এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। চীনের অন্যতম বাসযোগ্য শহর সিয়ামেন
২। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘চীনের মানুষ খুবই আন্তরিক ,খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ’
৩। ই কং ফাং : পিঁপড়ার বাড়ি
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। চীনের অন্যতম বাসযোগ্য শহর সিয়ামেন
চীনের অন্যতম বাসযোগ্য শহর সিয়ামেন দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে অবস্থিত বন্দরনগরী সিয়ামেন। চীনের সবচেয়ে গোছানো শহরগুলোর মধ্যে একটি। চীনের দেশের সেরা ১০টি বাসযোগ্য শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে সিয়ামেন।
ইতিহাস
সিয়ামেন শহর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস চীনের পশ্চিম ছিন রাজবংশের (২৬৫-৩১৬) সময়কালের। সেই সময় সিয়ামেন ছিল থং আন কাউন্টির অংশ। বর্তমানে সিয়ামেন চীনের পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি। এছাড়া এ শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
সংস্কৃতি
চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে প্রচলিত একটি লোকপ্রথা মাজু। চীনা সামুদ্রিক দেবী মাজু’র পূজা সিয়ামেনের স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম। কথিত আছে, ৯৬০ সালে ফুচিয়ানে লিন মো নামে এক বুদ্ধিমতি ও পরোপকারী মেয়ে জন্ম নেন। তিনি যৌবনকাল থেকেই অন্যদের সাহায্য করতেন। পরবর্তীতে তিনি তাওবাদে সাফল্য অর্জন করেন এবং অমরত্ব লাভ করেন। তিনি সারা দেশে ঘুরে বেড়াতেন ও সমুদ্রে জেলেদের উদ্ধার ও সাহায্য করতেন।
শীর্ষ আকর্ষণ
সিয়ামেন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে ফেরিতে করে মাত্র ছয় মিনিট গেলেই চিওলং নদীর মোহনায় অবস্থিত কুয়ালাংক্যু দ্বীপটি চোখে পড়ে। এটি এ শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হিসাবে পরিচিত। বৈচিত্র্যময় স্থাপত্য এবং বহুসাংস্কৃতিক ইতিহাসের জন্য এ দ্বীপটি বিখ্যাত। ২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক স্থান হিসেবে এই দ্বীপটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত করে।
খাদ্য
সিয়ামেনের রাস্তায় পাওয়া যায় ঝিনুকের অমলেট। এটি এ শহরবাসীর পছন্দের খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই অমলেট ডিম, ঝিনুক, পেঁয়াজ ও সবুজ শাকসবজি দিয়ে বানানো হয়, যা খুবই সুস্বাদু।
পরিবহন
‘চীনের প্রধান শহর যেমন বেইজিং, শাংহাই ও কুয়াংচৌ থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য সিয়ামেনে বিমানে যাওয়া খুবই সুবিধাজনক। এ ছাড়া রেলপথে ভ্রমণ করাও পর্যটকদের জন্য অন্যতম পছন্দ হতে পারে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শিহাবুর রহমান
২। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘চীনের মানুষ খুবই আন্তরিক ,খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ’
বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউটের চীনা ভাষার শিক্ষক নিলু আক্তার। এক সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে পাড়ি দেন চীনে। চীনের কুইচৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার স্নাকোত্তর করেন তিনি।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও নিয়োজিত আছেন। এছাড়া পদ্মাসেতু প্রজেক্টের বাংলা ভাষার প্রশিক্ষক হিসেবে চীনা নাগরিকদের বাংলা ভাষা শেখাচ্ছেন তিনি।
নিলু আক্তার
ঘুরে বেড়াইয়ের এবারের পর্বে কথা হয়েছে বাংলাদেশের তরুণ এই শিক্ষকের সাথে।
প্রশ্ন- ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি?
নিলু- আলহামদুলিল্লাহ্ , আমি ভালো আছি।
প্রশ্ন- আপনি তো চীনে চার বছরেরও বেশি সময় থেকেছেন, সেখানে পড়াশুনা করেছেন। সেখানে বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘুরার সুযোগও হয়েছে আপনার। জানতে চাই আপনি চীনের কোথায় কোথায় গিয়েছেন?
