এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা সিনচিয়াং নিয়ে কথা বলব।
তাজা ও মশলাদার কাবাব
১৯৮৬ সালে সিসিটিভি বসন্ত উত্সব গালায় নাটক ছেন ফিসি ও চু শি মাও চীনা দর্শকদের প্রশংসা কুড়ায়। এই নাটক সিনচিয়াং-শৈলীর স্ন্যাককে বিখ্যাত করেছে। হ্যাঁ, বলছিলাম সিনচিয়াংয়ের কাবাবের কথা। কাবাব কে পছন্দ করে না!
কাবাবের ইতিহাস
কাবাবের ইতিহাস পুরাতন। সম্ভবত মানুষ আগুন আবিষ্কার করার পর থেকেই কাবাব খাচ্ছে। তাঁরা শিকার করা বিভিন্ন প্রাণীর মাংস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করেছিল সম্ভবত আগুন আবিষ্কারের শুরুর দিকেই। সেই সময়ে, কোনো সরঞ্জাম ও মশলা ছিল না। চীনের কিছু ঐতিহাসিক নথি অনুসারে, প্রাচীন কালে অনেকেই ‘পোড়া মাংস’ শখ করে খেতেন। পশ্চিম হান রাজবংশের মা ওয়াং তুই এক নম্বর সমাধিতে ‘গরুর রোস্ট’, ‘কুকুরের পাঁজরের রোস্ট’, ‘হগ রোস্ট’, ‘হরিণ রোস্ট’ এবং ‘মুরগির রোস্ট’-সহ বিভিন্ন খাদ্যসম্পর্কিত পুরাকীর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশেষ করে শানতুং প্রদেশের চুছেং জেলার লিয়াং থাই এলাকায় পূর্ব হান রাজবংশের সুং চুংয়ের সমাধি থেকে আবিষ্কৃত ‘রান্নার ছবি’-এ বারবিকিউর প্রক্রিয়া ও সরঞ্জাম দেখা যায়, যার মিল আছে সিনচিয়াংয়ের বর্তমান বারবিকিউ সরঞ্জামের।
কাবাবকে উইগুর ভাষায় বলা হয় ‘খাওয়াফু’। সিনচিয়াংয়ের কাবাবের রকম অনেক বেশি: লাল উইলো বারবিকিউ, নান বারবিকিউ, শেলফ মাংস, ভাজা বারবিকিউসহ অনেক ধরণের বারবিকিউ রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে বারবিকিউ-তে কিছু উদ্ভাবনও দেখা গেছে। সাধারণ কাবাব ছাড়াও, বাঁশের কাঠি দিয়ে কাবাব, নেট তেল দিয়ে কাবাব, ইত্যাদি আছে। তবে, সব ধরনের কাবাবের কাঁচামাল মূলত একই। কখনও কখনও, মাটনকে আরও কোমল করার জন্য, চুলায় ভাজার আগে ডিমের সাদা অংশ ও ফ্লুরোসেন্ট পাউডার দিয়ে তৈরি পেস্টে ডুবিয়ে রাখা হয়। ঐতিহ্যবাহী উইগুর কাবাব এখনও সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ, যা শুধুমাত্র রাস্তার খাবার নয়, একটি সুস্বাদু খাবারও যা টেবিলে পরিবেশন করা যেতে পারে।
সিনচিয়াংয়ের কাবাবের স্বাদ কেন এতোটা অনন্য?
সিনচিয়াংয়ের কাবাবের স্বাদ কেন এতোটা অনন্য? এর দুটি বাস্তব কারণ আছে। প্রথমত, সিনচিয়াংয়ের ভেড়াগুলো ভালো জাতের, যা সিনচিয়াংয়ের চমত্কার ঘাসের ফল। সিনচিয়াংয়ের লোকদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় কথা প্রচলিত আছে: ‘সিনচিয়াং ভেড়া সোনার রাস্তায় হাঁটে, প্রাকৃতিক চীনা ভেষজ ওষুধ খায়, মিনারেল ওয়াটার পান করে, মাংসের গন্ধ কী ভালো না হয়ে উপায় আছে? সিনচিয়াংয়ে ভেড়ার ভান্ডার পরিপূর্ণ। মাংস ঠাণ্ডা হলেও কোনো গন্ধ পাবে না। তুমি কি এটা খেতে পারো না?’
বস্তুত, সিনচিয়াংয়ের অধিবাসীরা তাদের কাবাব নিয়ে খুবই গর্বিত। গর্বের কারণও আছে। মূল ভূখণ্ডের বেশিরভাগ ভেড়া কৃত্রিম পরিবেশে লালিত-পালিত হয়। আর সিনচিয়াং ভেড়ার জাত যেমন আলাদা, তেমনি এর লালন-পালনও আলাদা। এগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়। তাই মাংসের স্বাদও আলাদা। দ্বিতীয়ত, সিনচিয়াং কাবাবে এক ধরনের বিশেষ মসলা ব্যবহার করা হয়, যার নাম জিরা। জিরাকে ‘বেনজো মৌরি’ বা ‘বন্য মৌরি’ও বলা হয়। গুঁড়ো করার পরে, এটি একটি খুব অনন্য স্বাদের, তেলসমৃদ্ধ, এবং শক্তিশালী সুগন্ধযুক্ত হয়। এটি প্রধানত মশলা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি প্রথম-শ্রেণীর মশলা যা ভাজা ও গ্রিল করার জন্য ব্যবহার করা আবশ্যক।
জিরার গুঁড়া দিয়ে মাটন প্রক্রিয়াজাত করা মাছের গন্ধ দূর করতে পারে এবং চর্বি দূর করতে পারে, মাংসকে আরও সুস্বাদু এবং সুগন্ধিযুক্ত করতে পারে এবং মানুষের ক্ষুধা বাড়াতে পারে। এই দুটি অনন্য বৈশিষ্ট্য চীনের অন্য অঞ্চলে খুব কমই পাওয়া যায়।
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (উর্মি/আলিম)