ব্রিকসের দায়িত্ববোধ থেকে সুন্দর ভবিষ্যত উন্মোচন করতে চায় চীন: সি চিন পিং
2023-08-24 15:24:49

আগস্ট ২৪: ব্রিক‌স সদস্য দেশগুলোর ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন গতকাল (বুধবার) সকালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট মাতামেলা সিরিল রামাফোসা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরাসরি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনলাইনে এতে যোগ দেন। “ব্রিকস ও আফ্রিকা: অংশীদারিত্বের সম্পর্ক সম্প্রসারণ, পরস্পরের প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো, টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন, সহনশীল বহুপক্ষবাদ জোরদার” এই প্রতিপাদ্যে পাঁচ দেশের নেতারা ব্রিক‌স সহযোগিতা এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে গভীরভাবে মত বিনিময় করেন এবং মতৈক্য পৌঁছান।

শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং “ঐক্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন অর্জন, দায়িত্ববোধ থেকে শান্তির জন্য চেষ্টা করা” শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, “বর্তমানে সারা বিশ্ব নতুন সংঘাত ও সংস্কারের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। ব্রিকস দেশগুলো হলো আন্তর্জাতিক কাঠামো গঠনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমরা সবসময় উন্মুক্ত, সহনশীল ও সহযোগিতার ব্রিকস চেতনা মেনে, ব্রিকস সহযোগিতাকে সম্প্রসারণ করে চলেছি। আমরা সবসময় নতুন বাজারের দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকার ও প্রভাব বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করি। বিকস দেশগুলো সবসময় স্বাধীন কূটনীতির পক্ষপাতী। তারা কখনই বাইরের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না। ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক মতৈক্যে আছে এবং তাদের অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে।”

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের উচিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা, উচ্চ মানের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, বৈশ্বিক প্রশাসন ও সংস্কারকে আরও ন্যায়সংগত পথে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা এবং বিশ্বে আরও বেশি স্থিতিশীলতা আনা।”

সি চিন পিং আরও বলেন, “আমাদের উচিত আর্থ-বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা। উন্নয়ন হলো বিভিন্ন দেশের বৈধ অধিকার; অল্প কিছু দেশের বিশেষ অধিকার নয়। ব্রিকস দেশগুলোকে উন্নয়ন পথের সঙ্গী হতে হবে, অর্থনৈতিক হুমকির বিরোধিতা করতে হবে। চীন-ব্রিকস দেশগুলোর নতুন যুগের বিজ্ঞান উন্নয়ন উদ্যান নির্মাণ করবে চীন। চীন ‘বিকস দেশগুলোর বিশ্ব রিমোট উপগ্রহ ডেটা ও ব্যবহার সহযোগিতা মঞ্চ’ স্থাপনের চেষ্টা করবে, যাতে বিভিন্ন দেশের কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং দুর্যোগ উপশমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থন দেওয়া যায়। চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ‘ব্রিকস দেশগুলোর টেকসই শিল্প বিনিময় ও সহযোগিতা ব্যবস্থা’ স্থাপন করতে ইচ্ছুক।”

সি চিন পিং বলেন, “আমাদের উচিত রাজনৈতিক নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা এবং শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। ব্রিকস দেশগুলোর উচিত পরস্পরের কেন্দ্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরস্পরকে সমর্থন দেওয়া, তথ্য বিনিময় ও প্রযুক্তি সহযোগিতা জোরদার করা এবং ঝুঁকি প্রতিরোধ করা।

“আমাদের উচিত মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করা। চীন মনে করে, ব্রিকস দেশগুলোর উচিত শিক্ষা খাতের সহযোগিতা জোরদার করা, ডিজিটাল শিক্ষা সহযোগিতা ব্যবস্থা স্থাপন করা এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বিনিময় সম্প্রসারণ করা।”

সি চিন পিং আরও বলেন, “ন্যয্যতায় অবিচল থাকতে হবে। বৈশ্বিক শাসন হলো আন্তর্জাতিক সমাজে উন্নয়নের সুযোগ ভাগাভাগি করা এবং বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সঠিক বিকল্প। ব্রিকস দেশগুলোর উচিত সত্যিকার অর্থের বহুপক্ষবাদ মেনে চলা, জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে কেন্দ্র করে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থাকে সমর্থন করা, উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, নতুন উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থার সংস্কার ত্বরান্বিত করা।”

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন ব্রিকস দেশগুলোর সঙ্গে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ-চেতনায় কৌশলগত অংশিদারিত্বের সম্পর্ক জোরদার করতে, বিভিন্ন খাতের সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে, ব্রিকসের দায়িত্ব দিয়ে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং ব্রিকসের দায়িত্ববোধ থেকে সুন্দর ভবিষ্যত উন্মোচন করতে চায়।

(শুয়েই/রহমান)