বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে চীনের জাতীয় উদ্যানে | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৩১
এবারের পর্বে রয়েছে
১. দুর্যোগের মধ্যেও ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার
২. চীনের জাতীয় উদ্যানে বাড়ছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
১. দুর্যোগের মধ্যেও ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার
যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব সময় শক্তহাতে প্রতিহত করে চীন। এ ধরনের দুর্যোগের মধ্যেও জনমানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দেশটি। সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, এতে নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হয় সাধারণ জনগণ। রাস্তাঘাটে পানি থাকায়, ঘর থেকে বের হতে পারেন নি অনেকে। এসময় দারুণ কিছু উদ্যোগ নেয় স্থানীয় মার্কেটগুলো। কৃষি পণ্যগুলো ভোক্তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয় তারা। আর ভালো ব্যাপার হলো এই দুর্যোগের সময়ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়েনি, সব কিছুই রয়েছে নাগালের মধ্যে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারাও।
বন্যা কিংবা অন্য যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্থবির হয়ে পড়ে সব কিছু। বন্ধ হয়ে যায় খাদ্য সরবরাহ। সংকটে পড়েন সাধারণ মানুষ।
কিন্তু এরকম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ভিন্ন চিত্র দেখা যায় চীনে। ভারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য।
এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অন্যতম রাজধানী বেইজিং । এত দুর্ভোগের মধ্যেও জনসাধারণের বাড়িতে বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দিয়েছে বেইজিংয়ের বৃহত্তম পাইকারি খাদ্য পণ্যের বাজার, সিনফাতি। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ সত্ত্বেও সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ স্থিতিশীল রয়েছে এই মার্কেটে।
টাইফুন ডকসুরির প্রচন্ড প্রভাবে গেল কয়েক দশকের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে লড়াই করছে বেইজিং। হঠাৎ বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, ব্যহত হয়েছে যান চলাচল। এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন এলাকায়।
বন্যার ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকায়, বেইজিংয়ে ৮০ শতাংশেরও বেশি কৃষি পণ্য সরবরাহ করেছে সিনফাতি বাজার। সিনফাতির ভুট্টা ব্যবসায়ী লি চংইউয়ে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক সরবরাহের পরিমাণ এখন গড়ে ২০ হাজার টনের উপরে রয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টন সরবরাহ করি। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টাও সরবরাহ করি আমরা। এবার দুর্যোগের মধ্যে ভুট্টার দাম বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। এতে ভোক্তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে নি "
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পণ্য সরবরাহ কমে যায় আর হু হু করে বাড়তে থাকে জিনিসপত্রের দাম। তবে চীন সরকার যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ শক্তহাতে প্রতিহত করে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় জনগণকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনার। তাই এবারের বন্যাতেও বাড়েনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।
ভারি বৃষ্টিপাত থেকে সবজিগুলোকে সংরক্ষণ করতে বিশেষ ব্যবস্থাপনা রেখেছে সিনফাতির উদ্যোক্তারা। ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো রেখে পর্যাপ্ত বাতাসে রাখা হয়েছে পণ্যগুলো। এছাড়া সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তাঁবু এবং রেইনকোট প্রস্তুত রয়েছে।
সম্প্রতি চীনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এক বৈঠকে জানান, বন্যা পরিস্থিতি এখনও চীনের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। বন্যার পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং একইসঙ্গে পাশ্ববর্তী নদীগুলোর সুরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। এর পাশাপাশি জন সাধারণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় চীন সরকার।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
২. চীনের জাতীয় উদ্যানে বাড়ছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যাপারে সব সময় আন্তরিক থাকে চীন সরকার। এ জন্য দেশটির জাতীয় উদ্যানে বাড়ছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। পান্ডা থেকে শুরু করে সার্বিয়ান বাঘ, বিপন্ন প্রাণী সুরক্ষায় ২০২১ সাল থেকে নেয়া হয় কিছু নতুন উদ্যোগ। যার ফলে চীনের সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানগুলোতে বেড়েছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। এরকম পাঁচটি জাতীয় উদ্যানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাচ্ছেন হোসনে মোবারক সৌরভ।
পান্ডা থেকে শুরু করে সার্বিয়ান বাঘ, এ ধরনের বিপন্ন প্রাণীরা সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে চীনের জাতীয় উদ্যানগুলোতে।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, চীনের পাঁচটি জাতীয় উদ্যানে বিপন্নপ্রায় বন্য প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা চীনের বন ও পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০২১ সালের অক্টোবরের দিকে চীনের কয়েকটি জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণী রক্ষায় নেয়া হয় কিছু নতুন উদ্যোগ। তার মধ্যে রয়েছে জায়ান্ট পান্ডা ন্যাশনাল পার্ক, হাইনান ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক, সানচিয়াং ইউয়ান ন্যাশনাল পার্ক, উ ই মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্ক এবং নর্থ ওয়েস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লিওপারড ন্যাশনাল পার্ক।
চীনের সিচুয়ান, শানসি এবং কানসু প্রদেশের মধ্যেভাগে অবস্থিত পান্ডাদের জন্য বিশাল সংরক্ষিত এলাকা জায়ান্ট পান্ডা ন্যাশনাল পার্ক।
জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসনের তথ্য মতে , বর্তমানে পার্কে পান্ডার সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে, যা পুরো চীনের মোট পান্ডার ৭০ শতাংশেরও বেশি।
এখানে জায়ান্ট পান্ডাদের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করা, মূল ইকোলজিক্যাল করিডোর তৈরি করা এবং বন্দী জায়ান্ট পান্ডাদের বনে ছাড়ার জন্য উপযুক্ত করে তৈরি করার ফলে পান্ডার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দক্ষিণের দ্বীপ প্রদেশ হাইনানে অবস্থিত, হাইনান ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট ন্যাশনাল পার্ক। ৪,২৬৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই প্রাকৃতিক সংরক্ষণাগারে রয়েছে পুরো চীনের ২০ শতাংশ উভচর প্রাণীর এবং ৩৮.৬ শতাংশ পাখি।
সাম্প্রতিক সময়ে এই পার্কে নিরীক্ষণের জন্য প্রতিটি কোণে স্থাপন করা হয় ভাইব্রেশন সেন্সর, ইনফ্রারেড ক্যামেরা এবং অন্যান্য হাই-টেক ডিভাইস। যা এই রেইনফরেস্টে প্রাণীদের পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করেছে এবং মানুষের উপস্থিতি কমানো সম্ভব হয়েছে।
এই পার্কে রয়েছে বিরল প্রজাতির হাইনান গিবন । ২০১৯ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩০ টি যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ টিতে।
এই পার্কটিতে প্রায় ৪৩০ প্রজাতির পাখির সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশটির মোট পাখির সংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। চলতি মাসে এই পার্কে পাঁচটি নতুন প্রজাতির কীটপতঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেছে।
গেল ২০২১ সালে এই পার্কের ব্যবস্থাপনা ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য দেখা গেছে, ২০১৭ সালের পর থেকে কমপক্ষে ১২ টি সাইবেরিয়ান বাঘ শাবক এবং ১২ টি আমুর চিতাবাঘের বাচ্চা জন্ম নিয়েছে ।
বর্তমানে ৫০০ টি সাইবেরিয়ান বাঘ এই অঞ্চলে বসবাস করছে বলে ধারনা করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতি মধ্যে এই সাইবেরিয়ান বাঘ একটি।
আমুর চিতাবাঘ, যা ফার ইস্টার্ন চিতাবাঘ নামেও পরিচিত, এটিও বিশ্বের সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণীদের মধ্যে একটি এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন প্রাণী হিসাবে একে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় চীন যে উদ্যোগ নিয়েছে, এখন সে পথেই হাঁটতে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
প্রতিবেদন: এইচএম সৌরভ
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী