বিজ্ঞানবিশ্ব ৩২তম পর্ব
2023-08-21 19:14:01

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩২তম পর্বে যা থাকছে:

* ভবিষ্যৎ জীবনেরই এক ঝলক দেখা গেলো বিশ্ব রোবট প্রদর্শনীতে

* মানবসদৃশ রোবটের উন্নয়নে জোর দিচ্ছে চীন 

* প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ে সূর্যের আলোকে কাজে লাগাচ্ছে গবেষকরা

ভবিষ্যৎ জীবনেরই এক ঝলক দেখা গেলো বিশ্ব রোবট প্রদর্শনীতে

 

এ যেনো এক অবাক কল্পনার রাজ্য! মানবসদৃশ এক রোবট শোনাচ্ছে চীনের প্রাচীন কবি লি পাইয়ের কবিতা। শুধু তাই নয়, রোবটটি দেখতেও কবি লি পাইয়ের মতোই!

এই দৃশ্য দেখা যায় চীনের বেইজিংয়ে চলমান বিশ্ব রোবট প্রদর্শনীতে। ১৬০টির বেশি চীনা ও আন্তর্জাতিক রোবোটিকস কোম্পানির ছয়শ’র বেশি রোবট প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। মানুষের মতো দেখতে রোবটগুলো বেশি দৃষ্টি কারছে দর্শকদের। প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, কোনোটি কবিতা শোনাচ্ছে তো কোনোটি কফি বানিয়ে দেখাচ্ছে দর্শকদের। 

মানবসদৃশ রোবট ছাড়াও প্রদর্শনীতে আরও এসেছে সুপার হিরো রোবট, বাড়িতে গৃহস্থালি কাজ করার রোবট, বাগান থেকে ফল তোলার রোবট, গাড়ি চালানো রোবট, রোবট কুকুর, রোবট প্রজাপতিসহ আরো নানা প্রকারের রোবট। 

মানবসদৃশ রোবট নিয়ে প্রদর্শনীতে আসা ইএক্স রোবট কোম্পানির প্রেসিডেন্ট লি পয় আং বলেন মানবসদৃশ রোবটগুলো সাধারণত পরিষেবা খাতে ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, “আমাদের মূল প্রযুক্তি হলো নমনীয় জয়েন্ট। জয়েন্টগুলো খুবই যথাযথ ও ছোট হওয়া বাঞ্ছনীয়। চেহারার অংশে জায়গা খুবই কম। এটিকে ফুটিয়ে তোলা খুবই কষ্টসাধ্য একটি কাজ।”

প্রদর্শনীতে আরেকটি রোবট দেখতে পাওয়া গেলো যেটি কফি শিল্পী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ড্রিমি টেকনোলজির প্রডাক্ট ডিরেক্টর লিউ ইউলং বলেন, পরবর্তীতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করার প্রশিক্ষন দেওয়া হবে রোবটদের।


তিনি বলেন, “এটি ছিলো প্রথম ধাপ। পরবর্তীতে মানুষের পরিবার ও ব্যবসাজীবনে একটি সাহায্যকারী হাত হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে মানবসদৃশ রোবটগুলোকে। শিল্প উৎপাদনে অপারেটর হিসেবেও  এগুলোকে কাজে লাগাবো আমরা।” 

রোবট ডিজাইনাররা বলছেন, তাদের কাজ হল মানুষকে সাহায্য করার জন্য রোবটকে আরও শক্তিশালী , নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তোলা। 

২২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। রোবট শিল্পে চীনের বিস্ময়কর অগ্রগতির পরিচয় মিলছে এই প্রদর্শনীতে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

মানবসদৃশ রোবটের উন্নয়নে জোর দিচ্ছে চীন 

 

শিল্পখাতে রোবটের ব্যবহার চীনের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে শিল্পখাতে ব্যবহার্য রোবটগুলো থেকে মানবসদৃশ রোবট আরও বেশি জটিল কাজ করতে সক্ষম। ফলে শিল্পখাতেও মানবসদৃশ রোবট এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে জানায় রোবটপ্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ডাটা রোবোটিকস। 

 

পাশাপাশি সেবাখাতে মানবসৃশ্য রোবটের কোনও জুড়ি নেই বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়াং পিং। তিনি মনে করেন, মানবসদৃশ রোবটই সেবাখাতের ভবিষ্যত।  

ওয়াং পিং বলেন, “শিল্পখাতে ব্যবহার্য রোবটগুলোকে দিয়ে আমরা একটি কাজ ঠিক যেভাবে করিয়ে নিতে চাই তেমনভাবেই প্রোগ্রাম করি। তবে সেবাখাতে আমরা এমন একটি রোবট চাই, যেটি নতুন কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে।”

এদিকে শাংহাই সেজ ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলোজি করপোরেশন লিমেটেডও মানবসদৃশ রোবটখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও ছ্যং চিয়ানচেং বিশ্বাস করেন, শিল্পখাতে ব্যবহার্য রোবট থেকে মানবসদৃশ রোবটের উপর বেশি ভরসা করবে মানুষ। কেননা মানবসদৃশ রোবটগুলো এমন অনেককিছুই করতে সক্ষম, যা শিল্পখাতে ব্যবহার্য রোবটগুলো করতে পারে না।

