এশিয়ায় ‘ক্ষুদ্র ন্যাটো’ স্থাপনে যুক্তরাষ্ট্রের অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে
2023-08-21 16:21:28

অগাস্ট ২১: বেইজিং সময় শনিবার যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া প্রথম শীর্ষসম্মেলন ক্যাম্প ডেভিডে শেষ হয়েছে। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তিন দেশের নেতারা শুধু সাংবাদিক সম্মেলনেই ১৭বার ‘চীনের’ কথা উল্লেখ করেছেন। শীর্ষসম্মেলনে প্রকাশিত তিনটি বিবৃতিতে তাইওয়ান প্রণালীর অবস্থা, দক্ষিণ চীন সাগরের বিষয়ে তথাকথিত নিরাপত্তার সমস্যা সৃষ্টি করে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছিল। বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র মুখে ‘চীনের বিরুদ্ধে নয়’ এমন কথা বলে, তবে বাস্তব আচরণ কিন্তু একেবারে ভিন্ন। আসলে এবার শীর্ষসম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য কি, সবাই বুঝতে পারে।

 

ক্যাম্প ডেভিডি হল যুক্তরাষ্ট্রের ‘এস্টেট কূটনীতির’ গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেখানে ১৯৫৯ সালের মার্কিন-সোভিয়েত ইউনিয়ন শীর্ষসম্মেলন, ১৯৭৮ সারের মিশর-ইসরাইল শীর্ষসম্মেলন এবং ২০০০ সালের ফিলিস্তিন-ইসরাইল বৈঠকসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক কার্যক্রম হয়েছিল। এবার যুক্তরাষ্ট্র জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে বৈঠক করার উদ্দেশ্য আসলে খুব স্পষ্ট, তা হল ‘ক্ষুদ্র ন্যাটো’ প্রতিষ্ঠা করা এবং তথাকথিত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ এগিয়ে নেওয়া। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা প্রধান মাগোজাকি উকেরু বলেছিলেন: যুক্তরাষ্ট্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাধ্যমে বৈরিতা করতে চায়, তা সবাই জানে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভুল করে’ চীনকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্ধারণ করে এবং সার্বিকভাবে চীনকে প্রতিরোধ করছে। গত এক বছরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন অনেকবার ‘চীনের আশেপাশের কৌশলগত পরিবেশ সৃষ্টি করার’ কথা উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষকরা বলেন, এবার মার্কিন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষসম্মেলন হল যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলগত লক্ষ্যের বাস্তবায়ন।

তাহলে, এই শীর্ষসম্মেলন কি সত্যি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘এশিয়ার ক্ষুদ্র ন্যাটো’ গড়ে তুলবে?

 

হোয়াইট হাউসের খবর অনুযায়ী, সম্মেলনে যদিও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করা, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছে, তবে বাস্তবায়নের বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়নি। বিশ্লেষকরা বলেন, আগামী বছর থেকে তিনটি দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তাই এবারের শীর্ষসম্মেলন বেশিরভাগ তিন দেশের একটি ‘পলিটিকাল শো’।

 

আর অংশগ্রহণকারী দেশের পক্ষ থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ। আসলে তার নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। তিন দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বও অনেক বেশি।

শীর্ষসম্মেলন আয়োজনের আগে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনীতি কাঠামোর’ মধ্যে তিমি মাছ ধরার বিষয় নিয়ে বিতর্ক করে। জাপানের কাছে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘এশিয়ার ক্ষুদ্র ন্যাটো’ স্থাপনের মাধ্যমে জাপান ‘শান্তি সংবিধান’ থেকে বের হতে চায় এবং তার সামরিক খাতে শক্তিশালী দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। তবে জাপানকে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কও বিবেচনা করতে হয়। বর্তমানে চীন হল জাপানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, চীনের সঙ্গে বৈরিতা- তার স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, তিন দেশের মিত্র সম্পর্কের সাহায্যে তথাকথিত "গ্লোবাল সেন্ট্রাল কান্ট্রি" হয়ে ওঠার আশা করে। তবে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের সম্পর্ক এখনও ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি "শর্ট বোর্ড"। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার জাপানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য জাতীয় মর্যাদা বিসর্জন দেওয়া এবং জাতীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে চায়। তবে, এখনও দু’দেশের জনগণের মধ্যে গুরুতর বৈরিতা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান কতটা সহযোগিতা করতে পারে- তা প্রশ্নবিদ্ধ।

তার চেয়েও বড় কথা, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষসম্মেলনে সহযোগিতার কথা বললেও বাস্তবে তারা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি সংকট তৈরি করতে চেয়েছিল। যার তীব্র বিরোধিতা করবে এই অঞ্চলের দেশগুলো। দক্ষিণ কোরিয়ার "জিংজিয়াং শিম্বুন" পত্রিকা বলেছে যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার সম্প্রসারণ "দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়।" ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট জাপানের ভিজিটিং প্রফেসর সাইওজি কাজুতেরু’র মতে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা এবং নিজেই লাভবান হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত "উত্তর-পূর্ব এশীয় জোটকে" উন্নীত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ‘এশিয়ার ক্ষুদ্র ন্যাটো’ স্থাপন করতে চায়, তবে তা আঞ্চলিক জনগণের শান্তি ও উন্নয়নের অধিকারের বিরুদ্ধে। শান্তিপ্রেমী দেশ ও অঞ্চলের জনগণ নিশ্চয় এর দৃঢ় বিরোধিতা করবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)