প্রসঙ্গ : কেন আরো বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চায়
2023-08-22 13:09:41

অগাস্ট ২২: ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষসম্মেলন দক্ষিণ আফ্রিকায় উদ্বোধন করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে ব্রিকস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, আর এর মধ্যে ব্রিকসের সদস্য বাড়ানো একটি প্রধান বিষয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা জানায়, বর্তমানে ৪০টিরও বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, আর ২০টিরও বেশি দেশ ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিকস বিষয়ক বিশেষ দূত আনিল সোকলাল চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেছেন যে, অনেক দেশ ব্রিকসের পরিবারের একটি সদস্য হতে চায়; তা প্রমাণ করেছে যে, আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানে ব্রিকসের নেতৃত্বের সামর্থ্য সম্বন্ধে সারা বিশ্ব খুব আস্থাবান। তাহলে এমন আস্থা কোথা থেকে এসেছে?

ব্রিকস সহযোগিতার ইতিহাস পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, উন্নয়ন সবচেয়ে মৌলিক বিষয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, ব্রিকস দেশগুলোর জিডিপি আগের ৮.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে এই বিষয়ে জি-৭-এর অবদান ৬৪.৬ থেকে কমে দাঁড়ায় ৪২.৯ শতাংশে। ব্রিটেনের অ্যাকর্ন ম্যাক্রো কনসাল্টিং-এর মার্চ মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বে ব্রিকসের অর্থনৈতিক অবদান জি-৭কেও ছাড়িয়ে গেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ২০২২ সাল তথা ব্রিকসের ‘চীনা বর্ষ’ থেকে ব্রিকস দেশগুলোর সহযোগিতা অনেক ফলপ্রসূ হয়েছে। যা এবার জহানেসবার্গ শীর্ষসম্মেলনের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে। গত বছরের জুন মাসে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের ১৪তম শীর্ষসম্মেলনে ‘ব্রিকস বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ এবং টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগ’ এবং ‘ব্রিকস দেশের সরবরাহ চেইন সহযোগিতা জোরদার উদ্যোগ’সহ বিভিন্ন দলিল অনুমোদিত হয়, এর সঙ্গে ‘বেইজিং ঘোষণাও’ প্রকাশিত হয়, যা নতুন যুগে ব্রিকস সহযোগিতার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছে। ২০২২ সালে চীন ১৭০টিরও বেশি সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, প্রায় ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ সুফল পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ব্রিকসের পাঁচ সদস্য দেশের বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় ৯.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ বেশি।

দক্ষিণ আফ্রিকান কর্মকর্তা জানান, এবার শীর্ষসম্মেলনে সদস্য দেশগুলো নিজ দেশের মুদ্রায় লেনদেন করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে ব্রিকস দেশগুলোর আর্থিক সহযোগিতা আরো দ্রুততর হবে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ফ্রান্সের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেরার্ড আরাউড সম্প্রতি বলেছেন, ব্রিকস দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রাণশক্তি বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে। ব্রাজিলের তথ্য মাধ্যম জানায়, ব্রিকস সহযোগিতা ব্যবস্থা স্থাপনের পর থেকে যে সুফল পাওয়া গেছে, তা অনেক দেশের উন্নয়নের আস্থা বৃদ্ধি করেছে, বিশ্বে তা ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

একটি নতুন সহযোগিতা ব্যবস্থা হিসেবে, ব্রিকস ইতোমধ্যে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা এবং বিশ্ব পরিচালনাকে নেতৃত্ব দেয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে, ব্রিকস দেশগুলো পরস্পরের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থকে সম্মান করে, স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তাধারার বিরোধিতা করে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্রিকস দেশগুলোর অর্থনীতির পরিমাণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে ১৪.১৫ শতাংশ। গণস্বাস্থ্য খাতে ব্রিকস দেশগুলোর টিকা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ব্রিকস দেশগুলো বহুপক্ষবাদ এবং বিশ্বের পরিচালনা ব্যবস্থাকে সংস্কার করার অভিন্ন কথা জানিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মনে করে, পশ্চিমা দেশের নেতৃত্বের শৃঙ্খলার বাইরে ব্রিকস দেশগুলো নতুন এক চিন্তাধারা উত্থাপন করেছে।

ব্রিকস কোনো রুদ্ধদ্বার ক্লাব নয়। ২০১৭ সালের সিয়া মেন ব্রিকস শীর্ষসম্মেলন থেকে ২০২২ সালের বেইজিং ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন পর্যন্ত, সবসময় সদস্য দেশ বাড়ানোকে সমর্থন করে। ব্রিকস আরো বেশি অংশীদারদের এতে যোগদানে স্বাগত জানায়।

(শুয়েই/তৌহিদ)