তিনি বলেন, “আমাদের পণ্যের মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হলো মানবসদৃশ রোবট। ট্রেডিশনাল রোবটিক হাত থেকে আলাদা এই মানবসদৃশ রোবটগুলো। এই রোবটগুলোর হাত, পা, চোখ সবই আছে। পাশাপাশি এগুলো অনেক জটিল কাজ করতেও সক্ষম, যেখানে কিনা ট্রেডিশনাল রোবটগুলো শুধু সহজ কাজগুলো করতে পারে।” 

মানবসদৃশ রোবটের কর্মক্ষমতা বাড়াতে আরও কী করা যায়, সে বিষয়ক গবেষণায় সাহায্য নেওয়া হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও। স্কুল অব ইলেকট্রনিক ইনফরমেশন এন্ড ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপ-পরিচালক ওয়াং চিংছুয়ান বলেন, বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত রোবটের ধারণা উঠে আসছে। কেননা আমরা রোবট দিয়ে এখন এমন কাজ করাতে চাই, যা করতে হলে চিন্তাশীল হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, শাংহাই এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পখাতে বিশেষ জোর দিচ্ছে।

শাংহাইয়ের স্থানীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে উদ্ভাবন-চালিত উন্নয়নের গুরুত্বের কথা বলে আসছে এবং শহরের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উচ্চ-প্রযুক্তির বিকাশের জন্য একটি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নির্দেশিকা অনেক রোবট নির্মাতাকে শাংহাইয়ে ব্যবসা করতে আকৃষ্ট করতে পারে। 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ে সূর্যের আলোকে কাজে লাগাচ্ছে গবেষকরা

 

সূর্যের আলো সমুদ্রের পানি ব্যবহার করে প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের এক যুগান্তকারী পদ্ধতি বের করেছে চীনা গবেষকরা। নতুন এই পদ্ধতি একইসাথে যেমন পরিবেশবান্ধব তেমনি সাশ্রয়ীও বটে। সাংহাইয়ের গবেষক দলটি জানায় নতুন এই পদ্ধতি ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।

ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির রসায়ন ও আণবিক প্রকৌশল স্কুলের গবেষক দল অধ্যাপক চিয়াং সুয়েফেংয়ের নেতৃত্বে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে প্লাস্টিক ভাঙ্গতে সক্ষম হোন। এই প্রক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে কাজে লাগানো হয় তেজষ্ক্রিয়তাবিহীন ইউরেনিয়াম বা ইউরানিল ক্যাশনকে। এই উপাদানটি সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে ও সহজেই বের করা যায়।

চিয়াং বলেন, তার গবেষণা দলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনুযায়ী ইউরানিল ক্যাশন ও সূর্যের আলোকে শক্তির উৎস হিসেবে কাজে লাগালে তা সাধারণ প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, “পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধবই শুধু নয়,পাশাপাশি খুবই কার্যকরী ও সাশ্রয়ী। প্রাকৃতিকভাবে পচতে আগে এসব প্লাস্টিকের যুগের পর যুগ সময় লাগতো, মাঝে মাঝে শতাব্দীও পেরিয়ে যেতো। তবে নতুন এই পদ্ধতিতে আমরা একদিন বা দুদিনের মধ্যেই এই প্লাস্টিকগুলোকে ভেংগে ফেলতে পারছি।”

গবেষক দলটি এখন পর্যন্ত নয়টি সাধারণ প্রকারের প্লাস্টিককে কাঁচামালে রূপান্তরিত করেছে। এখন সেই কাঁচামাল আরো উন্নত প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। গবেষক দলটি জানায়, এটি অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন ফার্মাসিউটিক্যালস, সুগন্ধি ও উত্পাদন সামগ্রী তৈরিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সম্প্রতি গবেষণা দলটি এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র আন্তঃবিভাগীয় বিজ্ঞান জার্নাল সায়েন্স বুলেটিনে প্রকাশ করে। চিয়াং বলেন, তারা চেষ্টা করেছেন তাদের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াকে আরো বাস্তবমুখী ও সহজ করতে। এমনকি এই প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিকের বোতলকে রিসাইকেলের পূর্বে পরিষ্কারও করতে হয় না। 

চিয়াং বলেন, “বোতলের ভেতর পানি থাকলে কোনো সমস্যা নেই। বোতলের লেবেলও খুলতে হয় না। এগুলো আমাদের রিসাইকেলের প্রক্রিয়াকে কোনোভাবেই বাঁধা দেয় না। রিসাইক্লিংয়ের পর প্লাস্টিক বর্জ্যগুলোই হয়ে উঠে অতি মূল্যবান ও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য উন্নতমানের প্লাস্টিকের কাচামাল।”

গবেষণাপত্রে চিয়াং উল্লেখ করেছেন যে তারা ১ কেজি প্লাস্টিক বোতল দুদিনের মধ্যে কাচামালে রূপান্তরিত করতে পারেন এই প্রক্রিয়ায়।

চিয়াংয়ের গবেষণা দলটি সালফার রসায়নে বিশেষভাবে দক্ষ। সালফারকে সরাসরি সূর্যের আলোর সাহায্যে অক্সিডাইজ করার প্রচেষ্টা চালানোর সময় গবেষোনা দলটি আবিষ্কার করে যে প্লাস্টিককে কাচামালে রূপান্তরিত করতে ইউরানিল একটি আদর্শ অনুঘটক। প্রক্রিয়াটিকে একটি পরিশোধিত রূপ দিতে গবেষণা দলটির সাত বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। অন্যান্য প্রকারের প্লাস্টিক ও মিক্সড প্লাস্টিক রিসাইকেলের জন্য এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান, সজিদ রাজু

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী