চলতি বাণিজ্য পর্ব ৩১
2023-08-18 18:33:02

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

 

চলতি বাণিজ্যের ৩১তম পর্বে থাকছে:

১. চীন-ইউরোপ ৩০ শতাংশ মালামাল পরিবহন হয় যে বন্দর দিয়ে

২. যৌথ বিনিয়োগে এসইএমপি-টিসিএল

৩. চীনের সাংহাইতে এনার্জি স্টোরেজ প্ল্যান্ট স্থাপন করছে টেসলা

 

চীন-ইউরোপ ৩০ শতাংশ মালামাল পরিবহন হয় যে বন্দর দিয়ে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের অন্যতম বন্দর আলাশাঙ্কোও। চীনের সঙ্গে ইউরোপের মালবাহী ট্রেন চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর এটি। চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪ হাজার মালবাহী ট্রেন চলাচলের রেকর্ড করেছে এই বন্দর। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চীন-ইউরোপ ট্রেন চলাচলের ৩০ শতাংশই হয় এই রুট ব্যবহার করে।

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের আলাশাঙ্কোও বন্দর। এখান থেকেই আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও রাশিয়া হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে মধ্য-এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপের ২১টি দেশের। তাইতো চালু হওয়ার পর থেকেই ব্যস্ততায় ভরা এই বন্দর চলতি বছর মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

বিশেষ করে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই বন্দর। শুধু তাই নয়, চীনের সঙ্গে ইউরোপের কৌশলগত যোগাযোগ ও সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দরও এটি। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায় চলতি বছর চীন-ইউরোপ ৪ হাজার মালবাহী ট্রেন চলাচলের রেকর্ড করেছে এই বন্দর। চীনের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি চীনের মালবাহী ট্রেন চলাচলের নতুন রেকর্ড।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, চীন থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে মালবাহী ট্রেন চলাচল হয় তার ৩০ শতাংই হয় এই বন্দর ব্যবহার করে। বিশেষ করে চীন থেকে বিভিন্নরকম গাড়ির যন্ত্রাংশ, তৈরি পোশাক, নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং দ্রব্য রফতানি হয় এসব দেশে।

বন্দরের তথ্য বলছে, এসব পণ্য নিয়ে চীন থেকে মালবাহী ট্রেন পোল্যান্ডের মালাশেউইচে বন্দরে পৌছে দেবে। চীনের কাস্টমস জানায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসে ৪ হাজারতম মালবাহী ট্রেন ছেড়ে গেছে এই মালাশেউইচে বন্দরের উদ্দেশ্যে।

আলাশঙ্কোও বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা রকম সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম চালাচ্ছে চায়না রেলওয়ে উরুমচি ব্যুরো। বিশেষ করে এই রেলওয়ে স্টেশন থেকেই টিকেট উৎপাদন, পরিবর্তন এমনকি বদল করার নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা।

ওয়াং ওয়েই, কাস্টমস কর্মী, আলাশঙ্কোও কাস্টমস

“কাস্টমস ক্লিয়ারন্স প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে সেবার মান বাড়ানো, সেবাগ্রহীতাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহজ করা, কার্গো তালিকা ক্লাসিফিকেশন করার কাজ করার কাজও করছি আমরা। আবার স্টেশনেই কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স করার জন্য দ্রুততম সময়ের এক্সপ্রেস সেবা নিয়েও কাজ করছি আমরা।“

এখান থেকে বিদেশগামী একটি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার যাবতীয় কার্যক্রম এখন শেষ করা যায় মাত্র ২০ মিনিটে। অন্যদিকে বিদেশ থেকে চীনে প্রবেশ করার জন্য ট্রেনগুলোকে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় এখানে।

ইয়াং রুই, উপ-পরিচালক, আলাশঙ্কোও স্টেশন

“চায়না-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেসের পশ্চিম চ্যানেলের খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। এ কারণেই আমরা আমাদের দলের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে কাস্টমস ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানো, সীমান্তে পর্যবেক্ষণ আরও জোরদার করার কাজ চলছে। পরিবহনের সক্ষমতা আরও বাড়ানোসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।“

চীন থেকে ইউরোপের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের মোট ১০৯টি লাইন আছে চীনে। বিশেষ করে এই বন্দর থেকে যাওয়া লাইনগুলো চীনের মোট ২৫টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল মিউনিসিপ্যালিটি অতিক্রম করেছে।

 

ভিনদেশে চীন:

যৌথ বিনিয়োগে এসইএমপি-টিসিএল

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে চীন ও ব্রাজিলের দুটি কোম্পানি। ব্রাজিলের কোম্পানি এসইএমপি এবং চীনা কোম্পানি টিসিএল এই যৌথ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল। এখানকার বিশাল এক বাজার তাই দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি। এখানেই বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে যৌথ বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে চীন ও ব্রাজিলের দুই বৃহৎ দুই কোম্পানি।

একটি চীনের ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী জায়ান্ট কোম্পানি টিসিএল এবং অন্যটি ব্রাজিলের বৃহৎ গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি এসইএমপি।

সম্প্রতি চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনঝেনে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়। ব্রাজিলিয়ান ব্যবসায়ী ও এসইএমপির প্রতিষ্ঠাতা অফনসো ব্রানডাও এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে চীন ছুটে আসেন। চীনা বিনিয়োগের ব্যাপারে তারও এতোটাই আগ্রহ যে ৯৪ বছর বয়সেও তিনি নিজের কর্মস্পৃহা দেখিয়েছেন।

অন্যদিকে চীনা কোম্পানি টিসিএল গ্রুপের পক্ষে চুক্তি সই করেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান লি তংশেং। তারা জানান, ব্রাজিলের বাজারে সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করাই তাদের লক্ষ্য।

এই দুটি কোম্পানির যৌথ সহযোগিতা এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৬ সালেও দুটি কোম্পানি ব্যবসায়ীক নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে। বিশেষ করে ওই বছর ব্রাজিলে দুই কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে গঠন করা হয় এসইএমপি-টিসিএল। এই যৌথ কোম্পানি বর্তমানে ব্রাজিলের অন্যতম প্রধান টেলিভিশন সেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

 

 

 

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনের সাংহাইতে এনার্জি স্টোরেজ প্ল্যান্ট স্থাপন করছে টেসলা

চীন আন্তর্জাতিক বেতার: যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে , চীনের সাংহাই শহরে একটি বিশাল কারখানা তৈরি করা হবে, যা নির্মাণ করবে এনার্জি স্টোরেজ প্রোডাক্ট মেগাপ্যাক। এর মাধ্যমে তৈরি হবে শক্তিশালী ব্যাটারি, সঞ্চয় করবে শক্তি। গাড়িসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এই শক্তি ব্যবহার করা যাবে।

গাড়ির জগতে বিশ্বজুড়ে আলোচিত প্রতিষ্ঠান টেসলা। সম্প্রতি সাংহাইতে আয়োজিত প্রকল্প স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে টেসলার পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন প্ল্যান্টটি স্থাপনের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করবে এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে। একইসঙ্গে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শুরু করবে উৎপাদন।

প্রাথমিকভাবে প্রতি বছর ১০ হাজার মেগাপ্যাক ইউনিট উৎপাদন করবে কারখানাটি, যা প্রায় ৪০ গিগাওয়াট আওয়ারের সমান। এই ব্যাটারি বিশ্বব্যাপী বিক্রি করা হবে বলে জানায় টেসলা।

টেসলার ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, মেগাপ্যাক হল একটি শক্তিশালী ব্যাটারি, যা শক্তি সঞ্চয় করে। এছাড়া পাওয়ার গ্রিডকে স্থিতিশীল রাখতে এবং বিভ্রাট প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

চীনের লিন-কাং বিশেষ অঞ্চলে কোম্পানির নতুন প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হবে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানি।

সাংহাই মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল চুয়াং মুডি বলেন, এই প্রকল্পটি নতুন শক্তি-সঞ্চায়ন করতে শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি সাংহাইয়ের সবুজ এবং কম-কার্বন রূপান্তরকে এগিয়ে নেবে।

চীনে বিদেশী কোম্পানিগুলো ব্যবসা করার অনুমতি পাওয়ার পর, গেল ২০১৯ সালে সাংহাইতে প্রথমবারের মতো গাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় টেসলা। 

সাংহাইয়ের এই কারখানাটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে টেসলার প্রথম গিগাফ্যাক্টরি। প্ল্যান্টটি ২০২২ সালে ৭ লাখ ১০ হাজার যানবাহন সরবরাহ করে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি।

সাংহাই পর্যায়ক্রমে টেসলার প্রাথমিক পর্যায়ের যানবাহন রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক, ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলে টেসলার বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর ভালো চাহিদা তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু