বিজ্ঞানবিশ্ব-পর্ব ৩১
2023-08-14 10:49:24

 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩১তম পর্বে যা থাকছে:

* আধুনিক বাসার দিকে ঝুঁকছে মানুষ, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি

* বিদেশী অ্যাথলিটদের চমকে দিয়েছে চীনা প্রযুক্তি

* ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা জানাবে স্মার্টফোন!

 

আধুনিক বাসার দিকে ঝুঁকছে মানুষ, চাঙ্গা হচ্ছে অর্থনীতি

আধুনিক বাসা মানেই সুখী জীবন-যাপন। বর্তমান বিশ্বে যখন চারপাশে ইন্টারনেট অব থিংস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার চলছে তখন আধুনিক বাসা আর দুর্লভ কোনো বিষয় বস্তু নয়। চীনে নাগালের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বাসা। বাসায় না থেকেও দূর থেকেই রিমোটলি দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ নিয়ন্ত্রণ করা যায় আধুনিক বাসায়। তাই চীনের মানুষ এখন আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে আধুনিক বাসার দিকে। যা অর্থনীতিতেও ফেলছে ইতিবাচক প্রভাব।

মানুষের সব থেকে আপন জায়গাটা তার নিজের ঘর। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো কিংবা নিজেকে সময় দেওয়ার জন্যও চাই আপন নিবাস। বাসায় কাটানো এই সময়টাকে আরো সহজ ও উপভোগ্য করতে আধুনিক ফার্নিচার ও যন্ত্রের জুড়ি নেই। তাইতো এসব পণ্যের বাজারও এখন বিরাট আঁকার ধারণ করেছে।

চীনের সাংহাই শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন পর্দা, লাইট ও এয়ার কন্ডিশনার। দোকানের কর্মীরা জানায় সাম্প্রতিক সময়ে এই সব পণ্য জনমানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাকাও রোডের হুয়াওয়ে হোল হাউজ ইন্টেলিজেন্ট অটোরাইজড এক্সপেরিয়েন্স স্টোরের স্টোর লিডার চাও হাওচি বলেন, “আমাদের দৈনিক ক্রেতার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। এসব পণ্য কিনতে আসা প্রায় ৮০ ভাগ ক্রেতাই তরুণ। আগে আমরা নিজেদের বাসাকে শুধুই আমাদের বাসস্থান মনে করতাম। তবে এখন সবার মধ্যে উচ্চমানের জীবনধারার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যেটা করি সেটা হলো পুরো বাসাটিকে আধুনিক করে তোলার সল্যুশন দেই। আমাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ মডিউল সবথেকে জনপ্রিয় কারণ এটি দিয়ে অন্য আধুনিক যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।“

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোন কোন পণ্যের দাম বেশি হলেও ভোক্তারা এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও উৎসাহী হয়ে উঠছে। সাংহাই ডেকোরেশন ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সু কুয়োচিয়ান বলেন, ভোক্তারা এসব যন্ত্র সাদরে গ্রহণ করছে।

তিনি বলেন, “নিজের বাসাকে আধুনিক করতে মানুষরা আধুনিক যন্ত্র ও ওয়্যারিংয়ে বেশি খরচ করতে রাজি আছে। কারণ আধুনিক এই যন্ত্রগুলো ব্যবহারকারীদের প্রচুর সময় বাঁচিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি তাদের জীবনে বৈচিত্র্য এনে দিতেও সক্ষম এই প্রযুক্তি। চীনের উন্নত উৎপাদনখাতের ফলে হরহামেশাই নতুন নতুন আধুনিক যন্ত্র আসছে বাজারে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে পারে। ফলে ভোক্তারাও সেসব যন্ত্র সাদরে গ্রহণ করছে। তাই দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমরা স্মার্ট হোম সল্যুশনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখতে পাচ্ছি।“

সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজের ঘরকে আধুনিক করে তোলার প্রবণতা ভাবিয়েছে সরকারকেও। সম্প্রতি আধুনিক বাসা তৈরির যন্ত্র নির্মাতা ও হোম ডেকোরেশন কোম্পানিগুলোকে আরো বেশি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

“হোম ডেকোরেশন শিল্পের অনেক লম্বা শিল্প চেইন রয়েছে। দেশজুড়ে এখন প্রায় দেড় লাখ হোম ডেকোরেশন কোম্পানি আছে। এই শিল্পে সরকারের পক্ষ থেকে আর সহায়তা দিলে তা অর্থনীতিতে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস,” বলেন সু।

