যাপক লিন ইয়াওচি(১৯৩৭-২০০৯) এর কাছ থেকে পাঠ গ্রহণের।

আঠারো বছর বয়সে তিনি ফুল স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটির কনজারভেটরি অব মিউজিক কলেজে পড়তে যান। পরে তিনি বস্টনের নিউ ইংল্যান্ড কনজারভেটরি অব মিউজিকে ভায়োলিন শিক্ষা করেন। সবজায়গাতেই তিনি পেয়েছেন  স্কলারশিপ এবং শিক্ষকদের অকুষ্ঠ প্রশংসা। এরপর স্পেনের মাদ্রিদেও সংগীত শিক্ষা করেন লাও। সেখানে কিংবদন্তি ভায়োলিন অধ্যাপক জাখার ব্রোনের কাছ থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি।

পাশ্চাত্যের ক্ল্যাসিকাল সুর যেমন তিনি ভায়োলিনে তুলে মুগ্ধ করেন শ্রোতাদের, তেমনি ঐতিহ্যবাহী চীনা অপেরার সুরও সমান দক্ষতায় বাজিয়ে শ্রোতাদের বিমোহিত করেন। ২০১৭ সাল থেকেই তিনি চীনা বেইজিং অপেরা ও অন্যান্য লোকজ সুর ভায়োলিনে তুলে প্রশংসা ও ভালোবাসা পেয়েছেন।

তিনি ভায়োলিনে চীনা লোকজ বাদ্যযন্ত্রের মতো সুর সৃষ্টি করতে পারেন। আরহু, সিয়াও সুয়োনার মতো বাদ্যযন্ত্রের সুর তার ভায়োলিনে মুগ্ধতা ছড়ায়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের  নিউ ইয়র্কে কারনেগি হলে ভায়োলিনে চায়নিজ মিউজিক বাজিয়ে হলশুদ্ধ শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেন তিনি। তার বাজানো শেষ হলে হলের সব শ্রোতা দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান।  লাও লির ভায়োলিন বাজানো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেন লাও তার ভায়োলিনে নারীর কোমলতা, সূর্যালোকের উষ্ণতা ও ঐতিহ্যের মাধুর্য সৃষ্টি করতে পারেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

 

 

 

ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নারীর কর্মসংস্থান

 

চীনের বিভিন্ন স্থানের রয়েছে বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। অবৈষয়িক একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো হুইছাং কাপড়। এটি মূলত শানসি প্রদেশের নারীদের এক বিশেষ ধরনের দক্ষতার ফসল। নারীদের এই বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

 

উত্তর চীনের শানসি প্রদেশে বেশ ভালো মানের তুলার চাষ হয়। এখানকার ইয়ংচি সিটির হুইছাং কাপড় বিশেষভাবে বিখ্যাত। এখানকার নারীরা এই কাপড় বুনন কৌশলকে ধারণ করছেন চারশ বছরের বেশি সময় ধরে। এই কাপড়ের জন্য চরকায় সুতা কাটতে হয়। বুননও হয় হাতে চালানো তাঁতে।

 

এই কাপড় যেমন রঙিন তেমনি বিচিত্র নকশায় সমৃদ্ধ। এই কাপড় বেশ নরমও। প্রজন্মের পর পর প্রজন্ম ধরে এখানকার স্থানীয় নারীরা এই কাপড় বয়ন করেন। নানী দাদী বা মা খালার থেকে তরুণ প্রজন্মের নারীরা শিখে নেন এর বয়নকৌশল।

নারীর এই বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কৌশল বের করেছে ইয়ংচি সিটির তংখাইচাং গ্রামের কর্তৃপক্ষ।

 তারা স্থানীয় নারীদের নিয়ে একটি স্টুডিও স্থাপন করেছে। এখানে একশ ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হয়। পোশাক, বিছানার চাদর, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয় রঙিন ফেব্রিক দিয়ে।

 

সারা চীনে এই পণ্য বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতেও রপ্তানি হয় এইসব পণ্য।স্থানীয় নারীদের কর্মসংস্থান হয়েছে এই কাপড় বুনন ও পণ্য তৈরির স্টুডিওকে কেন্দ্র করে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

নার্স  সুয়েফিং: সেবার মধ্যেই তার আনন্দ

নার্সিং একটি মহান পেশা। এই পেশায় অনেক নারী নিজেদের ক্যারিয়ার গঠন করেছেন এবং সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলছেন অনেক পীড়িত মানুষকে। চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নারী ফং সুয়েফিং এমনি একজন নার্স। মানব সেবাতেই তিনি খুঁজে পান তার জীবনের আনন্দ।

নার্স ফং সুয়েফিং। সুদর্শনা এই তরুণীর বয়স মাত্র ২৩ বছর। তিনি এরই মধ্যে নার্সিং পেশায় চমৎকার ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। ফং সুয়েফিং সিনচিয়াংয়ের উরুমছি শহরের একটি হাসপাতালে চাকরি করেন।  ‘উসু হাসপিটালের চায়নিজ মেডিসিনের নার্স তিনি। জেরিয়াট্রিক এনসেফালোপ্যাথি বিভাগে তার কাজ। এখানে সব প্রবীণ মানুষদের চিকিৎসা দেয়া হয়। ফং মনে করেন প্রবীণ মানুষরা অনেকটা শিশুর মতো। তাদের যত্ন নেয়ার কাজে  শিশুদের যত্ন নেয়ার মতোই ধৈর্য্য ও স্নেহমমতার প্রয়োজন হয়।

ফং তার রোগীদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তাদের ব্যক্তিগত কথা তিনি শোনেন। প্রতিদিন তাদের খোঁজ খবর নেন। বয়স্ক রোগীদের কাউকে আন্টি, কাউকে চাচা ডাকেন তিনি। তাদের সঙ্গে সুখ দুঃখের গল্প করেন। প্রবীণরাও তাকে নিজের সন্তান বা নাতনির মতো মনে করেন।

ফং মনে করেন প্রবীণদের সেবায় মানসিক সাপোর্টটা খুব জরুরি। তারা অসুস্থ হলেই মনে করেন এই বুঝি মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলো। তারা সহজে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু ফং পরম মমতায় তাদের বুঝিয়ে বলেন যে অসুস্থতা মানেই জীবনের সমাপ্তি নয়। তাদেরকে সাহস দেন, চাঙ্গা করে তোলেন।

অবসর সময়ে বেড়াতে ভালোবাসেন ফং। ভালোবাসেন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতেও। তবে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় তার পেশা। মানবসেবার এই মহান পেশায় নিজের জীবনকে নিবেদন করেছেন ফং।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

গ্রাম পুনর্জীবনে ভূমিকা রাখছেন নারীরা

 

চীনের সাম্প্রতিক গ্রাম পুনর্জীবনের ধারায় অনেক নারী নিজের কর্মসংস্থান খুঁজে নিচ্ছেন সাথানীয় পর্যায়ে গড়ে ওঠা ছোট ছোট রিসোর্টে। চলুন শুনে আসি এমন পুনর্জাগরণের গল্প।

চীনে এখন চলছে গ্রাম পুনর্জীবনের ধারা।এই ধারায় চীনের গ্রামগুলোর চেহারা পালটে দিচ্ছেন উদ্যোগী নারী পুরুষরা। অনেক নারী ও পুরুষ নিজেদের গ্রামে গড়ে তুলছেন ছোট ছোট রিসোর্ট। সেসব জায়গায় কর্মসংস্থান হয়েছে কাছাকাছি অনেক গ্রামের মানুষের। এমনি একজন নারী শি লিংলিং। ছোংছিং মিউনিসিপালটির ছিচিয়াং জেলার শিচিয়াও টাউনশিপের ফুলু গ্রাম। এই গ্রামের কাছের একটি টাউনশিপ চোংফেং এর  মেয়ে শি লিংলিং। তার বয়স ২৭ বছর। সম্প্রতি তিনি চাকরি পেয়েছেন ফুলু গ্রামের পাহাড়ি রিসোর্টে। রিসোর্টটি প্রতিষ্ঠা করেছেন গ্রামেরই এক যুবক ।

শি লিংলিংয়ের কাজের মধ্যে রয়েছে এই রিসোর্টে বেড়াতে আসা শিশুদের আউটডোর ক্লাস নেয়া। প্রকৃতির মাঝখানে বেড়াতে এসেও শিশুরা যেন লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন শি।

শি বলেন এই চাকরি তাকে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে। তার সহকর্মীরা মোটেই গুরু গম্ভীর নন। তাদের সঙ্গে সহজে কথা বলা যায়। তারা আন্তরিকভাবে সাহায্য করেন। শি জানান তার হোমটাউনের অনেক নারী এভাবে নিজের গ্রামের কাছাকাছি কাজ পাওয়ায় দূরের শহর থেকে ফিরে এসেছেন। তারা সবাই মিলে অংশ নিচ্ছেন গ্রামকে নতুন ভাবে জাগিয়ে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, হোসনে মোবারক সৌরভ, আফরিন মিম, আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্বার

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল