এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। ‘বাংলা খাবার ও চীনা খাবারকে আমি সমানভাবে ভালোবাসি’
২। ঘুরে আসুন তিব্বতের প্রবেশদ্বার থেকে
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘বাংলা খাবার ও চীনা খাবারকে আমি সমানভাবে ভালোবাসি’
বাংলাদেশী তরুণ রাহী নায়াব ঐশী। জন্ম চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। বর্তমানে পরিবারের সাথে থাকছেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরায়। লেখাপড়া করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে।
রাহী নায়াব ঐশী
প্রশ্ন- আমাদের অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম , কেমন আছেন আপনি?
রাহী- আমি ভালো আছি।
প্রশ্ন-আমরা জানি আপনার জন্ম চীনে। এরপর শিশুকাল কেটেছে সেখানে। বাংলাদেশে চলে আসার পরও অনেকবারই চীনের যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আপনার। আমরা জানতে চাই চীনে থাকার ও ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল আপনার?
রাহী- চীনে আমার জন্ম ২০০১ সালে। তখন আমার বাবা-মা সেখানে কাজ করতেন। আর বাংলাদেশে ফিরে আসি ২০০৬ সালে। আমি যখন প্রথমদিকে চীনে ছিলাম ,তখন আমার বাবা মা অনেক ঘুরতো। সেগুলো আমি অ্যালবামের পাতায় দেখতে পাই। স্মৃতিতে সেভাবে নেই।
তবে ২০১৬ সালে আমি আবার চীনে গিয়েছিলাম একটি চীনা ভাষার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে। আয়োজকদের সহযোগিতায় আমরা অনেক ঘুরেছি। বেইজিংয়ে ঘুরেছি চিড়িয়াখানায়, দেখেছি পান্ডা, গ্রেট ওয়াল দেখেছি। এরপর ঘুরেছি ইয়ুননানে। সেখানে গিয়ে স্টোন ফরেস্ট দেখেছি। ঘুরেছি ইয়ুনানের বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে নৃতাত্ত্বিকদের জীবনযাপন সম্পর্কে জেনেছি। পাশাপাশি চীনাদের সংস্কৃতি , জীবন ধারা সম্পর্কের জানার সুযোগ হয়েছে।
প্রশ্ন-আপনার কাছে জানতে চাই, চীনা খাবার আপনার কতটা পছন্দ? বাংলাদেশেও চীনা অনেক রেস্টুরেন্ট আছে। সেই রেস্টুরেন্ট গুলো আপনাকে কেমন টানে?
রাহী- চীনা খাবার আমার কমফোর্ট ফুড। বাংলা খাবার ও চীনা খাবারকে আমি সমানভাবে ভালোবাসি। অন্য আর কোন খাবার নেই যে, সেই খাবারকে বাংলা খাবারের সমান ভালোবাসি। আমার মা চীনে থাকাকালীন চীনা খাবার রান্নার পদ্ধতিগুলো খুব ভালোভাবে আত্মস্থ করেছিলেন। বাংলাদেশে ফেরার পর কোন অনুষ্ঠানে কিংবা পরীক্ষায় ভালো করলে বা মন খারাপ থাকলে মা চীনা খাবার রান্না করে দেয়।
বন্ধুদের রাহী নায়াব ঐশী
বাংলাদেশের চীনা রেস্টুরেন্টগুলোতে সেভাবে অথেনটিক চীনা খাবার পাওয়া যায় না। তবে কোথাও অথেনটিক চীনা খাবার খুঁজে পাই তবে আমার খুব আনন্দ লাগে। আমি ট্রাই করি সেই খাবার।
বন্ধুদের রাহী নায়াব ঐশী
প্রশ্ন-আমরা জানি আপনার পরিবারের বাকিরা সবাই চীনা ভাষা পারে। আপনি পারেন কীনা? আর পারলে কিভাবে শেখা হয়েছে সেটা যদি বলতেন।
রাহী- বাচ্চারা তো আশেপাশে যা শোনে সেটাই খুব ভালো করে শিখে ফেলে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শেখা না হলেও চীনে যেহেতু পাঁচ বছর হওয়া পর্যন্ত ছিলাম তখন অন্যান্য চীনা বাচ্চাদের সাথে মিশতে মিশতে অনেকটা শিখেছি। তাছাড়া আমরা বাসাতেও অনেক সময় চীনা ভাষায় কথা বলতাম।
প্রশ্ন-এখন তো বাংলাদেশে আছেন। কিন্তু হঠাতই যদি চীনে যাওয়ার সুযোগ পান তখন কেমন লাগবে?
রাহী- এমন সুযোগ পেলে আমার খুব ভালো লাগবে। চীনের আবহাওয়া , রাস্তাঘাট , পরিবেশ আমাকে অনেক টানে। যখনই চীনে যাওয়ার সুযোগ হয় কিংবা চীনা খাবার খাওয়ার সুযোগ হয় ,মাঝামধ্যে চীনা মুভি দেখেও চীনে থাকার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে।
প্রশ্ন-বাংলাদেশের যারা চীনে ঘুরতে যেতে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন।
রাহী- কেউ চীনে ঘুরতে যেতে চাইলে একটা ট্যুর গাইড কিংবা ট্রান্সলেটর সাথে ভালো। তাহলে আমার ঘুরাঘুরিটা স্বাচ্ছন্দ্যের।
প্রশ্ন- আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ
রাহী- ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার – আফরিন মিম
২। ঘুরে আসুন তিব্বতের প্রবেশদ্বার থেকে
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের বিখ্যাত পর্যটন স্থান শাংরি লা। তিব্বতি জাতির জনবসতি এইখানে। একে বলা হয় তিব্বতের প্রবেশদ্বার। কেননা এর পরেই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত বা সিচাং। এই স্থানটির আগের নাম ছিল চোংতিয়ান কাউন্টি। তিব্বতি ভাষায় এর নাম ছিল গায়ালথাং।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে এখানে পরিকল্পিতভাবে পর্যটন শহর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এই শহরের নামকরণ হয় শাংরি-লা। শাংরি- লায় রয়েছে তিব্বতি ঐতিহ্যের নানা রকম আয়োজন। এখানে আসলে উপভোগ করা যায় তিব্বতি সাংস্কৃতিক নানা বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান।
এই পর্যটন স্থানে রয়েছে বেশ কিছু তিব্বতি প্যাগোডা। এছাড়া রয়েছে তিব্বতি কারুশিল্পের বিশাল বাজার। সেখানে পাওয়া যায় তিব্বতি পোশাক থেকে শুরু করে নানা রকম ঐতিহ্যবাহী কারুকাজ করা অলংকার ও নানা রকম শোপিস। এখানে আয়োজনও করা হয় ঘোড়দৌড়ের। ঘোড়দৌড় দেখতেও এখানে আসেন পর্যটকরা। পাশাপাশি তিব্বতি জপযন্ত্র বা প্রেয়ার হুইল এবং তিব্বতি বৌদ্ধ মন্দির দেখতেও ভিড় করেন পর্যটকরা।
এই শহরে বাস করেন নাসি জাতিগোষ্ঠীর মানুষরা। এদের ভাষা তিব্বতি ভাষা থেকে কিছুটা আলাদা। যদিও মায়ানমারের ভাষার সঙ্গে কিছুটা মিল আছে এই ভাষার। এই নাসি জাতির মানুষরাই মূলত আয়োজন করে ঘোড়দৌড়ের। শহরটির উত্তর অংশে বাস করেন খাম্পা জাতির মানুষরা। তারা কথা বলেন তিব্বতি খামস ভাষায়। আর হানজাতির মানুষরা কথা বলেন চীনাভাষাতেই। পর্যটন নগরী হওয়ায় ইংরেজিতেও যোগাযোগ করেন অনেকে।
পর্যটকরা এখানে ঘুরতে এসে চড়তে পা রেন ঘোড়ায়। ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি পথে বেড়ানোও একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হয় তাদের। শহরের কাছেই রয়েছে গানদান সাম্টসেলিং মঠ বা গানডেন সাম্টসেন লিং, পুদাসুয়ো ন্যাশনাল পার্ক এবং টাইগার লিপিং গিরিখাত। আরও আছে ডুকেজং প্রাচীন শহর, মেইলি পর্বত ও অন্যান্য স্থান। এরমধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো সাম্টসেলিং তিব্বতি মঠ। এখানে বিশাল প্রাসাদের মতো মঠ রয়েছে যা তিব্বতি ঐতিহ্যে গড়া। এছাড়া শাংরিলায় দেখা যায় তিব্বতি থাংকা বা কাপড়ের উপর আঁকা ছবি।
থাকার জন্য শাংরি- লায় রয়েছে বেশ কিছু হোটেল, হোম স্টে এবং গেস্ট হাউজ। সবচেয়ে সাশ্রয়ী হলো গেস্ট হাউজ ও টুরিস্ট হোস্টেলগুলো। এখানকার খাবারও খুব সুস্বাদু। তাই তিব্বতি মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি মুসলিম রেস্টুরেন্ট থেকে হালাল খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়েছে মুসলিমদের।
শাংরি-লায় যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভালো। বিমানযোগেও এখানে আসা যায়। পাশাপাশি লিচিয়াং এবং কুনমিং থেকে বাসে চড়েও আসা যায় এখানে।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা –আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী