গ্যাবনের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের
2023-08-14 15:44:26

অগোউয়ে নদী গ্যাবোনের মাতৃনদী। ১ হাজার ২শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর জলশক্তি সম্পদ সমৃদ্ধ। এ নদীতে চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত গ্র্যান্ড পৌবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র (Grand Poubara Hydropower project) গত ১০ বছরে মোট ২৫০ কোটি কিলোওয়াট ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এর ফলে আশপাশে খনি এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর বিদ্যুতের অভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। এছাড়া এ প্রকল্প পার্শ্ববর্তী এলাকার বিদ্যুৎ চাহিদা মিটাচ্ছে এবং দ্রুত দেশটির ‘উদীয়মান গ্যাবন’ লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখছে।

গ্যাবন হলো বিশ্বের ম্যাঙ্গানিজ আকরিকের প্রধান উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রান্সভিলকে  ‘খনিজ শহর’ বলে গণ্য করা হয়। গত শতাব্দীর আশির দশকে স্থানীয় খনিজসম্পদ ব্যাপকভাবে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। একই সময় কোনও কোনও আন্তর্জাতিক খনিজ কোম্পানি দেশটিতে বিনিয়োগ ও কারখানা প্রতিষ্ঠা শুরু করে। স্থানীয় খনি শিল্পে দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের অভাব দিন দিন প্রকট হয়ে ওঠে। সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড-নির্মিত গ্রান্ড পৌবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০১৩ সালে চালু হবার পর দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৪০ মেগাওয়াট থেকে ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করতে সহায়তা দিয়েছে। এ বিদ্যুৎ প্রকল্প অগোউয়ে নদীর উচ্চ অববাহিকার পাহাড়ি শহর ফ্রান্সভিল এবং নিকটকর্তী এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে।

 

তেতাল্লিশ বছর বয়সী ওলেদি গ্র্যান্ড পৌবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প বিভাগে কাজ করছেন দশ-বার বছর ধরে। ২০০৭ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান গ্যাবন সরকারের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষর করছে - এমন খবর শুনে তিনি এখানে চলে আসেন এবং চাকরির সুযোগ পান। তিনি প্রথমে বৈদ্যুতিক ঝালাইয়ের কাজ শেখেন এবং পরে দলের প্রধান হয়ে নির্মাণসাইটে ছোট যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবার পর তিনি ওয়েল্ডার সুপারভাইজার হিসাবে কেন্দ্রের ঝালাই কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন।

 

একই সময় ওলেদি’র স্ত্রী কেন্দ্রের পাশে একটি ছোট দোকান খোলেন। দোকানটি একদিকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের সেবা দিয়েছে আবার অন্যদিকে ওলেদি পরিবারের আয় বাড়িয়েছে। মাসে তাদের আয় প্রায় ৭ হাজার ইউয়ান রেনমিনপি, যা ওই দেশে মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্তের আয়ের সমান। নিজেদের জীবনের নিয়ে তারা খুবই সন্তুষ্ট।

 

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ভালো জীবনযাপন করতে পারছেন। স্থানীয় কর্মীদের জন্য প্রকল্প বিভাগ প্রতি বছর পেশাদার প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। অনেক স্থানীয় কর্মী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে প্রকল্প নির্মাণ পদ্ধতি সম্বন্ধে জেনেছেন এবং এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি সম্পর্কে সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, যা ভবিষ্যতে তাদের নতুন চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

 

জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার পাশাপাশি সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড দেশটির পাওয়ার গ্রিড পুনর্গঠন প্রকল্পেও অংশ নিয়েছে। দেশটির সাবেক খনি শিল্পমন্ত্রী বলছিলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাবনের খনি শিল্প দ্রুতগতির উন্নয়ন অর্জন করছে। চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত গ্র্যান্ড পৌবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সারা দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

 

দ্রুততার সঙ্গে ‘উদীয়মান গ্যাবন’ উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়নের জন্য গ্যাবন ‘সবুজ গ্যাবন, শিল্প গ্যাবন এবং পরিষেবা শিল্প গ্যাবন’ উন্নয়ন দিক নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত করা ‘শিল্প গ্যাবন’ বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর অন্যতম। বর্তমানে দেশটির ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করার মধ্য দিয়ে গ্যাবনের উন্নয়নের জন্য প্রাণশক্তি যোগাচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, গ্র্যান্ড পৌবার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ সরকারের জল অবকাঠামো নির্মাণ সংক্রান্ত প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ ফসল, যা স্থানীয় অর্থনৈতিক সমাজের উন্নয়নকে বেগবান করেছে। ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্যাবন ও চীনের সহযোগিতা আরও গভীর ও ফলপ্রসূ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। (প্রেমা/রহমান)