সুয়ের মতে চীনের হোম ডেকোরেশন সেক্টরের বর্তমান আঁকার প্রায় ৪ লাখ কোটি ইউয়ান।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

বিদেশী অ্যাথলিটদের চমকে দিয়েছে চীনা প্রযুক্তি

 

ছেংতু ইউনিভার্সিয়েইড ভিলেজে আসা বিদেশী অ্যাথলিটদের অনেকটা চমকে দিয়েছে চীনের নানা প্রযুক্তি পণ্য। বিশেষ করে কফি পরিবেশনের রোবট কিংবা চালকবিহীন বাসের সেবা নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অ্যাথলিটরা। কর্র্তপক্ষ বলছে, বিভিন্ন রকম প্রযুক্তিগত যন্ত্র ও সেবার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে চীনা সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি মেলবন্ধন স্থাপন করছেন তারা।

 

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানের ছেংতু শহর বেশ কিছুদিন ধরে মুখরিত বিদেশি ক্রিড়াবিদদের আগমনে। কেননা, এই ছেংতুই ৩১তম ফিসু সামার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমসের ভেন্যু।

বিশ্বের ১১৩টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা সাড়ে ৬ হাজারের বেশি অ্যাথলিটকে দারুণভাবে আলোড়িত করেছে এখানে ব্যবহার করা নানা প্রযুক্তি পণ্য। বিশেষ করে চীনা বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী দক্ষতা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে তৈরি নিত্য ব্যবহার্য পণ্য, চীন সম্পর্কে তাদের ধরনাই পাল্টে দিয়েছে। এমনই একটি আকর্ষণ কফি পরিবেশনকারী রোবট।

দুই হাত দিয়েই কাজ করতে সক্ষম এই রোবট। কফির অর্ডার দেওয়ার পর কেবল একটু সময় অপেক্ষা। এই অপেক্ষা ২ মিনিটের বেশি নয়। এ সময়ের মধ্যেই নিখুতভাবে দারুণ এক কাপ কফি বানিয়ে পরিবেশন করবে এই রোবট। শুধু তাই নয়, চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ রকমের স্বাদের কফি বানাতে পারে এই রোবট। এ দৃশ্য যারপরনাই অবাক করেছে অস্ট্রিয়ান ক্রিড়াবিদ ইয়ান নিয়েডারমায়েরকে।

অস্ট্রিয়ান ক্রিড়াবিদ ইয়ান নিয়েডারমায়ের বলেন, “এটা আমাকে সত্যিই অবাক করেছে। আমার তো মনে হয়, অস্ট্রিয়াতে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তার চেয়েও বেশি চীনের প্রযুক্তি এগিয়ে। আমি অনেককাপ কফি খেয়েছি, সবগুলোর স্বাদই অসাধারণ। তবে আমার প্রিয় ক্যাপাচিনো।“

এদিকে, ছেংতু ইউনিভার্সিয়েইড ভিলেজে আসা বিদেশি অ্যাথলিটদের যাতায়াতে ব্যবহার করা বাসে নেই কোন চালক। ক্রিড়াবিদরা বাসে ওঠার পর কেবল আদেশের অপেক্ষা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেবে স্বয়ংক্রিভাবে। ইতালি থেকে আসা অ্যাথলিট দলের সদস্য লিওন পম্পেও বলেন, এমন বাসে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তার এটাই প্রথম।

ইতালিয়ান অ্যাথলিট দলের উপ-প্রধান লিওন পম্পেও, “এমন চালকবিহীন স্বয়ংক্রিয় বাসে এই প্রথম উঠলাম। এই হলুদ রঙের বাসটি সত্যিই অসাধারণ। তারা যে আমাদের এই ইউনিভার্সিয়েইড ভিলেজে এনেছে, এটি সত্যিই অনেক বড়, অসাধারণ।“

এই বাসটিতে এমনসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফিচার আছে যা দুর্ঘটনার ভয় কাছে আসতে দেবে না। বিশেষ করে বাসটিতে স্থাপন করা ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি কোনে সবকিছু দেখতে পারে ফলে এর আশপাশে কোন ব্লাইন্ড জোন বা অদেখা অংশ নেই। এর মাধ্যমে ২শ’ মিটারের মধ্যে যে কোন পরিস্থিতির আলোকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে এই বাস। আবার চীনের তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবিত মোগো এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এমন শাটল সেবা দেওয়া অন্তত ৭০টি বাসে। এতোসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে মার্কিন অ্যাথলিট ক্রিস্টোপোলাস জানান, এই বাসে উঠে কোন ভয় বা শঙ্কা কাজ করেনি তার মনে।

মার্কিন অ্যাথলিট ক্রিস্টোপোলাস বলেন, “অনন্য সাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি খুবই নিরাপদ বোধ করেছি। বাসে অনেক রকমের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে। আমি বাসে উঠেছি, আরাম করে বসেছি ব্যস। আর কোন শঙ্কা কাজ করেনি।“

অন্যদিকে, অনেক দেশের অ্যাথলিটদের অংশগ্রহণ শেষ হওয়ায় অবসরে চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে কেউকেউ। এক্ষেত্রেও প্রধান হাতিয়ার হয়ে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তির নানা রকম ডিভাইস।

এই ভিলেজটি মূলত অন্যান্য দেশের মানুষের সঙ্গে চীনা সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি মেলবন্ধন স্থাপন করেছে এসব নানা রকম আয়োজনের মাধ্যমে। গেল ২২ জুলাই শুরু হয় ৩১তম ফিসু সামার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি গেমস।

 

|| প্রতিবেদন: সাজিদ রাজু

 

 

 

ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা জানাবে স্মার্টফোন!

 

ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই সতর্কবার্তা পাবেন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা। এরকম দারুণ এক অ্যাপ সংযুক্ত করেছে চীনের মুঠোফোন উৎপাদনকারী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ভূমিকম্প আঘাত হানার আগে মোবাইলে তীব্র শব্দ বা ফ্ল্যাশ তৈরি হবে, যার মাধ্যমে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে পারবে সাধারণ মানুষ। বড় পরিসরে এই অ্যাপের ব্যবহার অনেকের জীবন সুরক্ষিত রাখবে বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকে।

ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারার বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা চলছে চীনজুড়েই। বিশেষ করে শানতোং প্রদেশের পিংইউয়ান কাউন্টিতে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর বেশ জোরেসোরেই আলোচনা হচ্ছে এটি নিয়ে।

এক গবেষণায় দেখা যায়, চীনে অ্যাপল স্টোর থেকে সবচেয়ে বেশি যে অ্যাপগুলো ইন্সটল করা হয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষ তিন-এ রয়েছে আর্থকুয়াক ওয়ার্নিং অ্যাপ।

এরইমধ্যে শাওমি, হুয়াওয়ে, অপো ও ভিভোসহ বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ফোন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বলছে, ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা পাওয়ার জন্য আলাদাভাবে অ্যাপ ইন্সটল করার প্রয়োজন নেই। তাদের ফোনে যে ওয়ার্নিং অপশন আছে তা অন করে দিলেই ব্যবহারকারীরা এই সুবিধা পাবেন।  

অ্যান্ড্রয়েড ফোন উৎপাদকরা বলছে, সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতুতে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব ক্যাফে লাইফ মোবাইলে ভূমিকম্পের সতর্কতা দেওয়ার কার্যক্রমটি সমন্বয় করছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই জানিয়েছে যে, ভূমিকম্পের সময় তারা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন ফোনের তীক্ষ্ণ শব্দে ঘুম ভেঙে যায়।

এই ধরনের শব্দ ও লাইটের ফ্ল্যাশ সতর্কবাতা হিসাবে কাজ করে, যা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল, গভীরতা ও তীব্রতা নির্দেশ করে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের বর্তমান জায়গাতে থেকেই টের পাবেন ভূমিকম্পের তীব্রতা। সতর্কবার্তায় ভূমিকম্পের তরঙ্গ কখন আঘাত হানবে তার একটি কাউন্টডাউনও রয়েছে।

ক্যাফে লাইফ ইনস্টিটিউটের প্রধান ওয়াং তুন বলেন, সতর্কীকরণ নেটওয়ার্কগুলো ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ যন্ত্র ইনস্টল করে, যা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক সিসমিক তরঙ্গ আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জনসাধারণকে বার্তা প্রদান করে।

মোবাইলে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতার জন্য মোবাইল ফোনের বিল্ট ইন সেন্সর ব্যবহার ব্যবহার করা হয়। আরও ব্যাপক পরিসরে এই অ্যাপের ব্যবহার করা হলে, জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে এড়ানো যাবে ক্ষয়ক্ষতি।

 

|| প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সজিদ রাজু, শিয়াবুর রহমান

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী