চীন-লাওস রেলপথ হলো ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নির্মাণের আওতায় দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত উচ্চমানের একটি যুগান্তকারী প্রকল্প। গত ৩ আগস্ট ছিল রেলপথটি চালু হওয়ার ২০তম মাস পুর্তি। চালু হওয়ার পর থেকে রেলপথটির কার্যক্রম ছিল নিরাপদ ও স্থিতিশীল। যাত্রী পরিবহনের গুণগতমান ও সংখ্যা উভয় বেড়েছে এ রেলপথ চালু হওয়ার পর। এ পর্যন্ত এ রেলপথ ১ কোটি ৯০ লাখ যাত্রী এবং ২ কোটি ৩০ লাখ টনেরও বেশি মালামাল পরিবহন করেছে। ফলে ভেতর ও বাহিরকে সংযুক্তকারী, নিকটবর্তী অঞ্চলে বিস্তৃত, দ্বিমুখী সাহায্যকারী এবং নিরাপদ ও উচ্চকার্যকারিতার আন্তর্জাতিক গোল্ডেন চ্যানেলে পরিণত হয়েছে এ রেলপথ। চলতি বছর থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে আবার শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভ্রমণের চাহিদা স্পষ্টভাবে বেড়েছে। চীন-লাওস রেলপথে যাত্রীর সংখ্যা পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে রেলপথ বিভাগ যাত্রী পরিবহন সুবিধা সমন্বয় করেছে। ২০২২ সালে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৪৪টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হতো, সেখানে এখন চলছে ৬০টি ট্রেন।
গত ১৩ এপ্রিল চীন-লাওস রেলপথের খুনমিং সাউথ স্টেশন থেকে ভিয়েনতিয়েন স্টেশন পর্যন্ত আসা-যাওয়ার আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়। এই ট্রেনে করে খুনমিং থেকে একই দিনে ভিয়েনতিয়েন পৌঁছানো যায়। ২৫ জুলাই থেকে রেলপথের নতুন সূচি চালু হয়। খুনমিং থেকে ভিয়েনতিয়েনে যাবার ডি৮৮৭/৮ আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ট্রেনটির অপারেশনের সময় আগে যেখানে সাড়ে ১০ ঘন্টা ছিল, সেখানে বর্তমানে সে সময় ৯ ঘন্টা ২৬ মিনিটে নেমে এসেছে। সকালে রওনা হলে যাত্রীরা খুনমিং সাউথ স্টেশন থেকে ভিয়েনতিয়েন স্টেশনে কিংবা ভিয়েনতিয়েন স্টেশন থেকে খুনমিং স্টেশনে পৌঁছাতে পারছেন একই দিন ডিনারের আগে।
আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হবার পর ১শ’ দিনের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে মোট ৪৯টি দেশ ও অঞ্চলের ৪৭ হাজার যাত্রী চীন-লাওস রেলপথে করে আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণ করে। রেলপথটি সিশুয়াংবাননা ও লুয়াং প্রাবাংসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থানকে সংযুক্ত করেছে এবং যাত্রী প্রবাহ, লজিস্টিক ও তথ্য প্রবাহের উচ্চ-কার্যকর বিনিময় বেগবান করেছে।
রেলপথটি কার্যকরভাবে শিল্পের উন্নয়ন গতিশীল করেছে। ফলে আরও বেশি আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান সুযোগ গ্রহণ করেছে এবং লাভবান হয়েছে। পণ্য পরিবহনের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘ল্যাঙ্কাং-মেকং এক্সপ্রেস লাইন’ নামের আন্তর্জাতিক মালামাল ট্রেন চালু করার পাশাপাশি রেলপথ বিভাগ ‘চীন-লাওস রেলপথ+চীন-ইউরোপ রেলপথ+ পশ্চিম স্থল ও সমুদ্র নতুন প্যাসেজ ট্রেন’-র মতো আন্তর্জাতিক সম্মিলিত পরিবহনের নতুন রূপ অন্বেষণ করছে। মালামাল পরিবহনের পরিমাণ ও পণ্যবৈচিত্র বেড়ে চলেছে। চলতি বছরে এ রেলপথে মালামাল পরিবহনের পরিমাণ পৌঁছায় ১ কোটি ১১ লাখ টনে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত পণ্য পরিবহন ছিল ২৫ লাখ টনেরও বেশি। এ ক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ১৭২ দশমিক ২ শতাংশেরও বেশি।
চীন ও লাওসের মধ্যে ফল ও সবজির কোল্ড-চেইন পরিবহনেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ১৪০ কোটি ইউয়ান মূল্যের ৫৪ হাজার টন আমদানিকৃত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল পরিবহন করা হয় এ ট্রেনের মাধ্যমে।
জানা গেছে, রেলপথ বিভাগের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো রেলপথের মাধ্যমে বাল্ক পরিবহনের জন্য আন্তর্জাতিক মালবাহী ট্রেন চালু করার পাশাপাশি আরও বড় সামষ্টিক প্রভাববিস্তারকারী সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দ্রুত গতিতে মোহাইন রেলবন্দরের দক্ষতা বাড়ানো এবং রূপান্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন জোরদার করা। চীন-লাওস রেলপথ মাল্টিমোডাল পরিবহন ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভিয়েনতিয়েন সাউথ রিলোডিং স্টেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাড়ানোর মাধ্যমে চীন-লাওস রেলপথের আন্তঃসীমান্ত মালামাল পরিবহনের সক্ষমতা উন্নীত করবে। (প্রেমা/রহমান)