সিয়ে বিন রুং চীনের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। ২০১৪ সালে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি সি ছুয়ান প্রদেশের লিয়াং শান ছি জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সি ছাং শহরের পাশে একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ২০১৫ সালে চাকরি বদলে তিনি তা লিয়ান শান পর্বতাঞ্চলের দরিদ্র মেই কু জেলার চা কান লুও গ্রামের স্কুলে যোগ দেন।
এখানে আসার পর প্রথম শিশু দিবস সম্পর্কে সিয়ে বিন রুং বলেন, প্রথম শিশু দিবসে সবাই সুন্দরভাবে সেজে নাচ করে ও গান গায়। বাবা-মায়েদের সঙ্গে খেলায় অংশগ্রহণ করে শিশুরা। আমি সেসব অনুষ্ঠান আয়োজন করি। কারণ আমি তাদের জানাতে চাই, পর্বতাঞ্চলে কঠিন পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও শহরের শিশুদের মতো ভালোবাসা তাদের প্রাপ্য। প্রতিটি শিশু আদর ও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।
তিনি চা কান লুও গ্রামে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় আট বছর ধরে। এখানে আসার পর সিয়ে বিন রুং প্রাথমিক স্কুলের প্রথম বর্ষের বাচ্চাদের পড়াতেন। দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত শিক্ষাদানের পর তার বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটা তিনি পারেন না। এ কঠিন গ্রামীণ পরিবেশে দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষাদান সম্পর্কে সিয়ে বিন রুং বলেন, একদিকে সরকার ও শিশুদের বাবা-মায়েদের আস্থা, অন্যদিকে শিশুদের প্রত্যাশা আমাকে অনেক বছর এখানে বাস করতে উত্সাহিত করেছে। ক্লাসরুমের জানালায় শিশুদের চোখের উজ্জ্বল আলো প্রতিফলিত হয়, যা আমার মনে খুব ছাপ ফেলে।
সিয়ে বিন রুংয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়। তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে সিয়ে বিন রুং অবসরপ্রাপ্ত সেনা ব্যুরোর কাছে সাহায্য চান। ব্যুরোর সাহায্যে ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট চা কান লুও গ্রামের ৯ জন শিক্ষার্থীকে ছোং ছিং মিনজু মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি করান।
ডিমোছুলি নামের শিক্ষার্থী বলে, ছোং ছিং মিনজু মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়া যেন স্বপ্ন দেখার মতো। আমি কল্পনাও করতে পারিনি। এতো ভালো স্কুলে লেখাপড়া করতে সক্ষম হয়েছি আমি। শিক্ষক সিয়ে’ সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না।
ছিয়ে চিরে ইউ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলে, শিক্ষক সিয়ে আমাদের প্রাথমিক স্কুলে না আসলে আমি হয়ত এখন কোথাও না কোথায় গরু পালন করতাম। প্রতিদিন কৃষিকাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই জন্মাতো না। আমার জীবন সেভাবেই কেটে যেতো।
গত কয়েক বছরে চীনে দারিদ্র্যবিমোচন খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখন গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে অনেক গ্রাম। চা কান লুও গ্রামে অতীতের কাচা রাস্তার পরিবর্তে বর্তমানে পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। সিয়ে বিন রুং বলেন, অতীতে আমার পাহাড় থেকে নামতে ১১ ঘন্টা লাগতো। বর্তমানে গাড়িতে মাত্র ১ ঘন্টা লাগে।
লিয়াং শান ই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে শিক্ষার পরিবেশও অনেক উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে, পরিবারের বাবা-মায়েরা লেখাপড়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং শিশুদের লেখাপড়াকে সমর্থন করছেন। শিশুদের লেখাপড়ার ইচ্ছেও অনেক বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে সিয়ে বিন রুং বলেন, শিশুদের অগ্রগতি ও সুন্দরভাবে বড় হওয়া দেখে আমি খুব আনন্দিত বোধ করি।