চাঙা হয়েছে বহির্গামী ভ্রমণ; গ্রীষ্ম অর্থনীতির নতুন চালিকাশক্তি গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি
2023-08-17 16:36:39


আগস্ট ১৭: গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় তাপপ্রবাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্ম-অর্থনীতিও চাঙা হয়েছে। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটি হলো কোভিড-১৯ মহামরিকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে নামিয়ে আনার পর প্রথম গ্রীষ্মকালীন ছুটি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্য এবং হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানগামী ফ্লাইটে যাত্রী চলাচল আগের গতি ফিরে পেয়েছে। অন্তর্মুখী ও বহির্গামী যাত্রীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ গ্রীষ্মে বেইজিংয়ের বিমানবন্দরে অন্তর্মুখী ও বহির্গামী ফ্লাইট এবং পর্যটকের সংখ্যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত জুলাই মাসে ফ্লাইটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৩৬-এ এবং পর্যটকের সংখ্যা ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩ শ’ ছাড়িয়ে যায়। গত তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দৈনিক ফ্লাইটের সংখ্যা ২শ’এ পৌঁছায় এবং পর্যটকের সংখ্যা প্রথমবারের মতো মাসে ১০ লাখে উন্নীত হয়।

বেইজিং শুল্ক দপ্তরের অধীন রাজধানী বিমানবন্দরের কর্মকর্তা চাং ছিয়াং ছিয়াং বলেন, “চলতি বছরের প্রথমার্ধে অন্তর্মুখী ও বহির্গামী যাত্রীর সংখ্যা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; বিশেষ করে গত জুন মাসের তুলনায় গত জুলাই মাসে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপগামী ফ্লাইটের সংখ্যা বেড়েছে বেশি হারে।”

গোটা চীনে গ্রীষ্মকালের পরিবহন চাঙ্গা হয়েছে। শাংহাই পু তোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড দেখা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ পর্যটনের বিভিন্ন আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থলে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা বহির্গামী মোট পর্যটকের সংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি। পু তোং বিমানবন্দর ৪০টিও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে ফ্লাইট আবার চালু করেছে। গত জুলাই মাসে আসা-যাওয়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যায়, যা গত মাসের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

গ্রীষ্মকাল থেকে শেন জেন ও হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হয় ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা শেন জেনে অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য অনেক হংকংবাসীকে আকর্ষণ করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি লুও হু স্থলবন্দর আবার চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত যাত্রীর সংখ্যা ২ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

ভোগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। চীন বিশ্বের বৃহত্তম ফল ভোক্তা দেশ। থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ফল উত্পাদন ও বিক্রির পিক সিজন চলছে। বন্দরে আসিয়ান দেশগুলো থেকে আসা বিপুল পরিমাণ ফল দেখা যাচ্ছে।

চীন-ভিয়েতনাম সীমান্ত অঞ্চলে ইয়ুন নান প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর হিসেবে ইয়ুন নান হ্য খৌ বন্দরকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলের সবুজ প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ফল আমদানিকারক ওয়াং ছেন বলেন, “চলতি বছর আমাদের কোম্পানির ফল-ব্যবসা আরও ভালো হয়েছে। বিক্রির পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ডুরিয়ান ও ম্যাঙ্গোস্টিনসহ নানা ফল আমদানিতে শূন্য করের সুবিধা ভোগ করছি। তাই পরিচালনা খরচ অনেক কমেছে।”

আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (আরসিইপি) কার্যকর হওয়ার পর হ্য খৌ বন্দরে আমদানির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর থাইল্যান্ডের ম্যাঙ্গোস্টিন, লাওসের প্যাসন ফল ও জাম্বুরাসহ বেশ কয়েকটি ফল এ বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে এ বন্দর দিয়ে আসিয়ান দেশগুলো থেকে ফল আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার টন, যার মূল্য ৮৯ কোটি ইউয়ান। আমদানির পরিমাণ ও মূল্য আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ এবং ১৯ গুণ বেড়েছে।

উচ্চ তাপপ্রবাহের কারণে সাঁতার কাটা, ডাইভিং ও সার্ফিংসহ নানা জলক্রীড়া অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। সাঁতার গগলস ও সাঁতার পোষাকসহ জলক্রীড়ার নানা পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। গ্রীষ্মকালে ভোগ বাজারের প্রাণশক্তি চাঙ্গা করছে জলক্রীড়া অর্থনীতি। চীন ও মধ্য এশিয়ার আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীর করার সঙ্গে সঙ্গে অধিকতর সংখ্যক প্রতিষ্ঠান মধ্য এশিয়ায় বাজার সম্প্রসারণ জোরদার করছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে মধ্য এশিয়ার ৫টি দেশের সঙ্গে চীনের চিয়াং সু প্রদেশের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৭৮ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। তীব্র তাপপ্রবাহে গরম থেকে রক্ষা করে এমন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতির চাহিদাও অনেক বেড়েছে। নিং বো লাং মু ইলেকট্রনিক কোম্পানি জানিয়েছে, আগে তারা রেফ্রিজারেটের যে অর্ডার পেত তা জুন মাসের মধ্যে উৎপাদন করে ফেলতে পারতো, তবে চলতি বছরের ফরমাশকৃত পণ্যের উৎপাদন শেষ করতে আগস্ট মাসের শেষ দিক পর্যন্ত লাগে। 

(রুবি/রহমান)