নিলু- আমি চীনের কুইচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরেরও বেশি সময় ছিলাম। এই দীর্ঘসময়ে কুইচৌর বেশিরভাগ জায়গা দেখার সুযোগ হয়েছে। কুইচৌর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চীনের সর্ববৃহত জলপ্রপাত হুয়াংকৌসু জলপ্রপাত। এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের একটা জায়গা। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপও এই প্রদেশে অবস্থিত, সেটাও ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। মাওথাই আদিবাসী অঞ্চলে গিয়েছিলাম, যেটা মূলত মাউথাই ওয়াইনের জন্য বিখ্যাত। চেরী ফুলের জন্য বিখ্যাত লিউফানশুয়েইতে গিয়েছিলাম।পাশাপাশি চীনের সবচেয়ে বড় চা বাগানেও ঘুরেছি।
নিলু আক্তার
এছাড়া কিছু প্রাচীন শহর ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। কুইচৌ মূলত অসম্ভব সুন্দর একটি পাহাড়ি এলাকা। কুইচৌর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেকাউকে মুগ্ধ করবে। আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি কুইচৌর আদিবাসী অঞ্চলে গিয়ে। এখানে গিয়ে দেখেছি তাদের জীবনযাত্রা পুরোপুরি আলাদা। খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ তারা। চীনের মানুষ খুবই আন্তরিক ,খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমি চীনা ভাষাটা জানতাম। তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে আমার কোন অসুবিধা হয়নি। তাদের সাথে আমি সহজেই মিশে যেতে পারতাম।
প্রশ্ন- আমরা জানি আপনি তো খুব ভালো চীনা ভাষা বলতে পারেন। আবার চীনা ভাষা শিক্ষার ক্লাসও নিচ্ছেন। আপনি যদি আপনার ভাষা শিক্ষার জার্নিটা আমাদের শেয়ার করতেন।
নিলু- চীনা ভাষা শিক্ষার জার্নিটা আমার শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে চীনে যাওয়ার পরে।আমি দেশে আসলে কখনো চীনা ভাষা শিখেনি। মূলত চীনে গিয়ে এক বছর চীনা ভাষা শিখি ।এরপর তিনবছরের একটা মাস্টার্স করি। যেহেতু চীনে ছিলাম তাই চীনা ভাষা শেখাটা সহজ ছিল। চীনাদের সাথে অনেক সময় কাটাতাম। কথা বলতাম।
নিলু আক্তার
প্রশ্ন- যারা এখনো চীনে যায়নি, কিন্তু যাওয়ার আগ্রহ আছে তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?
নিলু- চীন অসম্ভব সুন্দর একটা দেশ। যারা চীনে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যেতে চায় তারা যাওয়ার আগে চীনা ভাষা কিংবা চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে যায় তাহলে তাদের ঘুরাটা আনন্দদায়ক হবে।
প্রশ্ন- আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
নিলু- আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম
৩। ই কং ফাং : পিঁপড়ার বাড়ি
সিরামিকের অসাধারণ সব শিল্পকর্ম। সেইসঙ্গে পিঁপড়ার বাড়িতে ঘোরার সুযোগ। এমন একটি মজার থিম পার্ক হলো ই কং ফাং।
ইউননান প্রদেশের একটি ছোট শহর খাই ইউয়ান সিটি। এখানকার চিয়ানশুই কাউন্টিতে রয়েছে এই মজার থিম পার্ক। এখানে সিরামিকের শিল্পকর্মের বিশাল প্রদর্শনী রয়েছে। অনেক বিখ্যাত শিল্পীর তৈরি সিরামিক পোর্সেলিন, মাটি ইত্যাদির ভাস্কর্য, ফুলদানি আরও নানা রকম শোপিস নিয়ে বিশাল একটি ভবনে প্রদর্শনীর আয়োজন রয়েছে এখানে।
এখানে চীনের ঐতিহ্যবাহী পোর্সেলিন ও সিরামিকের তৈরি শিল্প সামগ্রীর ইতিহাস যেমন জানা যাবে তেমনি এই মাধ্যমে আধুনিক শিল্পীদের কাজের নমুনাও দেখা যাবে। এখানে একটি জাদুঘরও আছে। সেখান থেকে এই শির্পের ইতিহাস বিষয়ে জানা যায়।
এখানে নান্দনিক শিল্পসামগ্রীর প্রদর্নী চলছে সারা বছর ধরে। কেউ চাইলে কিনতেও পারেন এ ধরনের শিল্পবস্তু।
থিম পার্কে একটু এগোলে চোখে পড়বে বিচিত্র আকৃতির সব স্থাপনা। সিরামিক ইট দিয়ে এসব স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশাল আকারের পিঁপড়ার ঢিবি ও উঁই ঢিবি। মাটির নিচে পিঁপড়ার বাড়ির নকশা যেমন হয়ে থাকে সেই নকশা অনুসরণ করে এই স্থাপনাগুলো তৈরি করা হয়েছে।
একটি গোলকধাঁধা বা ল্যাবেরিন্থ রয়েছে এখানে। এর ভিতরে ঢুকে গোলকধাঁধার মজা উপভোগ করা যায়।
এই থিম পার্কে আছে আরও বেশ বড় বড় কিছু সিরামিক ইটের তৈরি স্থাপনা যার ভিতরে বসার এবং অনেক রকম অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ আছে।
এখানে আছে বিশাল পাথর ও মাটির পাহাড়। পাহাড়ে চড়ার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। এসব পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পার্কটিতে জলাশয় এবং ফুলের বাগানও আছে। আছে সেতু দিয়ে জলাশয়ের উপরে যাওয়ার ব্যবস্থা। এখানে রেস্টুরেন্টে বিশেষ লোকজ কুইজিন উপভোগের সুযোগও আছে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী