আকাশ ছুঁতে চাই ৩১
2023-08-17 14:50:33


                                             

 

১. স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে গড়ে উঠলো শিশু যত্ন কেন্দ্র

২. বাংলাদেশের বঙ্গমাতা পদক পেলেন ৪ নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দল

৩. অর্কিড চাষ করে স্বাবলম্বী হলেন উদ্যোগী নারী

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগে গড়ে উঠলো শিশু যত্ন কেন্দ্র

কর্মজীবী মায়েদের একটি বড় সমস্যা হলো ছোট শিশুকে নিরাপদে রাখার জন্য একটি সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করা।এই সমস্যা সমাধানে চেচিয়াং প্রদেশের একটি শহরের নাইট মার্কেটে স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন স্থাপন করেছে শিশু যত্ন কেন্দ্র।

চেচিয়াং প্রদেশের একটি নাইট মার্কেট তোংইয়াং। এখানে সন্ধ্যার পর জমে ওঠে কেনাবেচা । এখানকার অধিকাংশ দোকানদারই নারী। তাদের দুঃশ্চিন্তা শিশুসন্তানকে কোথায় রাখবেন। এদের অনেকেই মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার। তারা অন্য স্থান থেকে এই শহরে এসেছেন। ফলে শিশুকে রাখার মতো কোন আত্মীয়ও তাদের এ শহরে নেই। দিনের বেলা শিশুরা স্কুলে থাকে। কিন্তু রাতে থাকবে কোথায়?

এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন। তারা এই মার্কেটের এক দিকে চেনসিং রোডে একটি শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন করে মায়েদের দুঃশ্চিন্তা লাঘব করেছে।

এই বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন মাও ফেংহুয়া। তিনি ট্রেড ইউনিয়নের নেত্রী। তিনি একদিন দেখেন এই নাইট মার্কেটের বিভিন্ন স্টলে মায়ের পাশে ছোট শিশুরা বসে লেখাপড়া করছে। বাজারের এই হট্টগোলের মধ্যে লেখাপড়া করা যেমন কঠিন তেমনি শিশুর দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে ব্যবসা চালানোও কঠিন।

মাও তখন সমস্যার প্রকৃত রূপ বোঝার জন্য বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। এই স্ট্রিট মার্কেটে ৪৩৫টি দোকান আছে।

এখানে একটি দোকান চালান সিয়া ছিয়ংফাং নামে একজন নারী। তার স্বামীও তার সঙ্গেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাদের মিশু সন্তানও দোকানে বসে থাকতো। একদিন ছেলেটিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। স্বামী স্ত্রী পাগলের মতো ছেলেকে খোঁজেন। সৌভাগ্যক্রমে ছেলেটিকে পাওয়া যায়। দোকানের ভিতর একঘেয়ে লাগায় সে বাবা মায়ের চোখ এড়িয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিল।

এমন সমস্যা ছিল অনেকেরই। এখন এই শিশুযত্ন কেন্দ্র চালু হও্রয়ায় সকলেরই সুবিধা হয়েছে। এখানে ৪ থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের রাখা হয়। তাদের হোমওয়ার্ক করানো হয়। নানা রকম কবিতা, গান, ছবি আঁকাও শেখে তারা। ৭০টি শিশু রয়েছে এখানে।

ছিয়ান সিয়াওহুই নামে এক মা বলেন ‘আমি এখানে দোকান চালাই। এখন আমি নিশ্চিন্তে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি। কারণ আমার সাত বছর বয়সী মেয়েটিকে শিশু যত্ন কেন্দ্রে দিয়েছি। ও কবিতা আবৃত্তি শিখেছে ‘

উদ্যোগী নারীনেত্রী মাও ফেংহুয়ার  উদ্যোগে পরিচাীরত এই শিশু যত্ন কেন্দ্র এখন ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। মায়েরাও শান্তি পেয়েছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

বাংলাদেশের বঙ্গমাতা পদক পেলেন ৪ নারী ও জাতীয় নারী ফুটবল দল

 

বাংলাদেশের চারজন বিশিষ্ট নারী ও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২৩ প্রদান করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই পদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

চার বিশিষ্ট নারী ও জাতীয় ফুটবল দল পেল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২৩। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই পদক পান তারা।

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই পদক প্রদান করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আটটি ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর সর্বোচ্চ পাঁচজন নারীকে এই পদক দেওয়া হয়।দেশের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় নারী ফুটবল দল এবং চার বিশিষ্ট নারীকে এ বছরের পদকের জন্য নির্বাচিত করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সাফ ফুটবল ২০২২-এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় জাতীয় নারী ফুটবল দল এবারের এই পদক লাভ করে।এ ছাড়া যে চার বিশিষ্ট নারী এবারের পদক পেয়েছেন, তাঁরা হলেন রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (মরণোত্তর); শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় নাসিমা জামান ববি ও অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং গবেষণায় ডা. সেঁজুতি সাহা (মলিকুলার বায়োলজিস্ট)।

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর ভিত্তি করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বেগম চেমন আরা তৈয়ব।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্য প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদান ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। সারা দেশের ৪ হাজার ৫০০ দুস্থ নারীর মধ্যে সেলাই মেশিন এবং ৩ হাজার দুস্থ নারীর প্রত্যেককে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

 

 

অর্কিড চাষ করে স্বাবলম্বী হলেন উদ্যোগী নারী

চীনে এখন চলছে গ্রামপুনর্জীবনের ধারা। সেই ধারায় অনেকেই গ্রামে ফিরে গড়ে তুলছেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন অন্যদের জন্যও। এমনি একজন উদ্যোগী নারী আও ছিনকুই।

চীনের গ্রামগুলোর চেহারা ক্রমশ পালটে যাচ্ছে। আর এই চেহারা পালটে দিচ্ছেন উদ্যোগী মানুষরা। এদের মধ্যে অনেকেই নারী। অনেকেই এখন গ্রামে নানা রকম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন যা গ্রাম পুনর্র্জীবনের ধারাকে বেগবান করছে। এমনি একজন উদ্যোগী নারী আও ছিনকুই। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছোংছিং মিউনিসিপালটির ছিচিয়াং জেলার সানচিয়াও টাউনশিপের ফংসিয়াং গ্রাম। এখানে অর্কিড খামার গড়ে তুলেছেন আও ছিনকুই।

একসময় সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহরে  পোষা প্রাণীর এক ক্লিনিকে চাকরি করতেন আও ছিনকুই। কিন্তু সেখানকার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তার ভালো লাগছিল না। তিনি চাচ্ছিলেন গ্রামে ফিরে নিজস্ব কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন।

অর্কিডের প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন এবং ২০১৬ সালে তার হোমটাউন ছিচিয়াংয়ে একটা ছোট দোকান খোলেন। তিনি পরিকল্পনা করেন বড় আকারের একটি খামার গড়ার। এই পরিকল্পনা গঠন করে তিনি জেলা ও মিউনিসিপালটিভিত্তিক উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি পুরস্কার জয় করেন। প্রতিযোগিতায় প্রাপ্ত অর্থ ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি নিজের গ্রামে একটি বড় খামার গড়ে তোলেন। ২০১৮ সালে তার বয়স যখন মাত্র ২৩ বছর তখন এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।

এখন এই প্রতিষ্ঠানের মূলধন এক মিলিয়ন ইউয়ানের বেশি। আও মনে করেন সরকারের সহায়তা ছাড়া তার পক্ষে এই সাফল্য লাভ করা সম্ভব হতো না। 

তার খামারে এখন ২০ হাজার বোল বা পাত্র আছে যেখানে ৩০০ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে।

তাকে দেখে গ্রামের আরও অনেকে উৎসাহিত হয়েছেন। অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে তার গ্রামে।

আও ছিনকুইয়ের মতো নারীরা চীনের গ্রামীণ পুনর্জীবনের ধারায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আফরিন মিম, হোসনে মোবারক সৌরভ

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল