গ্রীষ্মের তাপ এড়িয়ে ‘যাযাবর পাখি স্টাইলের’ পর্যটন এখন চীনাদের নতুন পর্যটন পদ্ধতি
2023-08-22 16:34:35

কখনও শহরে হেঁটে হেঁটে বৈশিষ্ট্যময় সুস্বাদু খাবার খান কিংবা কখনও পাহাড়ে হাইকিং করেন। যাই করেন না কেন তিনি গ্রীষ্মকালের ঠাণ্ডা উপভোগ করেন। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কুয়াংচৌয়ের শিক্ষক শেন ছিংই এসি ঘরে বসে গ্রীষ্মের তাপ এড়িয়ে চলেননি, বরং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাময়িকভাবে কুইচৌয়ে বাস করার মধ্য দিয়ে আরাম ও ঠাণ্ডা খুঁজে বের করেছেন।

চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে চীনের বহু জায়গায় তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বাড়ে। ‘চীনের গ্রীষ্মের তাপ এড়ানো শহর’ হিসাবে সুনাম অর্জনকারী কুইইয়াং শহরের পর্যটনে এসময় একটা জোয়ার আসে। অনেক ‘যাযাবর পাখি স্টাইলের’ পর্যটক সাময়িকভাবে কুইইয়াং শহরে বাস করতে এসে ‘পাঞ্চ কার্ড’ পরিদর্শন থেকে সরে অভিজ্ঞতার ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া ‘নিমজ্জন’ ভ্রমণে আগ্রহী হন।

শিক্ষক শেন ছিংইয়ের পরিবার কুইইয়াংয়ের হুয়াসি এলাকা থাকছে। তাদের অস্থায়ী বাসা ৫৩ হেক্টরের হুয়াসি পার্কের পাশে। ভোরে তাঁর মা-বাবা স্থানীয় জনগণের সেঙ্গ পার্কে থাইজি অনুশীলন করেন। তিনি তাঁদের বাচ্চাকে নিয়ে হাইকিং বা পর্বতারোহণ করেন অথবা পায়ে হেঁটে হেঁটে প্রকৃতির রহস্য আবিষ্কার করেন।

সন্ধ্যার সময় শেনের পরিবার গাড়িতে করে কুইইয়াং শহরের পুরনো এলাকায় টক স্যুপে গরুর মাংসের মতো বৈশিষ্ট্যময় সুস্বাদু খাবার খেতে আসে। খাওয়ার পর তারা স্থানীয়দের মতো নদীর তীরে ফুটপাথে হাঁটাহাঁটি করেন এবং রাতের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করেন।

শেন ছিংই বলেন, পর্যটন কেবল কোনও একটি এলাকায় ঘুরে যাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং স্থানীয় অধিবাসীদের মতো জীবনযাপন করা এবং আঞ্চলিক ভাষা শিখা উচিত। কুইইয়াংয়ের ঠাণ্ডা আবহাওয়া প্রাকৃতিক ‘এসি ঘরে’ থাকার মতো। সেখানে তিনি নিজের বাড়ি থাকার মতো আবেগ বোধ করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মনোরম জলবায়ু-পর্যটন কাঙ্ক্ষিত স্থানের গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণীয় শক্তিগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে। চীনের পর্যটন গবেষণালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে গ্রীষ্মের তাপ এড়ানো পর্যটন এবং সংশ্লিষ্ট বাজারের আকার বর্তমানে ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

গ্রীষ্মের তাপ এড়ানো সম্পদের অধিকারী কুইচৌ অনেক ‘জলবায়ু যাযাবর’র কাঙ্ক্ষিত স্থানে পরিণত হয়েছে।

কুইচৌয়ে সবচেয়ে আগে গড়ে ওঠা বৃহত্তম ‘যাযাবর পাখি স্টাইলের’ সাময়িক আবাসস্থলগুলোর অন্যতম চিউবা শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৩৫০ মিটার উঁচু জেলাটির শানবাও কমিউনিটির আশপাশে রয়েছে বন। গ্রীষ্মকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার পর্যটক আকর্ষণ করে এ শহর। এসব পর্যটক মূলত গ্রীষ্মের তাপ এড়াতে এখানে আসেন। গ্রীষ্মের তাপ এড়ানো পর্যটন পাহাড়ি এলাকার ‘গ্রীষ্ম অর্থনীতি’কে শক্তিশালী করেছে।

শানবাও কমিউনিটির অধিবাসী মা দি জানান, মে মাসের আগেই তাঁর হোমস্টের সব ঘর বুক করা হয়ে গেছে। তাঁর বার্ষিক আয় এবার ২ লাখ ইউয়ানে পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে কমিউনিটিতে ৪শ’র বেশি হোমস্টে আছে। পর্যটকরা এখানে এসে দুয়েক মাস থাকতে পারেন।

কমিউনিটিতে ছোট ছোট পর্যটকের দল দেখা যায় সর্বত্র। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাহাড়ি পথে হাঁটাহাঁটি করেন, কেউ কেউ গাছের ছায়ায় বসে চা খান আর খোশগল্প করেন। আবার কেউ কেউ নাচ করেন।

গ্রীষ্মকালীন তাপ এড়ানো জীবনে নতুন রং আনতে সম্প্রতি চিউবা শহরে গ্রামীণ পর্যটন ও সংস্কৃতি শিল্প ঋতু কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাময়িকভাবে বসবাসকারী পর্যটক ব্যায়াম দল, নৃত্যদল এবং শৈল্পিক দল গঠন করে গান গাওয়া, নৃত্য ও ফ্যাশন শোসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশনা উপস্থাপন হয়।

আরামদায়ক ও মনোরম জলবায়ু, সহজ ও প্রাকৃতিক গ্রামীণ জীবন, আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা… গ্রীষ্মকালের তাপ এড়ানো ‘যাযাবর পাখি স্টাইলের’ সাময়িক অবস্থান চীনা পর্যটনের নতুন পদ্ধতিতে পরিণত হচ্ছে। (প্রেমা/রহমান)