দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ২২ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা- এ পাঁচটি প্রধান উদীয়মান অর্থনীতি এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং চীন ও আফ্রিকার মধ্যে সংহতি আরও বাড়ানোর উপায় অন্বেষণ করা হবে সম্মেলনে।
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে, প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং জোহানেসবার্গ সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। সি এবং রামাফোসা চীন-আফ্রিকা নেতাদের সংলাপে কো-চেয়ার হবেন।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে সি’র দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, গত পাঁচ বছরে তাঁর দ্বিতীয় সফর। চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা যৌথভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি রূপরেখা দেবেন।
জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ নেতাদের এ সম্মেলন উচ্চ প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে কারণ কোভিড মহামারির পর বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রথমবারের মতো সরাসরি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানান, পাঁচটি দেশের নেতারা আন্তর্জাতিক পটভূমিতে প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জগলোর বিষয়ে মতবিনিময় করবেন এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে সমন্বয় ও সহযোগিতা বাড়াবেন বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ তারা পরিবর্তন ও বিশৃঙ্খলায় ভরা বিশ্বে স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক শক্তি যোগ করতে চান।
নেতারা বহুপাক্ষিকতাকে সমুন্নত রাখতে এবং অভিন্ন উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করার বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
চায়না ইনস্টিটিউট অফ কনটেম্পরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের ইনস্টিটিউট অফ আফ্রিকান স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক লি ওয়েনতাও বলেছেন, ব্রিকস নেতাদের সশীরের উপস্থিতি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সংহতি এবং সহযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
শীর্ষ সম্মেলনে আলোচ্য সূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে একটি, হবে ব্রিকসের সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, মিশর এবং ইথিওপিয়াসহ ২৩টি দেশ ব্রিকসের নতুন সদস্য হওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে। জোটের সম্প্রসারণ ব্রিকস সহযোগিতার উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃতি প্রদর্শন করবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে চীন ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিভিন্ন সংকটের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ায় ব্রিকসে চীনের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য এখন ক্রমবর্ধমান উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে, যা বিশ্বকে আরও বেশি নিশ্চিততা প্রদান করে।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইরিনা কোকুশকিনা বলেন, চীন শুধু নিজের স্বার্থ না থেকে ব্রিকসের আওতায় সমতা ও পারস্পরিক উপকারের ভিত্তিতে সহযোগিতার নজীর স্থাপন করেছে।
ব্রিকসের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্টের কথা তুলে ধরে ইরিনা বলেন, ব্রিকস কোনো প্রকার রাজনৈতিক চাপ থেকে তার সদস্যদের মুক্ত রেখে নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়। বাস্তবিকভাবেই ব্রিকস ব্রিকস একটি ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে একটি অভিনব দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে।
জোহানেসবার্গ শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসের প্রভাব এবং চীনের ভূমিকা আরও বাড়বে বলে আশা করেন তিনি। ব্রিকস বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ ও অর্থনীতির ২৬ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে উল্লেখ করে ইরিনা বলেন, যখন কিছু গোষ্ঠী শুধুমাত্র কয়েকটি দেশের স্বার্থ পূরণ করে তবে তারা ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব হারাবে এটাই স্বাভাবিক।
ব্রিকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটা ভিত্তি। অবকাঠামো, আন্ত-সংযোগ, কর্মসংস্থান পরিবেশ বিষয়ে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমন্ট ব্যাংক-এনডিবি’র মাধ্যমে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ১০০টির বেশি টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সদস্য দেশগুলোতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকস বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে। ধারাবাহিক প্রকল্প গ্রহণের মাধম্যে সংস্থাটি মানসম্পন্ন উন্নয়নের একটা নজীর স্থাপন করেছে।
মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের পরিচালক আলেক্সি মাসলভ বলেন, ব্রিকস কতগুলো অসাধারণ উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রথমটি হল স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বন্দোবস্ত। এ কারণে, ব্রিকস এনডিবি প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে এটি প্রধানত অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করে। দ্বিতীয়টি হল বাণিজ্য নিরাপত্তা, পণ্যবাহী পরিবহন নিরাপত্তা, এবং কার্গো নিরাপত্তাসহ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পরামর্শের বিষয়ে। বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আলেক্সি জোর দিয়ে বলেন যে বৈশ্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে চীনের উদ্যোগ সব পক্ষের উপর দায়ত্বি ভাগ করে দেয় যা টেকসই উন্নয়ন অর্জনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
জোহানেসবার্গ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সির উপস্থিতি ব্রিকস ও চীন-আফ্রিকা ব্যাপক ও কৌশলগত সহযোগিতার অগ্রগতিতে বেইজিংয়ের আস্থা ও প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করবে এটি প্রত্যাশিত।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, সিএমজি বাংলা ডেস্ক।